জাবির সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষকদের ধস্তাধস্তি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : দীর্ঘ ১৫ মাস পর অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০৩তম সিন্ডেকেট সভায় ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম ও উপাচার্য বিরোধী ড. শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের শিক্ষকরা।
বুধবার বিকেল ৪টার দিকে সিন্ডিকেট সভা শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে ভিতরে প্রবেশ করাকে কেন্দ্র করে সিন্ডিকেট কক্ষের প্রবেশমুখে এই ঘটনা ঘটে। পরে শরীফপন্থী ৪ জন সিন্ডিকেট সদস্য সভাকক্ষ ত্যাগ করে সিন্ডিকেট বৈঠকের প্রতি অনাস্থা জানান।
পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী বিকেল ৪টায় সিন্ডিকেট সভা শুরু হওয়ার কথা ছিলো। মেয়াদোত্তীর্ণ সিন্ডিকেট ও ডিন নির্বাচন না দিয়ে কোন নিয়োগ না দেওয়ার দাবি নিয়ে উপাচার্য বিরোধী আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ বিকেল ৪টায় উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করতে যান। এসময় উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরাও সভাকক্ষের সামনে অবস্থান নেন।
বিকেল সোয়া ৪টায় কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মোতাহার হোসেন পাটওয়ারী সভায় যোগ দেওয়ার জন্য আসলে তাকে সভায় যোগ না দিতে অনুরোধ করেন উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকরা। কিন্তুু মোতাহার হোসেন সভায় ঢুকতে গেলে তার পথরোধ করেন উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকরা। এসময় উভয় পক্ষের শিক্ষকরা ধাস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন। কয়েক মিনিট ধরে এ অস্থা চলতে থাকে।
পরে সংবাদ সম্মেলনে শরীফপন্থী শিক্ষকরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।
উপাচার্য বিরোধী ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজে’র সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, আজ যে ঘটনা ঘটেছে সেটি অনভিপ্রেত। আমরা দাবি নিয়ে উপাচার্যের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম, আমরা তো বলিনি সভা অবরোধ করব। কিন্তু উপাচার্যের শিক্ষকরা এখানে অবস্থান নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন।
সম্মেলনে সিন্ডিকেট সদস্য ড. নাজমুল হাসান তালুদার বলেন, প্রতিমাসে সিন্ডিকেট বৈঠক হওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ১ বছর ৩ মাস পর এ বৈঠক আহ্বান করে উপাচার্য তার অনুগত সিন্ডিকেট সদস্যদের দিয়ে বৈঠক শুরু করেন।
এসময় শরীফপন্থী শিক্ষক হোসনে আরা বলেন, একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ৬ মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকে। ৬ মাস পর সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অবৈধ হয়ে যায়। উপাচার্য আজকের বৈঠকে নিয়ম অমান্য করে ২০১৫ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ করে নিয়োগ দিচ্ছেন যা রীতিমতো অন্যায়।
তিনি আরও বলেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী কাউকে নিয়োগ দিতে গেলে নতুনভাবে কিছু ধাপ পূরণ করতে হয়। আজকে সেই নিয়ম অমান্য করে পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী নিযোগ দেয়া হচ্ছে যা অবৈধ।
শরীফপন্থী শিক্ষকদের দাবি, কয়েকদিন ধরে পূর্বের নিয়োগগুলো স্থায়ী করার আগে নতুনভাবে যেন কোন নিয়োগ দেয়া না হয় সেজন্য উপাচার্যের কাছে দাবি করে আসছেন তারা। সেই সাথে জাকসু নির্বাচনসহ অন্যান্য ইস্যু নিয়েও দাবি জানিয়েছেন শরীফপন্থী শিক্ষকরা। উপাচার্য এসব বিষয়ে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন কিন্তু তা আজ ভঙ্গ করছেন বলে দাবি শিক্ষকদের।
‘এর আগে সিন্ডিকেট বৈঠক শুরু হতো সকল সদস্যদের উপস্থিত থাকা সাপেক্ষে কিন্তু আজকে সদস্যরা উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও উপাচার্য তার অনুগতদের দিয়ে সিন্ডিকেট বৈঠক শুরু করেন যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন। আজকে যে প্রশাসনিক ভবনের পরিবেশ তা সিন্ডিকেট বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার মতো পরিবেশ নয়। এরকম অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার পেছনে প্রশাসন দায়ী।
একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন হিসেবে এর পূর্বে প্রশাসন আমাদের হেনস্থা করেছে যার নজির আজকে আবারো ঘটেছে। প্রশাসন সিন্ডিকেট সদস্যদের বাদ দিয়ে সিন্ডেকেট কক্ষের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে যে সভা করছেন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।’সিন্ডিকেট সভা চলাকালে বিকেল ৫টার দিকে বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা প্রশাসনিক ভবনে আসেন। এর ঘণ্টাখানেক পর এক সংবাদ সম্মলনে তারা অভিযোগ করেন, উপাচার্য আইআইটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক থাকা অবস্থায় শিক্ষক নিয়োগ সুপারিশ করবেন না বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিনি সেটি ভঙ্গ করেছেন। দেড় বছর আগে আহ্বান করা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অবৈধভাবে নতুন নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া আজকের অনাকাঙ্খিত পরিবেশের জন্য উপাচার্য দায়ী বলে মনে করেন তারা।
অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে বিভাগ উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবিতে বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।
উল্লেখ্য, এ বছরের মার্চে ফারজানা ইসলাম দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/নভেম্বর ০৭,২০১৮)