হাঁটু পানিতে ক্লাস!
তালা (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা : ‘স্কুলে আসতে পারিনে। রাস্তায় হাঁটু সমান পানি। স্কুলে আসতে হয় গামছা নিয়ে। স্কুলে এসেও পানির মধ্যে ক্লাস করতে হচ্ছে। এখন পানির উপর মাচা করে ক্লাস করছি।’
এভাবেই স্কুলে যাওয়া-আসা আর ক্লাস করার বর্ণনা দিচ্ছিল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মুক্তি মন্ডল। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ৮৫নং ভবানীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মুক্তি মন্ডল।
ভবানিপুর বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভবানি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৯৬ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। এর মধ্যে শিশু শ্রেণিতে ২১, প্রথম শ্রেণিতে ১৬, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৫, তৃতীয় শ্রেণিতে ১৫, চতুর্থ শেণিতে ১৪ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ১৫ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। প্রধান শিক্ষক ছাড়া আর কোন শিক্ষক বিদ্যালয়ে নেই। দুইজন শিক্ষক ছুটিতে আছেন এবং একটি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে শিশু শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে ভবানিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, পানির মধ্যে মাচা তৈরি করে বিদ্যালয়ের একটি রুমে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছাড়া আর কোন শিক্ষক নেই। পানির মধ্যে তিনি একাই তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাস নিচ্ছেন। বিদ্যালয়ে বেঞ্চ-টেবিল ইট দিয়ে উঁচু করা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা উত্তরণ-এর দেওয়া ঘরের মধ্যে ক্লাস করছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা। আর শিশু শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী কেয়া মন্ডল, লাবনী মন্ডল, সবুজ মন্ডলসহ অনেকে জানান, প্রায় দেড় মাস তারা পানির মধ্যে ক্লাস করছে। বাড়িতেও পানি। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ক্লাস করতে হচ্ছে তাদের। এতে তাদের পড়াশুনার খুব অসুবিধা হচ্ছে। একজন স্যার ছাড়া আর কেউ নেই। একজন স্যার সবার ক্লাস নেন। এভাবে কি পড়াশুনা করা যায়?
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ে পড়াশুনার খুব সমস্যা হচ্ছে। বর্তমানে তার সব ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে পড়াশুনারও ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে তিনি জানিয়েছেন।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন মন্ডল জানান, বিদ্যালয়ে বসার জায়গা নেই। উত্তরণ সংস্থার দেওয়া ঘরে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করছে। এছাড়া বাচ্চাদের গামছা পরে স্কুলে আসতে হচ্ছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। রয়েছে শিক্ষক সংকট। উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে জানিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না।
ইসলামকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জানান, পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পানি ওঠে গেছে। পানির মধ্যে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করছে। অনেক বিদ্যালয়ে তাও হচ্ছে না। এলাকায় শিক্ষা ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে।
তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম পানির মধ্যে ক্লাস হচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কথা বলেছেন। দ্রুত ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক দেওয়ার চলছে।
(দিরিপোর্ট২৪/ওএস/জেএম/নভেম্বর ০৯, ২০১৩)