দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : নগদের পরিবর্তে বোনাস লভ্যাংশের দিকে ঝুঁকছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত দু’শতাধিক কোম্পানি ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই বোনাস লভ্যাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।

এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে বোনাস শেয়ারকে অশনিসংকেত মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বোনাস লভ্যাংশের মাধ্যমে যে পরিমাণ নতুন শেয়ার আসছে, তা বাজারের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারণ নতুন শেয়ারের জোগান বাড়লে এর বিপরীতে চাহিদা খুব কম থাকবে। এতে শেয়ারের দর কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ যেসব কোম্পানি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে, তাদের বেশিরভাই কোম্পানির শেয়ার চাহিদা এমনিতেই কম।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, বোনাস ঘোষণার ফলে বাজারে যে পরিমাণ শেয়ারের জোগান বাড়বে, সে পরিমাণ চাহিদা থাকবে না। কারণ কোনো কোম্পানির শেয়ার যখন বেড়ে যায়, সে কোম্পানির শেয়ারদর তখন কমে। বেশিরভাগ কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের দায় সারার জন্য বোনাস শেয়ার ধরিয়ে দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ার জন্য নীতিমালা থাকা উচিত। এটা না থাকায় কোম্পানিগুলোকে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
একই প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, দুর্বল কোম্পানি থেকে লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস শেয়ার দেওয়া হলে তা ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, এ বছর যে পরিমাণ বোনাস শেয়ার যোগ হবে, তা বাজারের জন্য ভালো নাও হতে পারে। কারণ দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কেউ কিনতে চান না। যে কারণে এসব শেয়ারের দর কমতে থাকে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন শেয়ারহোল্ডাররা। বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ করব, যারা বেশি বোসান লভ্যাংশ দেয়, সেসব কোম্পানি থেকে দূরে থাকতে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বস্ত্র খাতের ফ্যামিলি টেক্স ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সে বছরই কোম্পানিটি ১০০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ প্রদান করে। পরের বছর যা নেমে আসে ১০ শতাংশে। এর পরের দুবছর ক্যাটেগরি বাঁচাতে মাত্র পাঁচ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার দেয় কোম্পানিটি। বর্তমানে এ কোম্পানির আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। একইভাবে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, জেনারেশন নেক্সট, ম্যাকসন স্পিনিং, ঢাকা ডায়িং কোম্পানিগুলো নিয়মিত বোনাস শেয়ার দিতে দিতে এখন আর্থিকভাবে করুণ অবস্থা হয়েছে।
সংশিষ্টদের মতে, বোনাস ঘোষণার ফলে কোম্পানিগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হবে, এটা বাস্তবতা। এ কারণেই দেখা যায়, যেসব কোম্পানির বোনাস শেয়ার দেওয়ার প্রবণতা বেশি, সেসব কোম্পানির অধিকাংশের আর্থিক অবস্থা ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে। তাই বিনিয়োগকারীদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বোনাস শেয়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর যখন সার্বিক পুঁজিবাজার পরিস্থিতি খুব নাজুক থাকে। দেশের পুঁজিবাজারে এখন সে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাজার পরিস্থিতি খুবই বৈরী। এ সময়ের মধ্যে পুঁজিবাজারের সূচক কমার পাশাপাশি কমছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর। দর হারিয়ে নাগালে থাকলেও তা কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। এর মূল কারণ শেয়ারের চাহিদা সৃষ্টি না হওয়া।
এ অবস্থায় কোম্পানিগুলোর বোনাস শেয়ার প্রদান বিমাতাসুলভ আচরণ। তারা নিজেদের স্বার্থ বাঁচাতে বোনাস শেয়ার ইস্যু করে বিপদে ফেলছে বিনিয়োগকারীদের। এতে শুধু বিনিয়োগকারীই ঝুঁকিতে পড়ছেন না, ঝুঁকিতে পড়ছে সার্বিক বাজারও।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/নভেম্বর ১২,২০১৮)