আল-আমীন আপেলের কবিতা
অস্তিত্ব
বরং আমি কৃষ্ণচূড়া হবো,
রোজ আনন্দ ক্ষণে-
তোমার খোপায় জড়াবো।
বরং আমি দক্ষিণা বাতাস হবো,
বসন্তদিনে তোমার ঘরে,
তোমার দীঘল চুলে দোল খাবো।
বরং আমি গোধুলির তিস্তা হবো,
নৌভ্রমণের ছলে
আমার বুকে তোমায় দেখো।
বরং আমি মনফড়িং হবো,
ভরদুপুরে ঘুমের ঘোরে
তোমার কপোল ছুঁইবো।
শত বছর, সহস্র বছর, এজন্ম, পরজন্ম
তোমাতে ছিলাম, তোমাতেই রবো।
পৃথিবী
শ্বাসের আশায় ছাড়ি নিঃশ্বাস,
আশ্বাসে ফরমালিন, বুকে তবুও বিশ্বাস!
পাহাড়ে কান্না- চোখজোড়া লাল,
আকাশভরা স্বপ্ন হবে নাকাল।
মরে যাবো পড়ে রবে
প্রাণহীন কায়া।
গাছ যেমন যায় রেখে
অস্তিত্বহীন ছায়া।
বেলা শেষে
একদিন ফাগুন শেষ হয়,
আসে রুক্ষতার চৈত্রমাস।
বোবা ব্যথাগুলি আহত পাখির
মতন ডানা ঝাপটায়।
পাথরভাঙ্গার শব্দ হার মানে
বুকের পাজরভাঙ্গার শব্দে।
নিভু নিভু প্রদীপের আলোর মত
বুকের বামপাশে পোষা
স্বপ্নের মৃত্যু হয়, অপমৃত্যু!
কুলখানি হয় এক বুক আশার,
যা ছিলো বেঁচে থাকার শেষ সম্বল।
বেলা শেষে প্রমাণ হয়..
না, সব পাখি নীড়ে ফিরে না!
সময়
সময়ের ব্যবধানে সবাই স্বার্থপর,
আজ আমি, কাল তুমি,
পরশু হয়তো সে।
তাই এ ভেবে দুঃখবিলাস
করাটা বেজায় অর্থহীন।
সময়ে কেউ হয়তো শ্রবণপাপী,
কেউ আবার দৃষ্টিপাপী।
কেউবা আবার দুটোই।
আর যারা এমনটা,
আমি তাদের দলে অগ্রজ।
তবে চেষ্টা করছি দলছুট হতে।
যদি পারি-
তবে নিবি না তোর সাথে?
সুপ্রভা..সোডিয়াম বাতির এই শহর
ছেড়ে দূরে বহু দূরে, শ্যামলছায়-
গাঁয়ের মেঠোপথে তোর হাতটা ধরে
হেঁটে যাব জীবনের বাকিটা পথ..
রাত যেথায় জেগে থাকবে
জোনাকির আলোয়।
গাংচিল
সুপ্রভা..ভাল যদি নাই বাসবে!
তবে কেনো আশাজলে
ভাসাতে ভালবাসার মরানদী?
কেনো মিথ্যে মায়ায়
জড়িয়ে বলতে-
'তুমি নদী হবে,
আর আমি গাংচিল হবো।
তৃষ্ণা পেলে-
তোমার বুকে ঠোকর দিবো।'
আজ কোথায় সেই তুমি?
সুপ্রভা..তোমার কি তৃষ্ণা পায় না?
নাকি অন্য বুকে তৃষ্ণা মেটাও?
সন্তানের চাহিদা ও হ্যালুসিনেশন
সুপ্রভা..নীলরঙা শাড়ি জড়িয়ে আসবে কি!
এক টুনটুনি ডাকা পড়ন্ত বিকেলে?
গহীন অরন্যে নয়,
বিনয় বাবুদের তালপুকুর পাড়ে।
যেখানে রোমান্টিক শব্দগুলি হাওয়ায় ভাসে,
সেখান থেকে কিছু শব্দ ধার করবো।
তারপর, তোমায় গল্প শোনাবো।
আমার গল্প, আমার সন্তানদের গল্প।
সুপ্রভা..জানো ছেলে-মেয়েগুলি মাঝে মাঝে
আমায় 'মা' এর গল্প বলতে বলে।
আমি তোমার কথা বলি।
আজকাল ওরা তোমায় দেখতে চায়।
ওদের সবাই অশিক্ষিত পথশিশু বলে,
আমার গা সয় নি সেটা।
রোজ তাই স্টেশনের চত্বরে
বিকেল হলে ওদের পড়াই।
সুপ্রভা..লোকে বলে ওরা পরিচয়হীন, ওদের পরিচয় নাই।
দুই হাত বাড়িয়ে ডেকেছি ওদের-
মিলেছে সাড়া, বুকের বামপাশে জমিটা
এখন সেটা ওদের দখলে।
স্বার্থপরতার এ যুগে এসব দেখে, লোকে পাগল বলে!
তাদের কথায় কষ্ট পাই না।
তবে সন্তানদের মায়ের চাহিদা আমায় ভাবায়।
ওদের নাকি মা চাই!
সুপ্রভা..মেয়ে-মানুষ নিয়ে আগে তো
কোনো দিন ভাবি নি,
তবে এখন কেন ভাবি?
আলসে দুপুরে তুমি আমায় ছুঁয়ে আছো!
ধ্যাত! এ নিশ্চিত হ্যালুসিনেশন।
সন্তানদের মায়ের চাহিদার প্রতিফলন।
শেষ প্রশ্ন
নিশ্চেতন করা সুবাসিত বকুলগুলি
এখন আমার জন্য ফোঁটে না।
বকুলতলার বকুলঝরা পথটায়
এখন আমার চলতে মানা।
পথটায় আজকাল তোমার আর
তার মিলে তোমাদের আনাগোনা।
হৃদয়ের রক্তে রাঙানো কৃষ্ণচূড়াগুলি
এখন আমার জন্য ফোঁটে না।
আমার মতো পাপীর হৃদয়ের রক্ত চুষে
কৃষ্ণচূড়াগুলি আজ লাল হয় না।
পথটায় আজ তোমাদের নানা রঙের
ভালাবাসা মাখা গোধূলির আড্ডাখানা।
পাষাণী..তোমাদের সুখের গল্প
আজ আর চাই না লিখতে।
পাপভরা হৃদয়ের সবটুকু রক্ত
জমিয়ে রেখেছিলাম দোয়াতে।
ইচ্ছে ছিল বড় করে লিখব গল্পটা,
কিন্তু.. না!
গল্পটা আর লেখা হলো না,
রয়ে গেলো অনেকটা বাকি।
পৃথিবীটা পর হয়ে যাবার আগে
শেষ প্রশ্ন তোমার কাছে-
সেদিনের সেই পিছু ডাক, আড়ালে আবডালে
ভাল থাকার স্বপ্নটার মিথ্যে ছিল কোথা?
জোছনা ও প্রিয়া
আঁধার গেছে টুটে,
আকাশ জুড়ে জোছনা জ্বলে!
প্রিয়ার কালো চোখ আজ ঘোলাটে,
বেহায়া মনের চোখ তবু অভিসারে।
হাসি
হাসিমুখই নাকি ভাল থাকার প্রতিচ্ছবি!
হৃদয়ের গহীনের অনার্থিক বিবরণী।
হোক না অভিনয় সবি,
সেই মিথ্যে হাসিমাখা চাহনি।
চোখ
আমার চোখের নিচে কালি,
তোর চোখভরা বালি;
চোখের জল ছোঁয় কি কভু!
চোখের নিচের কালি?
পথান্তর
মোমজোছনায় গা ভিজিয়ে লাভ কি বলো?
অভিসারকে 'না' বলি, সেটাই হবে খুব ভালো।
আমার 'আমি' আমার হয়ে আজ তবে বাঁচুক,
তোমার 'তুমি' অন্ধজনে আলো দিয়ে হাসুক।
আর্তনাদ
খোলা আকাশের নিচে
ঠিকানাবিহীন শত আর্তনাদ!
এখন অনেক রাত।
চোখের জলে বান, ছুঁইছে যেনো ছাদ।
সত্য-মিথ্যের সম্পর্ক
সেদিন রোদচশমার আড়ালে কত মিথ্যেকে লুকতে দেখেছি,
অল্পেই ফ্যাকাশে হয়ে যায় মিথ্যের শরীর;
সত্যের সাথে কতখানি মিথ্যে মেশালে খাঁটি হয়,
পুষ্ট হয় মিথ্যের শরীর, আমি তা জানি না!
কতটুকু সত্য বললে নিজেকে সত্যবাদী বলা যায়,
আমি তা জানি না!
বিদঘুটে তিথি
সুখগুলো আশা নিয়ে তোমার
বেলকুনিতে জোছনা হয়ে যায়।
অন্য বুকে তোমার ল্যাসময়ী ছোঁয়া!
তা দেখে, ওরা কষ্টে মুখ লুকায়।
মাতাল হও তুমি নোংরা সময়ের গন্ধে!
হাভাতে সময়
ক্যালেন্ডারের পাতাগুলি উল্টে যায়,
দেয়ালে ওঠে নতুন ক্যালেন্ডার।
আজকের পড়ন্ত বিকেলটা
'আগামীকাল' হয়ে যাবে গতকাল বিকেল;
সব ক্ষমতা তো সময়ের হাতে!
আপনি, আমি, আমরা সবাই
সময়ের হাতে জিম্মি;
হাজাররঙা স্মৃতিগুলিকে হাভাতে সময়
গপগপ করে গিলে খায়।
স্মৃতিগুলি তাই সাদা-কালো হয়ে যায়।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/নভেম্বর ১২,২০১৮)