পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ধর্মীয় ভাব-গম্ভীর পরিবেশে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিনটি পালন করা হয়েছে
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) বুধবার (২১ নভেম্বর)। মানবজাতির শিরোমণি মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম ও ওফাত দিন। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল মহানবী ইসলামের শেষ নবী হিসেবে আরবের মরু প্রান্তরে মা আমিনার কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করেন। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে মাত্র ৬৩ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকালও করেন।
একটা সময় গোটা আরব জাহান ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। মানুষ হয়ে পড়েছিল বেদীন।
তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা। এ যুগকে বলা হতো আইয়ামে জাহেলিয়াত। তখন মানুষ মারামারি আর হানাহানিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তি পূজা করত।
এ থেকে মানুষকে মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহতায়ালা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে এই ধরাধামে পাঠান। মহানবী অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী (সা.) বিবি খাদিজা নামে এক ধনাঢ্য মহিলার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
৪০ বছর বয়সে তিনি নবুয়তপ্রাপ্ত হন। আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভ করেন। পবিত্র কোরআন শরিফে বর্ণিত আছে, ‘মহানবীকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীকে সৃষ্টি করতেন না।’
এ কারণে এবং তৎকালীন আরব জাহানের বাস্তবতায় এই দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি।
বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পালন করে থাকে।
দিনটি উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ আমাদের সকলের জীবনকে আলোকিত করুক, আমাদের চলার পথের পাথেয় হোক, মহান আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনা করি।’
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহানবী (সা.)-এর সুমহান আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই প্রতিটি জনগোষ্ঠীর অফুরন্ত কল্যাণ, সফলতা ও শান্তি নিহিত রয়েছে। আজকের দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় বিশ্বে প্রিয়নবী (সা.)-এর অনুপম শিক্ষার অনুসরণের মাধ্যমেই বিশ্বের শান্তি, ন্যায় এবং কল্যাণ নিশ্চিত হতে পারে।’
কর্মসূচি : দিনটি উপলক্ষে সরকারি, আধাসরকারি ভবন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সব স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। জাতীয় পতাকা ও ‘কালিমা তায়্যিবা’ লিখিত ব্যানার ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে প্রদর্শিত হবে।
রাতে সরকারি ভবন ও সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোয় আলোকসজ্জা করা হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
দেশের সব বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও বেসরকারি সংস্থাগুলোয় আলোচনা সভা ও মাহফিলসহ বিশেষ কর্মসূচি পালন করা হবে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। শিশু একাডেমি শিশুদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
এছাড়া দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধনিবাস ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নত মানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোয় যথাযথভাবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করা হবে। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মঙ্গলবার থেকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর সাহানে ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, মহানবী (সা.)-এর জীবনীভিত্তিক পোস্টার ও গ্রন্থ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা দেড়টা থেকে রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত প্রদর্শনী দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে।
আশেকানে মাইজভাণ্ডারি অ্যাসোসিয়েশন আজ সকাল ৯টায় রাজধানীর শাহজাহানপুর ঐতিহাসিক রেলওয়ে ময়দানে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান জশনে জুলুছ-২০১৮ এর আয়োজন করেছে। এছাড়া পবিত্র পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ঐতিহাসিক আজিমপুর দায়রা শরিফে খানকা থেকে ১২ দিনব্যাপী মাহফিলের আয়োজন করেছিল।
৯ থেকে ২০ নভেম্বর প্রতিদিন বাদ মাগরিব থেকে এশার নামাজ পর্যন্ত গত ২৬০ বছরের মতো দরবার শরিফে ‘দরূদ সালাম’ ফাতেহাখানি ও মিলাদ শরিফের মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/নভেম্বর ২১, ২০১৮)