আবাহনীর হ্যাটট্রিক শিরোপা
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ফেডারেশন কাপে আবাহনীর জন্যে ম্যাচটা ছিলো ইতিহাস গড়ার। হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতে সেই ইতিহাস গড়া হয়ে গেছে জায়ান্টদের। পিছিয়ে পড়েও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ফাইনালে তারা ৩-১ গোলে হারিয়েছে নবাগত বসুন্ধরা কিংসকে।
আবাহনীর ঐতিহাসিক জয়ে দারুণ ভূমিকা রেখেছেন নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবা। জোড়া গোল করেছেন। বাকি গোল এসেছে হাইতির ফরোয়ার্ড কেরভেন্স বেলফোর্টের হেড থেকে।
ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আবাহনীর অর্জনের হিসেব-নিকেশ হয়েছে সমৃদ্ধ। তারা আগামী বছরের এএফসি কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নিলো এই জয়ের মধ্য দিয়ে। এছাড়া এই আসরে জিতে রেকর্ড ১১ বার ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে টপকে গেলো আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানকে। আর সানডে সর্বোচ্চ ৬ গোল করে বনে গেলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা।
আকাশি-নীল জার্সিধারীরা এবারের ৩০ তম আসর জিতে শিরোপা ঘরে তুললো ১১তম বার। এবারের মতো তারা হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতে ১৯৯৭, ১৯৯৯ ও ২০০০ সালেও। যা ছিলো তাদের প্রথম হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতার কীর্তি। মোহামেডান জিতেছে ১০বার।
শুক্রবার হাজারো সমর্থকদের সামনে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে ছিলো বসুন্ধরা কিংসের আধিপত্য। ৪ মিনিটে ইমন বাবুর বাড়ানো বলে বক্সের ভিতর থেকে বসুন্ধরার প্রাণভোমরা দানিয়েল কোলিনদ্রেস শট নিলেও তা আটকে দেন আবাহনী ডিফেন্ডার ওয়ালী ফয়সাল। ১৬ মিনিটে ব্যথা পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যান ডিফেন্ডার তপু। তার জায়গায় নামেন আরেক ডিফেন্ডার টুটুল হোসেন বাদশা। এই আক্রমণের সুবাদেই ২১ মিনিটে এগিয়ে যায় নবাগত বসুন্ধরা কিংস। প্রথমবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলবার সম্ভাবনাও উঁকি দিতে থাকে তখন। মিডফিল্ডার আলমগীর রানা লব করলে তা ফিস্ট করেন গোলকিপার শহীদুল আলম সোহেল। তখন বক্সের মধ্যেই বল পেয়ে যান কোলিন্দ্রেস। একটু সময় নিয়ে বাঁ পায়ের গড়ানো শটে লক্ষ্যভেদ করে এগিয়ে দেন বসুন্ধরাকে।
এক গোলে পিছিয়ে থেকে আবাহনী গোল শোধে একের পর এক প্রতি আক্রমণ গড়তে থাকে। কিন্তু সফল হতে পারেনি এই অর্ধে। ২৬ মিনিটে তেমনই এক প্রতি আক্রমণে ওয়ালী ফয়সালের ফ্রি কিক থেকে হাইতির ফরোয়ার্ড কেরভেন্স বেলফোর্টের জোরালো হেড রক্ষা করেন গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকো। ৩৬ মিনিটে বেলফোর্ট থেকে সানডে বক্সের ভিতরে বল পেয়েও ঠিকমতো শট নিতে পারেননি।
প্রথমার্ধ আবাহনীর জন্যে ব্যর্থতার গল্প লিখলেও দ্বিতীয়ার্ধে লেখে তাদের সফলতা। বিরতির পরই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় আবাহনী। ৫০ মিনিটে অবশেষে সমতায় ফেরে তারা। রায়হানের লম্বা থ্রো-ইন থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে ছোট ডি বক্সের ভেতরে টোকায় গোলকিপার জিকোকে পরাস্ত করেন সানডে। ৭৮ মিনিটে ব্যবধান বাড়ায় আবাহনী। একাধিক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে আক্রমণে ওঠা সোহেলের বক্সের একটু ওপর থেকে বাড়ানো বলে ডান পায়ের প্লেসিং শটে জালে জড়িয়ে দেন সানডে। এ গোলেই ফেডারেশন কাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে যান নাইজেরিয়ার ফরোয়ার্ড। দুই মিনিট পর ওয়ালীর কর্নারে বেলফোর্ট হেডে কাছের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নিলে আবাহনীর জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়।
আবাহনী যখন জয়ের প্রহর গুণছিলো তখনই ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। নাসিরউদ্দীন কনুই দিয়ে আঘাত করেন সানডেকে। এ নিয়ে মাঠে উত্তেজনা দেখা দেয়। ব্যথা পেয়ে সানডে মাঠ ছাড়লেও উত্তেজনা ছড়ায় এর পর। দুই পক্ষই ছিলো মারমুখী। যার শুরুটা হয় বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে। আবাহনীর জীবনের সঙ্গে বসুন্ধরা কিংসের সুশান্ত ত্রিপুরা মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন এ ঘটনায়। সুশান্ত তাকে লাথি মারলে পরিস্থিতি আরও বেগতিক হয়ে দাঁড়ায়। একপর্যায়ে আবাহনীর ডিফেন্ডার মামুন মিয়া দৌড়ে এসে পিছন থেকে আঘাত করেন সুশান্তকে। এরপর মামুনকে তখন তাড়িয়ে আঘাত করেন বসুন্ধরার খেলোয়াড় সবুজ। তখন তাদের নিবৃত্ত করতে কোচদেরকেও মাঠে প্রবেশ করতে দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত রেফারি মাঠে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে লাল কার্ড দেখেন সম্পৃক্ত এই চারজন। এরা হলেন-নাবীব নেওয়াজ জীবন, মামুন মিয়া, তৌহিদুল আলম সবুজ ও সুশান্ত ত্রিপুরা। প্রথম দুইজন আবাহনীর আর বাকি দুইজন বসুন্ধরার।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/নভেম্বর ২৩,২০১৮)