ঋণের অর্থ ব্যবহারে ব্যাংকগুলোকে মনিটরিংয়ে গভর্ণরের আহ্বান
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ঋণ বিতরনের পর সেই অর্থ যথাযথ ব্যবহার করা হয় কি না তা মনিটরিং করতে ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবির।
শনিবার মেধাবীদের জন্য আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের শিক্ষা বৃত্তি ও সার্টিফিকেট বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করছে। আর ঋণের অর্থ প্রকল্পে ব্যবহার না করে অন্য খাতে ব্যয় করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যা ধীরে ধীরে খেলাপিঋণে পরিনত হয়। তাই ঋণ বিতরণ করে বসে থাকলে চলবে না। ঋণ যে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নেওয়া হচ্ছে সেটা যথাযথ ভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে কিনা তা ব্যাংকগুলোকে খেয়াল রাখতে হবে। একই সঙ্গে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে ব্যংকগুলোকে। এতে ঋণের অর্থ যথাযথ ব্যবহার হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। যা বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমা ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি ১১ লাখ টাকা।
গভর্ণর বলেন, যেখানে দেশে অবস্থিত বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকের নন পারফর্মিং লোন ৭ শতাংশের উপরে সেখানে আল আরাফাহর ৫ শতাংশ। এই দিক দিয়ে ব্যাংকটি প্রশংসনীয়। এছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কৃষি ঋণ দিয়েও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ব্যাংকটি। যা একটি সময়োপযোগি উদ্যোগ।
তবে ব্যাংকটির ঋণ আমানত অনুপাত নিয়ে গভর্ণর অসন্তোষ প্রকাশ বলেন, ব্যাংকটির ঋণ আমানত অনুপাত ১৪ শতাংশের উপরে। আর আমানত ১৩ শতাংশ। ঋণ আমানত রেশিও অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর যত দ্রুত সম্ভব তা নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসবেন।
তারল্যের বিষয়টি উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ তারল্য রয়েছে। এটা বর্তমানে স্বাচ্ছন্দ্য অবস্থায় আছে বলে জানান তিনি।
সিএসআর সম্পর্কে গভর্ণর বলেন, দেশের এখাতটি প্রশংসার দাবি রাখে। ২০০৯ সালে করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে (সিএসআর) ব্যাংকগুলো খরচ করেছিল মাত্র ৫৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের জুন শেষে সিএসআর খাতে ব্যাংকগুলো খরচ করেছে ১ হাজার ৪৯ কোটি টাকা, যা প্রশংসার যোগ্য।
ফজলে কবির বলেন, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক যেসব মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়েছে তাদের বক্তব্যের মধ্যে এক ধরনের দীপ্ত প্রত্যয় লক্ষ্য করা গেছে। দেশের উন্নয়নের জন্য আমাদের প্রথম দরকার মানব সম্পদ উন্নয়ন। শিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে আশা করছি মানব সম্পদ উন্নয়নে বড় ধরনের অংশগ্রহন থাকবে।
তিনি বলেন, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে যে পরিমাণ অর্থ মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করছে তা ভালো। কিন্তু মেধাবীদের মধ্যে থেকেও সেরা মেধাবীদের জন্য বিশেষ করে যারা মেধার দিক দিয়ে এগিয়ে আছে তাদের জন্য অর্থের পরিমাণ বাড়ানোর তাগিদ দেন। তবে সেক্ষেত্রে যাতে কোনো বৈষম্য না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলেন তিনি।
মেধাবী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ফজলে কবির বলেন, তোমাদের মনে রাখতে হবে তোমারা মেধার জোড়ে বৃত্তি পেয়েছ,কারও দয়ায় নয়।এ বৃত্তি পেতে তোমাদের প্রতিযোগিতার অংশগ্রহন করতে হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংক তোমাদের মেধার স্বীকৃতি দিয়ে ধন্য হয়েছে। তোমরা সুনাগরিক হবে, যেখানে থাক তোমরা দেশের ও মানব সেবায় অবদান রাখবে।
আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ লাবু বলেন, ব্যাংকটি প্রথম থেকে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত। এর রয়েছে একটি শক্তিশালী ইসলামী শরিয়াহ কমিটি। এ কমিটি বছর শেষে কোনো ডাউটফুল বা সন্দেহজনক আয় পেলে তা হিসাব থেকে বাদ দেয়।
তিনি বলেন, প্রতি বছর ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা সন্দেহজনক আয় হিসেবে বাদ দেয় ইসলামী শরিয়াহ কমিটি। এরপর আমাদের ব্যাংকের আয় প্রকাশ করা হয়।
তিনি বলেন, শতভাগ শরিয়াহ সম্পন্ন ব্যাংকটি কখনও আপোষ করেনি ভবিষ্যতেও আপোষ করবে না।
বর্তমানে আমানতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংকটি আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, আমরা যখন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করি তখন তা শুধুমাত্র বাণিজ্যের জন্য নয় মানবিক সহযোহিতার মনোভাব নিয়ে মানুষের পাশি দাঁড়ানোই ছিল মূখ্য উদ্দেশ্য।
শিক্ষা বৃত্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বছর থেকে নিয়মিতভাবে চালু হয়েছে শিক্ষা বৃত্তি। প্রতি বছর পর্যায়ক্রমে ৮০০ জনকে এ বৃত্তি প্রদান করা হবে। শিক্ষা বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীদের যাতে স্নাতক পর্যায়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে কোনো অসুবিধা না হয় তা সব সময় খেয়াল রাখবে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক।
শিক্ষা প্রসারের বর্তমান সরকারের কার্যক্রম উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবার জন্য শিক্ষা এ লক্ষ্য নিয়েই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নির্ধারিত টার্গেট সফলভাবে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র দূরীকরনের পথে শিক্ষার উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষা বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে আমরাও সরকারের উন্নয়নের সঙ্গে অংশীদার হলাম। যা সব সময় অব্যাহত থাকবে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরমান আর চৌধুরী বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এ বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। একই সঙ্গে তারা নিজেদেরকে দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় নিয়োজিত করবে।
আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক প্রতি বছর ৮০০ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করবে। তবে এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২০০ শিক্ষার্থীকে এ বৃত্তি প্রদান করছে ব্যাংকটি।
অনুষ্ঠানে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/নভেম্বর ২৪, ২০১৮)