দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। আজ-কালের মধ্যে এ খসড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হতে পারে। ওই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন তারেক রহমান।

খসড়া তালিকায় যাদের নাম থাকবে তাদের দলীয় মনোনয়ন ফরম দেয়া হবে। আজ-কালের মধ্যে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এ ফরম ছাড়ার সম্ভাবনা আছে।

তবে প্রতিটি আসনে বিকল্প রেখেই এ তালিকা তৈরি হচ্ছে। চার দিনের সাক্ষাৎ শেষে পার্লামেন্টারি বোর্ড টানা তিন দিন বৈঠক করে এ খসড়া তালিকা তৈরি করে।

সূত্র জানায়, ২০ দলীয় জোটের শরিক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জন্য যেসব আসনে ছাড় দেয়া হবে, সে তালিকাও তৈরি করেছে বিএনপি। ২০ দলীয় জোটের শরিক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৬০টি আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে।

জোট ও ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনায় বসবে বিএনপি। আজ-কালের মধ্যেই এ বৈঠক হবে। জোট ও ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কিছু আসনে এখনও সমঝোতা হয়নি। আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এগুলো চূড়ান্ত করা হবে।

এরপর দল, জোট ও ফ্রন্টের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। তবে কৌশলগত কারণে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থী ঘোষণার পর তারা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে জানান, তৃণমূলের মতামত এবং সবকিছু বিবেচনা করে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে। অতীতে দলের প্রতি তার কতটা অবদান আছে সে বিষয়টিও প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। প্রার্থী চূড়ান্তের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ বিবেচনায় আনা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, শরিক ও ফ্রন্টের সঙ্গে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হয়নি। শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে।

প্রার্থী চূড়ান্তে বড় ধরনের সমস্যা হবে না। যাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে এবং নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবে তাদেরকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারিত হলেও মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৮ নভেম্বর।

বাছাই ২ ডিসেম্বর এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় আগামী ৯ ডিসেম্বর। প্রার্থীর নাম ঘোষণার ক্ষেত্রে বিএনপি প্রায় শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। ঝুঁকি এড়াতে আপাতত একাধিক বিকল্প প্রার্থীর মনোনয়নপত্র কমিশনে জমা দিলেও চূড়ান্তভাবে একজনকে রেখে বাকিদের প্রত্যাহার করতে বলা হবে।

প্রার্থীদের কাছ থেকে আগেই এ ব্যাপারে হলফনামা বা অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করিয়ে রাখা হবে। যাতে বিএনপি চিঠি দিলেও একটি বাদে অন্য প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার হয়ে যায়।

সূত্র জানায়, সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার শেষে খসড়া তালিকা তৈরিতে টানা তিনদিন বৈঠক করে পার্লামেন্টারি বোর্ড।

শনিবার (২৪ নভেম্বর) মধ্যরাত পর্যন্ত তারা এ বৈঠক করেন। এ তালিকায় প্রতিটি আসনে দুই বা তিনজন করে সম্ভাব্য প্রার্থী রাখা হয়েছে। তবে প্রায় অর্ধশত আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে।

কোনো কারণে তাদের প্রার্থিতা বাতিল হলে ওই আসনটি যাতে শূন্য না থাকে সে জন্য বিকল্প হিসেবে একজন করে ডামি প্রার্থী রাখা হয়েছে।

যেসব আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে তার মধ্যে আছেন- ঠাকুরগাঁও-১ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কুমিল্লা-২ ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নোয়াখালী-৫ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ঢাকা-৩ গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা-৮ মির্জা আব্বাস, নাটোর-২ রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সিরাজগঞ্জ-২ ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভোলা-৩ মেজর (অব.) এম হাফিজউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা-২ আমান উল্লাহ আমান, নোয়াখালী-৩ বরকতউল্লাহ বুলু, নোয়াখালী-৪ মো. শাহজাহান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী লক্ষ্মীপুর-৩, কক্সবাজার-১ সালাহউদ্দিন আহমেদ, নরসিংদী-২ ড. আবদুল মঈন খান, নরসিংদী-১ খায়রুল কবির খোকন, চট্টগ্রাম-১০ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।

সূত্র জানায়, প্রায় প্রতিটি আসনে চূড়ান্ত প্রার্থীর পাশাপাশি বিকল্প প্রার্থী রাখা হবে। কোনো কারণে প্রথম পছন্দের প্রার্থিতা বাতিল হলে দ্বিতীয়জনকে দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হবে। দলের পাশাপাশি জোট বা ঐক্যফ্রন্টের আসনেও বিকল্প প্রার্থী রাখার চিন্তাভাবনা চলছে।

সূত্র জানায়, এবার মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। প্রার্থী চূড়ান্তে এলাকায় গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয়তার পাশাপাশি নিজস্ব অবস্থানের বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, গত বছর ১৬ জুলাই লন্ডন যান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেই সময় তিনশ’ আসনের সম্ভাব্য একটি তালিকা তারেক রহমানের কাছে দেন। এবার পার্লামেন্টারি বোর্ড যে সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করেছে সেটাও তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হবে। দুই তালিকা সমন্বয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত করবেন তিনি।

সূত্র জানায়, ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা চলছে। শরিকদের কোন কোন আসন ছাড় দেয়া হতে পারে তার একটি সম্ভাব্য তালিকাও প্রস্তুত করেছে বিএনপি। শেষ মুহূর্তে শরিকরা আসন নিয়ে দরকষাকষি করতে পারে। সেই বিষয়টিও মাথায় রাখছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।

২০ দলীয় জোটের মধ্যে জামায়াত এবং এলডিপি অগ্রাধিকার পাবে। তবে জামায়াতের সঙ্গে আসন বণ্টন খুব সহজ হবে না। দলটি এবার কমপক্ষে ৪০টি আসন চাইছে, যা সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রাপ্ত আসনের চেয়ে পাঁচটি বেশি।

নানা কারণে, এবার তাদের আগের অবস্থান নেই। তাই প্রার্থী সংখ্যা আগের চেয়ে কমই ছাড় দেয়া হবে। বিএনপি এবার সর্বোচ্চ ২০ আসনে জামায়াতকে ছাড় দিতে চায়। শেষ পর্যন্ত জামায়াত এতে রাজি না হলে আরও ২টি আসন ছাড়া হতে পারে।

সূত্র জানায়, শুরুতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয় জামায়াত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ধানের শীষের হয়ে লড়বে। আজ-কালের মধ্যে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এসব আসনেও বিএনপির বিকল্প প্রার্থী রাখা হবে।

সূত্র জানায়, বিএনপির খসড়া তালিকায় এলডিপির কয়েকজনের নামও রয়েছে। এদের মধ্যে এলডিপির কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (চট্টগ্রাম-১৪), ড. রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১), আবদুল করিম আব্বাসীর নাম (নেত্রকোনা-২) রয়েছে।

আরও ২-৩টি আসন এলডিপির পক্ষ থেকে চাওয়া হতে পারে। এ নিয়ে আজ তাদের মধ্যে আলোচনা হবে। ভোলা-১ আসনের জন্য বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থকে ছাড় দেবে বিএনপি।

এ ছাড়া ২০ দলীয় জোটের অন্য শরিকদেরও একটি বা দুটি করে আসন দেওয়ার কথা আলোচনা হয়েছে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডে।

এর মধ্যে কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের জন্য চট্টগ্রাম-৫, জাগপার শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে তাসমিয়া প্রধান পঞ্চগড়-২, মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের রিটা রহমান নীলফামারী-১, জমিয়তে ওলামায়ের মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসের জন্য যশোর-৫, যশোর-৪-এর বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মণ্ডল, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের হবিগঞ্জ-৪, এনপিপির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নড়াইল-২ আসনের জন্য খসড়া তালিকায় স্থান পেয়েছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে শরিকদের আসনে বিকল্প হিসেবে বিএনপির প্রার্থীও রাখা হবে। চূড়ান্তভাবে একজনকে রেখে বাকিদের প্রত্যাহার করতে বলা হবে।

ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন নির্বাচন করতে রাজি নন। দল ও জোট শরিকদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচন করতে চাইলে ঢাকা-১০ অথবা ফেনীর একটি আসনে নির্বাচন করতে পারেন। তবে ড. কামাল হোসেনের মেয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেনকে ঢাকা-১২ খসড়া তালিকায় রাখা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/নভেম্বর ২৫, ২০১৮)