বান্দরবানের পাহাড়ের ঢালুতে বাড়ছে তরমুজ চাষ
আলাউদ্দিন শাহরিয়ার, বান্দরবান প্রতিনিধি : বান্দরবানের পাহাড়ের ঢালুতে বাড়ছে তরমুজ চাষ। তবে অসময়ের বৃষ্টিতে আলীকদম, লামা উপজেলাসহ জেলা সদরের ভাগ্যকূল, কাইচতলীতে তরমুজ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ভালো ফলনের পরও নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় তরমুজচাষিরা। ফলে লাভের পরিবর্তে লোকসান গুনছেন তরমুজচাষিরা।
আলীকদম উপজেলার জানানিপাড়ার তরমুজচাষি নূরুল ইসলাম বলেন, ‘মাতামুহুরী নদীর চরে প্রায় দুই একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। তাতে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা কিনতে না চাওয়ায় বাধ্য হয়ে ৭০ হাজার টাকায় তরমুজ ক্ষেত বিক্রি করে দিয়েছি। অসময়ের বৃষ্টিতে লাভের পরিবর্তে উল্টো ১০ হাজার টাকা লোকসান গুনেছি। অথচ গত বছরও প্রায় দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি।’
লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের তরমুজচাষি থোয়াই চিং ও মিনু মারমা বলেন, ‘প্রায় পাঁচ একর জমিতে পাহাড়ের ঢালুতে তরমুজ চাষ করেছি। ফলনও খুব ভালো হয়েছে। তবে অসময়ের বৃষ্টিতে গাছের গোড়া সবগুলো মরে যাওয়ায় তরমুজ বেড়ে উঠতে পারেনি। ক্ষেতের তরমুজগুলোর অধিকাংশই লাল হয়নি, ভেতরের অংশ সাদা রঙের রয়ে গেছে, যে কারণে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় চাষিরা।’
কৃষি বিভাগ জানায়, আলীকদম, লামা ও সদর উপজেলাসহ জেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড তরমুজ চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার মাতামুহুরী নদীর চরেও তামাকের পরিবর্তে হাইব্রিড তরমুজ চাষ হয়েছে। জেলায় টপইল্ড এবং গ্লোরি দুই জাতের তরমুজ চাষ ব্যাপকহারে বেড়েছে। স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন স্থানীয় চাষিরা।
বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। পাহাড়ের আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় ঢালু জমিতে হাইব্রিড জাতের তরমুজ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ আলতাফ হোসেন জানান, স্বল্প খরচে লাভজনক হওয়ায় হাইব্রিড তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় চাষিরা। মাতামুহুরী নদীর চরেও তামাক চাষের পরিবর্তে ব্যাপকহারে তরমুজ চাষ হচ্ছে। কিন্তু আগাম বৃষ্টির কারণে এ বছর তরমুজচাষিরা সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে লাভ কম হলেও লোকসান গুনতে হবে না চাষিদের। আগামীতে তরমুজ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বান্দরবান জেলায়। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পাহাড়ের ঢালুতে চাষ করা বান্দরবানের তরমুজ বিদেশে রফতানি করাও সম্ভব হবে।
(দ্য রিপোর্ট/এএস/এপি/এজেড/মার্চ ০৭, ২০১৪)