রোকেয়া আশা 

সিংগেল বেড, কাঠের চৌকি। আধময়লা চেককাটা সবুজ চাদরটা কোঁচকানো, এলোমেলো। ঘরটা দোতলায় হওয়া সত্ত্বেও আলো কম। নাকি পুরো শরীর জুড়ে অবসাদ বলেই আলো কম লাগছে? ও হ্যাঁ, দরজা আর মোটা শিকের দুটো জানালাই বন্ধ। তাই হয়তো আলোটা কম লাগছে, বাইরে রোদ আছে তো?

বুকের কাছে এলিয়ে থাকা নওমিকে দুহাতে সরিয়ে উজান ধীরে নামে, আধঘন্টা আগে দুজনই প্রবল উত্তেজনায় কার পোশাক কোথায় ছুড়ে ফেলেছে হিসেব রাখেনি দুজনের কেউই। ট্রাউজারটা উজান চেয়ারের এক কোণায় ঝুলে থাকা অবস্থায় খুঁজে পেলো, স্লিভলেস স্পোর্টস টিশার্ট টা চেয়ারের নিচে। মেঝেতে এখানে ওখানে নওমির পোশাক ছড়িয়ে আছে। কালো পালাজ্জো, অফ হোয়াইট সুতোর কাজ করা জামা, কালো ওড়না। অন্তর্বাসটা চৌকিতেই পড়ে আছে।


নওমি উজানের প্রেমিকা নয়, তিরিশ পেরোনো কবি উজানের সাথে উনিশ বছরের নওমির প্রেম মানায় না। উজানের অন্তত তাই ধারণা।

তর্ক মনে পড়ে উজানের; প্রতিবার দেখায় নওমির ভেতরকার তীব্র অতৃপ্তি, যেটা নওমি পারেনা চেপে রাখতে। বেশী সেন্টিমেন্টাল, ঠিক যেটা উজানের দরকার ছিলো। নারীর অদ্ভুত আবেগের তীব্রতা।


জামাকাপড় পরে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো উজান, বাইরে রোদ। শরৎ এখন, ভুলেই গিয়েছিলো। নওমি ভেতরে কি করছে, ভাবার আগ্রহ পেলোনা, আদৌ কখনো ভেবেছে উজান? আনমনে মাথা নাড়লো। গোল্ডলিফের প্যাকেট আর লাইটারটা ট্রাউজারের পকেটেই ছিলো। সিগারেটে টান দিতে দিতে বাইরে তাকায়, কাঠগোলাপ গাছটায় ফুল ধরেছে প্রচুর, তীব্র রোদে গাছটাকে অদ্ভুত লাগছে। সুন্দর?

সুন্দর কি? আনন্দ? নাকি বিষাদ?

দোতলা বাড়িটা জুড়ে ভ্যাপসা একটা গন্ধ, শ্যাওলা জমা বোধহয় এখানে ওখানে। ভাড়া বাড়ি, ছোট একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে উজান। অথচ এখানে, এই শ্যাওলা জমা মাদক গন্ধটা ওর কাছে লাগে আজন্ম শৈশব অনুভূতির মত। যদিও, এবাড়িতে সে আছে গত ছয়মাস ধরে, সময়টা আদৌ লম্বা নয় কোনমতেই।

নওমি কখন বের হয়েছে, উজান সেটা খেয়ালই করেনি। কাঁধে হাতের স্পর্শটা পেতেই বুঝলো, নওমি।

" চলে যাও এখন। " পেছনে না তাকিয়েই বললো উজান। নওমির কি গলাটা কেঁপে উঠলো কিছু বলতে চেয়ে? এভাবে ঝট করে হাত সরিয়ে নিলো যে?

নওমি উজানের প্রেমিকা নয়, তিরিশ পেরোনো কবি উজানের সাথে উনিশ বছরের নওমির প্রেম মানায় না। উজানের অন্তত তাই ধারণা।

তর্ক মনে পড়ে উজানের; প্রতিবার দেখায় নওমির ভেতরকার তীব্র অতৃপ্তি, যেটা নওমি পারেনা চেপে রাখতে। বেশী সেন্টিমেন্টাল, ঠিক যেটা উজানের দরকার ছিলো। নারীর অদ্ভুত আবেগের তীব্রতা।

ফেসবুকে পরিচয় থেকে সম্পর্কে জড়ানোর মধ্যে পুরোটুকুই নওমির জন্য; মাথা নাড়ে উজান। সে নিজেও কি কোথাও দায়ী কিংবা দায়বদ্ধ? কোথাও একটা?

না! উজান তো কখনোই নওমিকে কথা দেয়নি কোন। না, নওমি কিছুতেই উজানের প্রেমিকা নয়।

নওমি কে তাহলে?


কৈশোর শেষে খালাতো বোন রুমির ঠোঁট ; সেও এই গোল্ডলিফের মত ছিলো নাকি? কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সহপাঠিনী নীতু? নীতুকে মনে পড়ে কখনো কখনো, শ্যামা মেয়েটার অনাবৃত শরীরের মত নিখুঁত কিছুই উজান আর দেখেনি; অথচ কিছু বেকুব চামড়ার রঙ খোঁজে। তবে নওমির ঘ্রাণের আবেদনটাই আলাদা।


নারী? প্রণয়িনী নয় কখনো। রক্ত-মাংসের নারী নওমি। যার ঘাম এবং গায়ে মাখা পারফিউমের বাইরেও একান্ত একটা গন্ধ আছে, নারীর গন্ধ। বিছানায় তীব্র রতির গন্ধ - উজানের এই গন্ধটা দরকার, ভীষণভাবে দরকার। নওমির সেন্টিমেন্টের মতই,এই তীব্র মাংসের বাইরেও রতির ভীষণ নারীত্বের ঘ্রাণটা উজানের বড্ড দরকার। কবিতায় প্রতিটা শব্দের সৃষ্টির জন্য, কলম হাতে ক্রমাগত নিত্যনতুন কবিতার চাষ করার জন্যই নওমি।

খেয়াল কেন এত? উজান তো চিরকাল লিখতেই চেয়েছিলো; রক্তমাংসের নওমিকে ওর দরকার কামের চেয়েও অন্য প্রয়োজনে। কবিতা চাষ - নারীদেহ চাষ ; গুলিয়ে যায় কেন বারবার তারপরও? নারী নিজেই কবিতা, নাকি কবিতাই নারী? হাতের জ্বলন্ত সিগারেট কাঠগোলাপ গাছটাকে সই করে ছুড়ে মারে উজান।

কৈশোর শেষে খালাতো বোন রুমির ঠোঁট ; সেও এই গোল্ডলিফের মত ছিলো নাকি? কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সহপাঠিনী নীতু? নীতুকে মনে পড়ে কখনো কখনো, শ্যামা মেয়েটার অনাবৃত শরীরের মত নিখুঁত কিছুই উজান আর দেখেনি; অথচ কিছু বেকুব চামড়ার রঙ খোঁজে। তবে নওমির ঘ্রাণের আবেদনটাই আলাদা।

নারী!

পেছন ফিরে তাকায়, নওমি নেই।

নওমি চলে গেছে? কখন গেলো?

অদ্ভুত! উজান তো নওমিকে ভাবে না, না না! উজানের নওমিকে খোঁজার কথা নয়।

নওমি কি কেঁদেছিলো? উজানের প্রতিবারের নির্লিপ্ত সঙ্গমে- নওমি কি ভেতরে ক্ষতবিক্ষত হয়?

আশ্চর্য তো! উজান ভেবে পায়না সে সিঁড়ি ভেঙে নিচে কেন নামছে। নওমিকে খুঁজতে? নাকি কাঠগোলাপ গাছটার কাছে যেতে?

হিংসে হচ্ছে উজানের; উফফ্! গাছটাও সুখী, গাছটা এত সুখী - আচ্ছা, গাছটার রতি অনুভূতি হয়না কখনো?

ভেতরে পুড়ছে কোথাও, উজান নিজেই।

ছুটে কাঠগোলাপ গাছটার সামনে গিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে পোশাক খুলতে শুরু করে সে, আজ সে নিবিড় সঙ্গমে গাছটাকে ঠিক রক্তাক্ত করবে।

ভরদুপুরে এখানে দ্বিতীয় কোন পুরুষের ছায়া নেই।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/নভেম্বর ২৭,২০১৮)