কৃত্রিম স্তন প্রতিস্থাপনে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট অর্থাৎ স্তনের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য সিলিকন ব্যবহার করে তাকে সুগঠিত ও আকর্ষণীয় করার যে পদ্ধতি তার স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্রিটেনের একদল গবেষক।
এক অনুসন্ধান কার্যক্রমের পর এই উদ্বেগের চিত্র উঠে আসে সিলিকন ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট বিষয়ে যেটি সেখানে সবচেয়ে সাধারণ ধরনের ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট পদ্ধতি। খবর- বিবিসির।
সাধারণত দুই ধরনের স্তন ইমপ্ল্যান্ট করা হয়ে থাকে- স্মুথ ইমপ্ল্যান্ট এবং টেক্সচার্ড ইমপ্ল্যান্ট ।
ফ্রান্সে নারীদেরও এখন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে "টেক্সচার্ড" সিলিকন ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার না করতে। কারণ কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখেছে- এর সাথে বিরল এক ধরনের ক্যান্সার হওয়ার যোগসূত্র রয়েছে।
ব্রিটিশ নারীরা এখনো এই ধরনের ইমপ্ল্যান্ট করে স্তনকে নিটোল বা আকর্ষণীয় করে তুলছেন। এবং দেশটিতে এটি বন্ধের জন্য যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষের কোনও সতর্কতামূলক নির্দেশনা নাই।
ওষুধ এবং স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত পণ্য নিয়ন্ত্রণকর্তৃপক্ষ (এমএইচআরএ) -এর মুখপাত্র বলেন, আমরা জানি সিলিকন ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট নিয়ে একধরনের উদ্বেগ রয়েছে-আমরা এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজর রাখছি।
এই পণ্যের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহারের নিরাপত্তা বিষয়ে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়, এবং আমেরিকা ও ইউরোপে এক দশকের বেশি সময় ধরে তা ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিবিসির প্যানোরমা অনুষ্ঠান ইমপ্ল্যান্ট নিয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাচ্ছে, সাথে আছে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম এবং দি গার্ডিয়ান পত্রিকা, ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা।
হীনমন্যতা
জ্যানেট ট্রিলাওনির স্তন ক্যান্সার গত ২০ বছর ধরে। তার স্তন কেটে ফেলা দেয়া হয়েছিল । এরপর টেক্সচার্ড। ইমপ্ল্যান্ট দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল তার স্তন। এখন তার ডায়াগনোসিস চলছে।
তার ব্রেস্ট ক্যান্সার নয় কিন্তু ইমিউন সিস্টেমে একধরনের ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি স্কার টিস্যুতে এবং ইমপ্ল্যান্টের কাছে তরলের মধ্যে পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে তা পুরো শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে।
এই নারী বলেন: "এটা ভাবা আতঙ্কজনক ছিল যে আমি নিশ্চয়ই কিছু করেছি, যার কারণে এর আগে আমার ক্যান্সার হয়েছিল এরপর আবার নতুন করে ক্যান্সারে দেখা দিল।
"আমি পুরোপুরি হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি আতঙ্কিত হয়ে গিয়েছিলাম এবং কোনও ধারনাই ছিলনা যে এমনটা ঘটতে পারে।"
জ্যানেট এখন আরও বায়োপসি রিপোর্টের অপেক্ষা করছেন এবং তাকে বলা হয়েছে যে তার ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য তাকে কেমোথেরাপি দেয়ার প্রয়োজন হবে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
ফ্রান্সে ২০১১ সাল থেকে ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট বিষয়ে পরীক্ষা চলছে, যখন তারা বিআইএ- এএলসিএল-এর রিপোর্ট পেতে শুরু করে। ইমপ্ল্যান্টের পর ঝুঁকি সারা বিশ্বেই রয়েছে তবে তা ছোট-খাটো বলে মনে করা হয়।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এমএইচআরএ স্তন ইমপ্ল্যান্ট করা নারীদের সম্পর্কে ৫৭টি রিপোর্ট পায় এএলসিএল-এর, তার মধ্যে ৪৫ জনকে নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
ধারনা করা হয় যে, বিআইএ-এএলসিএল এর ঝুঁকি আনুমানিক ২৪,০০০ইমপ্ল্যান্টের ঘটনার মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে হয়।
ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন অব প্লাস্টিক এবং রি-কনস্ট্রাকটিভ অ্যাসথেটিকস সার্জনস বা সংক্ষেপে বিএএপিএস-এর মতে, ব্রিটেনে শতকরা ৯৯ ভাগ ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট এর ক্ষেত্রে টেক্সচার্ড ইমপ্ল্যান্ট পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ ডক্টর সুজানে টার্নার বলেন, এটা একটা উদ্বেগরে বিষয় অবশ্যই বিশেষ করে এখন আমরা যেটা দেখছি এইসব নারীদের মধ্যে এটা দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন "ঝুঁকি কম কিন্তু তারপরও এটা একটা ঝুঁকি যার সম্পর্কে অমাদের জানা উচিত এবং জানানো উচিত"।
অনুসন্ধানে জানা গেছে অনেক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টেক্সচার্ড ইমপ্ল্যান্ট পণ্য প্রকাশ্যে বিক্রির আগে যথাযথ নিয়ম অনুসারে পর্যাপ্ত পরীক্ষা করে না।
এইসব পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে এর কি ধরনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হয় তা নির্ণয় করা হয়।
উৎপাদনকারীরা দাবি করে থাকে এই ধরনের পরীক্ষা অপ্রয়োজনীয় কিন্তু ফরাসি রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ বলছে, "মানবশরীরের এর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া কি সে বিষয়ে পরীক্ষা না নেয়ার বিষয়ক উৎপাদনকারীদের দেয়া প্রায় সব যুক্তি তর্ক অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে"।
অনেক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এখন বলছে যে তারা প্রয়োজণীনীয় পরীক্ষা করেছে। কিন্তু গোপনীয়তার নীতি অনুসারে আমাদের কি করা হয়েছে তা দেখার অনুমতি দেয়া হয় না।
তদন্তে দেখা গেছে যে, ইউরোপ আমেরিকার উৎপাদনকারীরা ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট সংক্রান্ত সমস্যার সম্পর্কে রিপোর্টে সঠিক তথ্য দেয়নি।
সুতরাং ঝুঁকির মাত্রা সম্পর্কে সঠিক ধারণা কারও নেই কারণ স্তন প্রতিস্থাপনের ঘটনা পর্যাপ্ত-ভাবে অনুসরণ করা যায় না । ফলে সমস্যাগুলো হয়তো কয়েক বছর পরে মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণের জন্য ২০১৬ সালে নিবন্ধনের উদ্যোগ নেয়া হয় কিন্তু সেখানে এখনো স্বতপ্রণোদিত হয়ে অল্পসংখ্যক নিবন্ধন করছেন।"
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্ল হেনেঘান বলেন, এই বিষয়ে ক্যাম্পেইনাররা গত ২৫ বছর ধরে নিবন্ধনের জন্য দাবি তুলে আসছে।
"প্রতি ইমপ্ল্যান্ট নিবন্ধনের আওতায় আসা উচিত কারণ এটি রোগীর স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তাকে সংজ্ঞায়িত করে। আর তা না থাকলে আমরা অন্ধকারেই থেকে যাবো।"
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/নভেম্বর ২৭, ২০১৮)