দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি পুরোপুরি খালাস না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ (প্রার্থী) হতে পারবেন না বলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

বুধবার (২৮ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) হাইকোর্ট দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি পুরোপুরি খালাস না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ (প্রার্থী) হতে পারবেন না বলে আদেশ দেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বিচারিক আদালতে কারও বিরুদ্ধে দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। যতক্ষণ না, আপিল বিভাগ ওই রায় বাতিল বা স্থগিত করে জামিন না দেয়।

এ আদেশ স্থগিত চেয়ে মঙ্গলবারই আপিল করেন বিএনপি নেতা ডা. জেড এম জাহিদ। পরে চেম্বার আদালত আবেদনটি শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ পাঠিয়ে দেন।

মঙ্গলবার আদেশে আদালত বলেছেন, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারওে দুই বছরের বেশি দণ্ড হলে, আপিল বিভাগ সম্পূর্ণভাবে তার সাজা বাতিল না করা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। দণ্ডের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায়ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

এই আদেশের ফলে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়া, আব্দুল ওহাব ও মশিউর রহমান নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

গত সোমবার এই পাঁচ নেতার দণ্ড স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়।

মামলার বিবরণে জানা যায়, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, তথ্য গোপন ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৬ কোটি ৩৬ লাখ ২৯ হাজার ৩৫৪ টাকার সম্পদ অর্জন করায় ওয়াদুদ ভুঁইয়াকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ মোট ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন। তিনি এ বিষয়ে আপিল করে ২০০৯ সালের ২৮ এপ্রিল ২০০৯ সালে জামিন লাভ করেন।

এ ছাড়া জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ৯৩ লাখ ৩৬৯ টাকার সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপন করে মো. আবদুল ওহাবকে যশোর স্পেশাল জজ গত বছরের ৩০ অক্টোবর ৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ত্রিশ হাজার টাকার জরিমানা দিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে আপিল করে ৬ ডিসেম্বর জামিন নিয়েছেন।

জ্ঞাত আয় বহির্ভূত প্রায় ১০ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ টাকার অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার তৎকালীন সহকারী পরিচালক মোশরফ হোসেন মৃধা মামলা করেন।

এ মামলায় ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর ঝিনাইদহ-২ (সদর ও হরিণাকুন্ডু) আসনের প্রাক্তন সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমানকে পৃথক ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ও ১০ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩০ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পরবর্তীতে তিনি আপিল করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন।

২০০৮ সালের ২৫ মে দুর্নীতির মামলায় মোট ১৩ বছরের দণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এর বিরুদ্ধে আপিল করে হাইকোর্ট থেকে পরে তিনি জামিন নেন।

আমান উল্লাহ আমানকে দুর্নীতির মামলায় ২০০৭ সালের ২১ জুন বিচারিক আদালত ১৩ বছরের সাজ দেন। পরে তিনি আপিল করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন বলে জানান আমিন উদ্দিন মানিক।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/নভেম্বর ২৮, ২০১৮)