৩০ দফা কর্মসূচি নিয়ে সিপিবি'র ইশতেহার
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: মহান স্বাধীনতার মাসের প্রথম দিনে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
‘ভিশন-মুক্তিযুদ্ধ ৭১’ শিরোনামে ঘোষিত ইশতেহারে ৩২ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়েছে। কর্মসূচিতে দেশের সকল মানুষের রুটি-রুজি ও অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে।
শনিবার দুপুরে পুরানা পল্টনস্থ মুক্তি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইশতেহার ঘোষণা করেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। এ সময় সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, সহ সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন ও অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, আহসান হাবিব লাবলু ও জলি তালুকদার, কেন্দ্রীয় সদস্য সাদেকুর রহমান শামীম, ডা. সাজেদুল হক রুবেল ও মো. কিবরিয়া এবং বেশ কয়েকজন প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ’৭১-এর বিজয় আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ’৭১ তারুণ্যের প্রতীক, নবজীবনের প্রতীক। তারুণ্যকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ’৭১-এর চেতনাকে পুনরুদ্ধার করব। তিনি বলেন, ‘ভিশন-মুক্তিযুদ্ধ ৭১’ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা ’৭২-এর সংবিধানের মূলভিত্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করব। অর্থনীতির ব্যাবস্থা মুক্তিযুদ্ধের সমাজতন্ত্র অভিমুখীন ধারায় ফিরিয়ে আনবো। গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণের ভিত্তিতে রাষ্ট্রক্ষমতাকে ঢেলে সাজাবো।
তিনি আরো বলেন, দ্বি-দলীয় দুঃশাসনের বৃত্তে দেশ আটকা পড়ে আছে। এর পরিবর্তন না করতে পারলে মানুষের মুক্তি নেই। দেশ বাঁচাতে এই বৃত্ত ভাঙতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক অবস্থা পাল্টে দিতে হবে। সিপিবি’র নির্বাচনী ইশতেহার এই পাল্টে দেওয়ার ও নব যৌবনের সৃজনশীল মুক্তি-আকাঙ্ক্ষার দলিল। বাম গণতান্ত্রিক জোটকে সঙ্গে নিয়ে সিপিবি এই দলিল বাস্তবায়ন করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত ‘ভিশন-মুক্তিযুদ্ধ ৭১’ নামে ‘ব্যবস্থা বদল’ এর ৩০ দফা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংবিধান, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও রাজনীতির সংস্কার সাধন করা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, সিপিবির ৫৩ দফা সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করা, বিকল্প অর্থনৈতিক নীতি ও ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য কমানো, ঘুষ-দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্যে ভেজাল রোধ, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-দুর্বৃত্তায়ন-মাফিয়াতন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ, কৃষিতে কৃষক ও গ্রামীণ মজুরের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জীবনমান উন্নয়ন করা, দেশীয় শিল্পের বিকাশসাধন, শ্রমিক ও কর্মচারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়ন, স্বাস্থ্যখাত ও চিকিৎসার মানোন্নয়ন, যুবসমাজের তারুণ্য-সম্পদকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানো, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা, শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধ-দুঃস্থ নাগরিকবৃন্দের অধিকার নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য রোধ এবং তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন জাতিসত্তা, আদিবাসী সমাজ ও দলিতদের যথাযথ স্বীকৃতি ও অধিকার প্রতিষ্ঠা, শহরের বস্তিবাসী, হকার ও নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন, প্রতিবন্ধীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি ও অধিকার রক্ষা, তথ্য-প্রযুক্তি টেলিযোগাযোগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সার্বজনীন করা, প্রকৃতি পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষা, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও বিকল্প জ্বালানী নীতির বাস্তবায়ন, পানি উন্নয়ন ও বন্যা সমস্যার প্রতিকার করা, দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও যানজট রোধ করা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো, ক্রীড়া শরীরচর্চা ও বিনোদনের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিপিবি এককভাবে কাস্তে মার্কা নিয়ে ৭৩টি আসনে এবং বাম গণতান্ত্রিক জোটগতভাবে দেড় শ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। চলতি সপ্তাহেই জোটের ইশতেহার ঘোষণা করা হবে।
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/ডিসেম্বর ০১, ২০১৮)