টেস্টে ইতিহাস গড়ে টাইগাদের জয়
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বাংলাদেশের ৫০৮ রানের জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে বিপাকে পড়ে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৯৭ রান পিছিয়ে থেকে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফলোঅনে পড়ে আবারো ব্যাটিংয়ে নামে উইন্ডিজ। তবে, টাইগার স্পিনারদের দাপটে ২১৩ রানে আরেকবার গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। স্বাগতিক বাংলাদেশ জয় তুলে নেয় ইনিংস ও ১৮৪ রানের ব্যবধানে, সিরিজ জেতে ২-০ ব্যবধানে। এই প্রথম কোনো প্রতিপক্ষকে ইনিংস ব্যবধানে হারালো টাইগাররা। ২০০৯ সালের পর দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে আবারো উইন্ডিজদের হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ। সেবার করেছিল ক্যারিবীয়ান মাটিতে, এবার নিজেদের মাটিতে।
ফলোঅনে ব্যাটিংয়ে নামলে শুরতেই সাকিব এলবির ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফেরান ক্যারিবীয়ান দলপতি কার্লোস ব্রাথওয়েইটকে। দলীয় ২ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় সফরকারীরা। দলীয় ১৪ রানের মাথায় মিরাজ স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে ফিরিয়ে দেন কাইরন পাওয়েলকে (৬)। তাইজুল ইসলাম নিজের প্রথম ওভারেই এলবির ফাঁদে ফেলেন সুনীল অ্যামব্রিসকে (৪)। দলীয় ২৩ রান তৃতীয় উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলীয় ২৯ রানে তাইজুলের বলে মুমিনুলের তালুবন্দি হয়ে বিদায় নেন রোস্টন চেজ (৩)। দ্বিতীয় সেশনে নেমে মিরাজ ফিরিয়ে দেন ২৫ রান করা শাই হোপকে। দলীয় ৮৫ রানে ক্যারিবীয়ানরা হারায় টপঅর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে। দলীয় ৯৬ রানের মাথায় নাঈম হাসান ফিরিয়ে দেন শেন ডরউইচকে (৩), ষষ্ঠ উইকেট হারায় সফরকারীরা। দলীয় ১৪৩ রানের মাথায় মিরাজ ফিরিয়ে দেন ১২ রান করা দেবেন্দ্র বিশুকে।
এক প্রান্ত আগলে রেখে হাত খুলে খেলতে থাকেন শিমরন হেটমেয়ার। ৯২ বলে একটি চার আর ৯টি ছক্কায় তিনি করেন ৯৩ রান। মিরাজ ফিরিয়ে দেন তাকে। দলীয় ১৬৬ রানের মাথায় অষ্টম উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর মিরাজ বিদায় করেন জোমেল ওয়ারিকানকে। শেষ ব্যাটসম্যান শিরমন লুইসকে ফেরান তাইজুল। ব্যক্তিগত ২০ রানে আউট হন লুইস, কেমার রোচ অপরাজিত থাকেন ৩৭ রানে। ২১৩ রানে অলআউট হয় ক্যারিবীয়ানরা। মিরাজ ৫টি, তাইজুল ৩টি, সাকিব ও নাঈম একটি করে উইকেট পান। গত উইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ ৪৩ রানে অলআউট হয়েছিল, সেই ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দেওয়া গেছে প্রথম ইনিংসে সফরকারীদের ১১১ রানে গুটিয়ে দিয়ে।
এর আগে দ্বিতীয় দিন ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলেই সাকিব বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন ক্যারিবীয়ান ওপেনার কার্লোস ব্রাথওয়েইটকে। এরপর মিরাজ বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন আরেক ওপেনার কাইরন পাওয়েলকে (৪)। দলীয় ৬ রানে ক্যারিবীয়ানরা দুই ওপেনারকে হারায়। দলীয় ১৭ রানের মাথায় ইনিংসের নবম ওভারের শেষ বলে সাকিব বোল্ড করেন সুনীল অ্যামবিসকে (৭)। এরপর শিকারে আবারো যোগ দেন মিরাজ। ফিরিয়ে দেন রোস্টন চেজকে। দলীয় ২৯ রানে মিরাজ নিজের তৃতীয় উইকেট নিতে ফিরিয়ে দেন ১০ রান করা শাই হোপকে। টপঅর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যানই বোল্ড হন। নাঈম হাসান নিজের প্রথম ওভারে এলবির ফাঁদে ফেলেন শিমরন হেটমেয়ারকে। আম্পায়ার আলিম দার আউট ঘোষণা করলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান হেটমেয়ার। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে উইন্ডিজের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭৫ রান। তাতে স্বাগতিকদের থেকে ৪৩৩ রানে পিছিয়ে থাকে সফরকারীরা।
তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনের শুরুতে মিরাজ ফিরিয়ে দেন শিমরন হেটমেয়ারকে (৩৯)। নিজের বলে নিজেই দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মিরাজ। দলীয় ৮৬ রানের মাথায় উইন্ডিজরা ষষ্ঠ উইকেট হারায়। স্কোরবোর্ডে আর দুই রান যোগ হতেই আবারো আঘাত হানেন মিরাজ। এবার ফিরিয়ে দেন দেবেন্দ্র বিশুকে। এর মধ্যদিয়ে নিজের পঞ্চম উইকেট পান মিরাজ। সাকিব নতুন ব্যাটসম্যান কেমার রোচের সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি। পরের ওভারে মিরাজ তার ষষ্ঠ উইকেট তুলে নেন, ফিরিয়ে দেন কেমার রোচকে। দলীয় ৯২ রানের মাথায় উইন্ডিজ তাদের অষ্টম উইকেট হারায়। দলীয় ১১০ রানে শেন ডরউইচকে (৩৭) এলবির ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। শেষ ব্যাটসম্যান শিরমন লুইসকে এলবির ফাঁদে ফেলেন সাকিব। মিরাজ সাতটি, সাকিব তিনটি উইকেট পান। এটাই মিরাজের ক্যারিয়ার সেরা টেস্ট বোলিং। ৩৯৭ রানের বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় ফলোঅন করানোর সিদ্ধান্ত নিতে দুই বার ভাবতে হয়নি টাইগার দলপতি সাকিবকে।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে টাইগারদের হয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২৪২ বলে ১০টি বাউন্ডারিতে করেন ক্যারিয়ার সেরা ১৩৬ রান। অভিষিক্ত ওপেনার সাদমান ইসলাম করেন ৭৬ রান। দলপতি সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৮০ রান। জাতীয় দলের আবারো ফেরা লিটন খেলেন ৫৪ রানের ইনিংস। এছাড়া, ওপেনার সৌম্য সরকার ১৯, মুমিনুল হক ২৯, মোহাম্মদ মিঠুন ২৯, মুশফিকুর রহিম ১৪, মেহেদি হাসান মিরাজ ১৮, তাইজুল ইসলাম ২৬ আর নাঈম হাসান অপরাজিত ১২ রান করেন। তাতে বিরল এক রেকর্ডে নাম লেখায় বাংলাদেশের ইনিংস। ১১ ব্যাটসম্যানের প্রত্যেকের ডাবল ফিগারে যাওয়ার ঘটনা টেস্টের ইতিহাসে এ নিয়ে ঘটে মাত্র ১৪ বার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুটি করে উইকেট পান কেমার রোচ, দেবেন্দ্র বিশু, কার্লোস ব্রাথওয়েইট এবং জোমেল ওয়ারিকান। একটি করে উইকেট পান শিরমন লুইস এবং রোস্টন চেজ।
চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ জিতেছিল ৬৪ রানের ব্যবধানে। এই ম্যাচের আগে নিজেদের খেলা সবশেষ ৫ টেস্টে টানা দুটিতেই জিতেছিল বাংলাদেশ আর টানা তিনটিতেই হেরেছিল ক্যারিবীয়ানরা। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই ম্যাচের সিরিজে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম টেস্টে চোট পেয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার বদলে নেতৃত্বভার পেয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করেছিলেন সাকিব। ৯ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আবারও ধবলধোলাইয়ের সুযোগ পায় বাংলাদেশ।
শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে মিরপুরে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হয় সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বাংলাদেশ একাদশ: সাদমান ইসলাম, সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, মোহাম্মদ মিঠুন, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম এবং নাঈম হাসান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ: ক্রেইগ ব্রাথওয়েইট, কাইরন পাওয়েল, শাই হোপ, শিমরন হেটমেয়ার, সুনীল অ্যামব্রিস, রোস্টন চেজ, শেন ডরউইচ, শিরমন লুইস, দেবেন্দ্র বিশু, কেমার রোচ এবং জোমেল ওয়ারিকান।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/ডিসেম্বর ০২, ২০১৮)