ভিকারুননিসায় ভর্তি বাণিজ্য আর কোচিং ব্যবসা!
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির নানা কাহিনী বের হয়ে আসছে৷ অনিয়মের শীর্ষে ভর্তি ও কোচিং বাণিজ্য৷ এই অভিযোগের কথা স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী জানান সংবাদ মাধ্যমকে৷
একটি অভিযোগকে কেন্দ্র করে অভিবাবকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করায় নবম শ্রেণির প্রভাতী শাখার শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারী আত্মহত্যা করেন গত সোমবার্৷আর এই ঘটনায় স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিবাকরা প্রতিবাদমুখর হয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করলে শিক্ষা প্রশাসনের টনক নড়ে৷ শিক্ষা মন্ত্রনালয় প্রাথমিক তদন্তে তিন জন শিক্ষককে দায়ী করে তাদের বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছে৷ তারা হলেন: ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদাউস, বেইলি রোড ক্যাম্পাসের প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তার ও শিক্ষক হাসনা হেনা৷ তাদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলাও হয়েছে৷
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বুধবার মন্ত্রনালয়ে এক সংবাদ সম্মেললনে জানান, ‘‘ওই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে৷'' সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘‘সেখানে ১০ লাখ টাকা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়৷ সেটা বন্ধ করতে আমরা লটারি সিস্টেম চালু করেছি৷ কিন্তু তারপরও দেখা যাচ্ছে অনুমোদনের চেয়ে অনেক বেশি ছাত্র-ছাত্রী তারা ভর্তি করে৷ তার মানে, বোঝাই যায় কেন তারা অতিরিক্ত ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করেন৷''তিনি বলেন, ‘‘আমরা নতুন কোনো শাখা খোলার অনুমোদন দেই না৷ কিন্তু তারা একটার পর একটা শাখা খোলে৷ এর উদ্দেশ্য সহজেই বোঝা যায়৷'' ভিকারুননিসা স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া রাহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অরিত্রীর সঙ্গে যা ঘটেছে তা আরো অনেকের সঙ্গেই ঘটেছে৷ অরিত্রী সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে৷ অন্যদের হয়তো মানসিক জোর বেশি থাকায় আত্মহত্যা করেনি৷ পরিস্থিতি বোঝার জন্য এক জনের আত্মহত্যা কি যথেষ্ট নয়? আমরা আর কোনো অরিত্রীকে হারাতে চাই না৷''
আরেকজন শিক্ষার্থী অনুস্কা রায় জানান, ‘‘ ছোটখাটো বিষয়েও আমাদের অপমান অপদস্থ করা হয়৷ অভিবাকদের ডেকে তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়৷ আমরা তাদের কাছ থেকে মানবিক আচরণ পাই না৷ আমরা সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকি৷ শিক্ষকদের কাছে কোচিং না করলে, প্রাইভেট না পড়লে নানাভাবে অপমান করা হয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘টিসি একটা বড় আতঙ্ক৷ কোনো কিছু হলেই টিসি দিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়৷''
দিলারা চৌধুরীর দুই মেয়ে পড়ে ভিকারুননিসা স্কুলে৷ তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘আমার মেয়েও নির্যাতনের শিকার হয়েছে৷ তারা দুই বান্ধবী সব সময় একসঙ্গে বসে এটাই তাদের অপরাধ৷ এই কারণে তাদের অপমান-অপদস্থ করা হয়েছে৷ অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি৷ স্কুলের শিক্ষকরা অভিবাবকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন৷ কোনো দাম দেন না৷''
তিনি জানান, ‘‘শিক্ষকরা তাদের কাছে কোচিং করতে বা প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করে৷ না পড়লে পরীক্ষায় নাম্বার কম দেয়৷ আবার খারাপ ব্যবহারও করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে৷''
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘প্রথম শ্রেনিতে চলে ভর্তি বাণিজ্য৷ একজনকে ভর্তি করতে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা নেয়া হয়৷ লটারির নামে চলে দূর্নীতি৷ টাকা না দিলে লটারিতে নাম ওঠে না৷ এই কাজে লোক নিয়োগ করা আছে৷''
ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ অভিবাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ সুজন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এরকম খারাপ আচরণের অনেক অভিযোগ পাই৷ মানসিক নির্যাতনের অনেক অভিযোগ পাই৷ কিন্তু সেগুলো তাদের জানালে আসলে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না৷ তারা এসব অভিযোগ আমলেই নিতে চায় না৷ আর টিসির হুমকি দেয়, অভিভাকদের সঙ্গে প্রায়ই খারাপ ব্যবহার করে৷''
তিনি বলেন, ‘‘ভর্তি বাণিজ্য এবং কোচিং বাণিজ্য এর পিছনে প্রধান কারণ৷ চার লাখ টাকার নীচে ভর্তি করা যায় না৷ আর প্রতি বিষয়ে মাসে কোচিংয়ে নেয় দেড় হাজার টাকা৷ কেউ কোচিং-এ রাজি না হলে তাদের নানাভাবে হেনস্তা করা হয়। পরীক্ষায় নাম্বার কম দেয়৷''
স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মানসিক নির্যাতনসহ নানা ধরনের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও অর্থের বিনিময়ে ভর্তির অভিযোগ অস্বীকার করেন৷ তিনি দাবি করেন, ‘‘আমি ভর্তি বাণিজ্য এবং কোচিং বাণিজ্যের কোনো অভিযোগ পাইনি৷ কাউকে বাধ্যতামূলক টিসিও দেয়া হয়নি৷ এটা দেয়ার নিয়ম নেই৷''
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে এখন মোট শিক্ষার্থী ২২ হাজার৷ এক সময় বেইলি রাডে এই ঐহিত্যবাহী স্কুলটি গড়ে উঠলেও এখন আরো তিনটি শাখা আছে ধানমন্ডি, আজিমপুর ও বসুন্ধরায়৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ডিসেম্বর ০৫,২০১৮)