গ্রিন ব্যাংকিংয়ে অর্থায়ন এক শতাংশের কম
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পাঁচ শতাংশ গ্রিন ব্যাংকিংয়ে অর্থায়ন করার কথা থাকলেও এক শতাংশেরও কম। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
মাত্র দশমিক পাঁচ শতাংশ অর্থায়ন হচ্ছে গ্রিন ব্যাংকিংয়ে। এর মধ্যে জীববৈচিত্র্য খাতে ব্যাংকের অর্থায়ন আরও কম। মাত্র আট থেকে ১০ শতাংশ ব্যাংক জীববৈচিত্র্য খাতে অর্থায়ন করছে। এ অর্থায়নের বেশিরভাগই যাচ্ছে সৌরবিদ্যুৎ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘হাউ টু ইনকরপোরেট বায়ো-ডাইভার্সিটি ইস্যুস ইন গ্রিন ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালায় এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। বিআইবিএম এবং বাংলাদেশ পৌষ যৌথভাবে এ গবেষণা কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্যে আয়োজনের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। তিনি গ্রিন ব্যাংকিংয়ে কার্যক্রমের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
গবেষণা কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিআইবিএম এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান। আরও বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (ট্রেনিং) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনিস এ খান, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমাইরা আজম, বাংলাদেশ পৌষের প্রেসিডেন্ট এম সানোয়ার হোসেন প্রমুখ।
কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সাত সদস্যের গবেষণা দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক তাহমিনা রহমান, অন্তরা জেরীন, রেক্সোনা ইয়াসমিন ও তোফায়েল আহমেদ। এছাড়া আরও ছিলেন বাংলাদেশ পৌষের প্রেসিডেন্ট এম সানোয়ার হোসেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আসিফ ইকবাল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিআইবিএম এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, গ্রিন ব্যাংকিং এবং জীববৈচিত্র্য খাতের অর্থায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে গ্রিন ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে একটি আলাদা গাইডলাইন তৈরি হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইনের চেয়ে ব্যাংকারদের সচেতনতা জরুরি।
বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, জীববৈচিত্র্য খাতে অর্থায়নে পরিবেশের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করতে হবে। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। ব্যাংকগুলোকে এদিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান।
বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (ট্রেনিং) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, গ্রিন ব্যাংকিং খাতে এক সময় কোনো সচেতনতা ছিল না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এ অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। একইভাবে জীববৈচিত্র্য খাতেও এক সময় বড় পরিবর্তন আসবে ব্যাংকারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়লে।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, গ্রিন ব্যাংকিং এবং জীববৈচিত্র্য বিষয়ে সব পর্যায়ে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। আগামী দিনে এ খাতে অর্থায়নে ব্যাংকারদেরও সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনিস এ খান বলেন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও), এজেন্ট ব্যাংকিংসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে জীববৈচিত্র্য খাতে অর্থায়ন করতে হবে। এতে ঝুঁকি কমে আসবে। তিনি বলেন, ব্ল–-ইকোনমি ব্যাংকিং খাতের অর্থায়নে নতুন খাত সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ব্যাংকাররা দৃষ্টি দিতে পারে।
বাংলাদেশ পৌষের প্রেসিডেন্ট এম সানোয়ার হোসেন বলেন, ব্যাংকগুলো সম্পৃক্ত হলে জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ হবে। আগামী দিনে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমাইরা আজম বলেন, জীববৈচিত্র্য খাতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা আছে। সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। সমাপনী বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, আগামী দিনে গ্রিন ব্যাংকিংয়ে আরও বেশি নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে গ্রাহকদের গ্রিন ব্যাংকিং পণ্যে অর্থায়নে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানোর ওপর জোর দেন তিনি।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ডিসেম্বর ০৭,২০১৮)