প্রভিশন ঘাটতির তালিকায় ১২ ব্যাংক
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য খেলাপি ঋণের বিপরীতে নির্দিষ্ট একটি অংশ প্রভিশন রাখা সব ব্যাংকের জন্য বাধ্যতামূলক। প্রত্যেক ব্যাংকের কাছে প্রভিশন একটি ভিতিকর বস্তুর নাম। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেষে প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে ১২টি ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকারি-বেসরকারি ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এ তালিকায় সরকারি খাতের ৪টি ও বেসরকারি খাতের ৮টি ব্যাংকের নাম রয়েছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, রূপলী ও বেসিক ব্যাংকেরই ঘাটতি ৯ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। এছাড়া বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়ায় ৪২১ কোটি টাকা। একই পরিস্থিতি সোস্যাল ইসলামী, ন্যাশনাল ও এবি ব্যাংকেরও। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৩৫৭ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ২৬১ কোটি ও এবি ব্যাংকের ১২৩ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৫৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৪৮ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতের সামগ্রিক প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৬ হাজার ১৯২ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টদের মতে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেশি হলে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যায়। তাতে ব্যাংক ঋণের সুদের হারও বাড়ে। বাংলাদেশে আমানতের সুদের হার কমিয়ে এসব সমন্বয় করা হচ্ছে। এতে একদিকে খেলাপি ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত প্রভিশন না থাকায় গ্রাহকদের জমা দেওয়া অর্থ অনিরাপদ হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে খেলাপি ঋণের কারণে কস্ট অব ফান্ড বেড়ে যাচ্ছে বলে আমানতের বিপরীতে সুদহার কমিয়ে দিয়ে আমানকারীদের ঠকাচ্ছে ব্যাংকগুলো।
কোনো ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিলে মূলধনেও টান পড়ে। আর মূলধন ঘাটতিতে পড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী ওই ব্যাংক বছর শেষে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশও দিতে পারে না। এতে প্রভিশন ঘাটতির ফলে একদিকে যেমন আমানতকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হচ্ছে, অপরদিকে শেয়ারহোল্ডাররাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
উল্লেখ, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। যা বিতরণ হওয়া ঋণের ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ডিসেম্বর ১১,২০১৮)