শত শত মামলা নিয়ে ভোটে লড়বেন বিএনপি নেতারা
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জমে উঠেছে। এই নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নির্ধারণ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। অনেক পোড় খাওয়া নেতা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন। আবার অনেক তরুণ নেতা মনোনয়ন পেয়েছেন।
বিএনপি প্রার্থীদের অনেকেই মামলা আতঙ্কে ভোগছেন। মামলার জালে পড়ে অনেকে রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছেন। তবে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার নামে মামলার রেকর্ড।
এদের মধ্যে অনেকেই সক্রিয় রাজনীতি করছেন। দলের মনোনয়ন চেয়ে পেয়েছেন। কেউ কেউ পাননি।
শয়ে শয়ে মামলা নিয়ে ভোটের মাঠ দাবিয়ে বেড়াচ্ছেন বেশ কয়েকজন প্রার্থী। তাদের মধ্যে রয়েছেন যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব। তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন ঢাকা-১২ আসন থেকে। যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। তিনি টাঙ্গাইল থেকে নির্বাচন করছেন।
শতাধিক মামলা মাথায় নিয়ে ভোটের মাঠে আছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল। তিনি খুলনা-৪ আসন থেকে ভোট করছেন।
ঢাকা-৫ আসন থেকে নির্বাচন করছেন মহানগর বিএনপি নেতা নবীউল্লাহ নবী। তার নামেও শতাধিক মামলা।
এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর আলমের নামেও শতাধিক মামলার রয়েছেন।প্রথমে তাকে ঢাকা-১৮ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।
এদের মধ্যে মামলায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে সাইফুল আলম নীরব।তিনি ২৬৭ মামলার আসামি।
সাইফুল আলম নীরব
ঢাকায় বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব মামলায় এগিয়ে। তার মামলার সংখ্যা ২৬৭টি। তিনি ঢাকা-১২ আসনে বিএনপির প্রার্থী।
গত সপ্তাহে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে রিটার্নিং অফিসার কেএম আলী আজম সাইফুল আলম নীরবের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন।
এত মামলা নিয়ে নীরব কীভাবে বৈধ প্রার্থী-এর ব্যাখ্যায় এ রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, যুবদলের এই নেতার বিরুদ্ধে দুই শতাধিক মামলা থাকলেও তার কোনো ঋণখেলাপের তথ্য নেই। মনোনয়নপত্রের অন্যান্য সব তথ্য ঠিক আছে।
সাইফুল আলম নীরব মামলার কারণে বহুদিন এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারেননি। তবে মনোনয়ন বৈধ হওয়ার পর তিনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। নীরব এর আগে যুবদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
এই আসনে নীরবের প্রতিদ্বন্দ্বী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
সুলতান সালাউদ্দিন টুকু
যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর মামলার সংখ্যা ১৩৯। গত ১০ বছরে তার বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়। তিনি টাঙ্গাইল-২ আসনে (ভূঞাপুর ও গোপালপুর) আসনে বিএনপির প্রার্থী।
তার মামলার ৭৮টি বিচারাধীন ও ৬১টি তদন্তনাধীন রয়েছে। এছাড়া ২৯টি স্থগিত ও ৪ মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি।
টুকুর হলফনামা থেকে জানা গেছে, ১৯৯৬-৯৯ এই তিন বছরে দায়ের হওয়া মামলাগুলোতে খালাস পান টুকু। পরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয় ৩টি। আর বিগত ১০ বছরে ১৩৬টি মামলা বেড়ে বর্তমানে মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৯টি।
টুকু দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দী। বিএনপির মনোনয়ন পেলেও তিনি এলাকায় যেতে পারছেন না।
সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ছাত্রদলের সিনিয়র সহ সভাপতি ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি এই আসন থেকে বিএনপির টিকিটে ভোট করেন। এর আগে এই আসনে ভোট করে এমপি হন তার ভাই আবদুস সালাম পিন্টু।
নবীউল্লাহ নবী
ঢাকায় বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে মামলার দিক থেকে এগিয়ে মহানগর বিএনপি নেতা নবীউল্লাহ নবী। তার মামলার সংখ্যা ১২১টি। তিনি ঢাকা-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী। তিনি ব্যাংকের ঋণখেলাপি না হওয়ায় মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
নবীউল্লাহ নবীর মামলাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই রাজনৈতিক। কোনো কোনোটি বিচারাধীন আবার কোনোটি তদন্তাধীন।
নবী দীর্ঘদিন ধরে মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।নিজ এলাকায় তার জনপ্রিয়তা রয়েছে।মামলা সত্ত্বেও ভোটের মাঠে সরব তিনি।
আজিজুল বারী হেলাল
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল খুলনা-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী।তার মামলার সেঞ্চুরি রয়েছে।
ছাত্ররাজনীতির প্রিয়মুখ হেলাল ২০০৮ সালে ঢাকা-১৮ আসনে নির্বাচন করেছিলেন। ওই নির্বাচনে তিনি ১ লাখ ১৮ হাজার ভোট পেয়েছিলেন।
পরে ঢাকাকেন্দ্রিক রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে তিনি নিজ এলাকা খুলনায় সময় দেন। এবার দল তাকে খুলনা-৪ (দিঘলিয়া-রূপসা-তেরখাদা) আসনে মনোনয়ন দেয়।
হলফনামায় দেওয়া তথ্যমতে, আজিজুল বারী হেলালের বিরুদ্ধে বর্তমানে ১০১টি মামলা রয়েছে। তিনটি মামলায় অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি। বাকি মামলাগুলোর কোনোটা বিচারাধীন কোনোটা তদন্তাধীন।
আজিজুল বারী হেলাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞানের স্নাতক।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতি করেছেন।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/ডিসেম্বর ১২, ২০১৮)