দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ব্রিটেনের কনজারভেটিভ দলের নেতৃত্বের প্রশ্নে আস্থা ভোটে আরো অন্তত এক বছরের জন্যে টিকে গেলেন টেরিজা মে। বুধবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে ভোটাভুটিতে তার পক্ষে পড়েছে ২০০ ভোট আর বিপক্ষে ১১৭।

আস্থা ভোটে টেরিজা মে জিতেছেন ৮৩ ভোটে, যার অর্থ ৬৩ শতাংশ কনজারভেটিভ এমপি ছিল তার পক্ষে আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ৩৭ শতাংশ।

তিনি হেরে গেলে দলের প্রধানের পদ থেকে তাকে সরে দাঁড়াতে হতো, সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকেও তাকে সরে যেতে হতো। খবর- বিবিসির।

জয়ের পর টেরিজা মে বলেন, "এটি খুব দীর্ঘ এবং উত্তেজনাপূর্ণ দিন ছিল। তবে দিন শেষে আমি আমার সহকর্মীদের ধন্যবাদ দেবো ব্যালটের মাধ্যমে আমাকে সমর্থন জানানোর জন্যে, আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।"

বক্তব্যের এক পর্যায়ে নিজ দলের এই সমর্থন তাকে ব্রেক্সিট নীতি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে বলে জানান টেরিজা মে।

এর আগে ডাউনিং স্ট্রিটে এক বক্তব্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি 'জনগণের দেয়া ভোটে নির্ধারিত ব্রেক্সিট' রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সংসদে আস্থা ভোটের ডাক দেবার জন্যে দরকার ছিল ৪৮ জন কনজারভেটিভ পার্টির সংসদ সদস্যের আবেদন।

এই একই সংখ্যক সদস্য ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে যাবার পক্ষে গণভোটের রায়ের ওপর তৈরি মিজ মে'র ব্রেক্সিট নীতিতে রাগান্বিত হয়ে অনাস্থা আবেদন দেন।

তবে ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়ে নিজের দলের মধ্যে আনা অনাস্থার এমন ফলাফলকে খুব বেশি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না ব্রিটিশ সাংবাদিক মিহির বোস।

তার মতে এতে প্রমাণিত যে অন্তত ১১৭ জন সদস্য দলের মধ্যে তাকে চান না। দলের মধ্যে তার অবস্থানকে এখনো দুর্বল বলে মন্তব্য করেন মি. বোস।

তিনি বলেন, "টেরিজা মে প্রধানমন্ত্রীত্ব হারালে এর পর যিনি আসবেন তিনি এরচেয়েও খারাপ হতে পারে এমন একটা ভয় ছিল তার দলের মধ্যে।"

আর এ কারণেই বিরোধিতা থাকলেও টিকে গেলেন টেরিজা মে, সাংবাদিক মিহির বোসের মত।

কনজারভেটিভ এমপি'দের কী প্রতিক্রিয়া?
অনাস্থা প্রস্তাব আনা এমপিদের নেতৃত্বে থাকা সংসদ সদস্য জ্যাকব রেস-মগ এই ফলাফলকে প্রধানমন্ত্রীর জন্যে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি মিসেস মে'কে পদত্যাগের আহ্বান জানান।

বিপক্ষে থাকা আরেক এমপি এন্ড্রু ব্রিজেনের মতে, এটি নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী মাধ্যমে নতুন করে ব্রেক্সিট আলোচনার বড় সুযোগ হাতছাড়া হলো।

তবে সাবেক মন্ত্রী ডেমিয়েন গ্রিন একে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর 'নিষ্পত্তিমূলক' বিজয় বলে উল্লেখ করেছেন।

ব্যাক বেঞ্চ এমপি স্যার গ্রাহাম ব্র্যাডি যখন আস্থা ভোটের ফল ঘোষণা করেন, তখন টোরি এমপিরা উল্লাস করে একে গ্রহণ করে নেয়।

তবে এখনো ইউরোপিয় ইউনিয়নের সাথে ব্রেক্সিট চুক্তি বাস্তবায়নে টেরিজা মেকে সংসদে তার বিরোধীদলসহ নিজ দলের কয়েক ডজন সদস্যের সাথে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে।

বিরোধী দলের বক্তব্য
এসএনপি'র স্টিফেন গেথিন সরকারকে জনগণের জীবন নিয়ে খেলার জন্যে অভিযোগ তুলে টেরিজা মে'র বিপক্ষে অনাস্থা প্রস্তাবের আহ্বান জানান।

ডিইউপি'র সহ-প্রধান নাইজেল ডডস্ মনে করেন, অংকের হিসেবে এই ফলাফল খুব বেশি পরিবর্তন আনবেনা।

তবে তিনি এই মুহূর্তে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পক্ষে নন।

পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে চান না মে
অনাস্থা ভোটের আগে এক বক্তব্যে টেরিজা মে ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে তার ব্রেক্সিট চুক্তির জন্যে লড়াই চালিয়ে যাবার কথা বলেন।

তবে তার বক্তব্যের একেবারে শেষে এসে বলেন যে, ২০২২ সালের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে তিনি আর দলের হয়ে লড়বেন না।

সাংবাদিক মিহির বোস টেরিজার মে'র এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন এতে করে দলে তার অবস্থান আরো দুর্বল হয়ে গেল।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮)