দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় তোলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে জিততে পারেনি স্বাগতিক বাংলাদেশ।

শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মাঠে নেমেছে দু’দল। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে শাই হোপের ব্যাটে ভর করে নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৯৮ রান তোলে সফরকারীরা। ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের দরকার ১৯৯ রান।

টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ১০৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন শাই হোপ। তবে মারলন স্যামুয়েলস (১৯), কেমো পল (১২) ও ড্যারেন ব্রাভো (১০) ছাড়া আর কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।

উইন্ডিজ ইনিংসের শুরুতেই উইকেটে হানা দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। চন্দরপল হেমরাজকে ৯ রানে ফেরান তিনি। চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ১৫ রানে মোহাম্মদ মিঠুনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন উইন্ডিজ এই ওপেনার (১৫/১)। এরপর উইকেটে আসেন ড্যারেন ব্রাভো। দ্বিতীয় উইকেটে শাই হোপের সঙ্গে ৪৮ রানের জুটি গড়ে দলীয় ৫৭ রানে মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ১০ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান (৫৭/২)।

এরপর হোপের সঙ্গে যোগ দেন মারলন স্যামুয়েলস। কিন্তু সাইফউদ্দিনের করা ২৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বোল্ড হয়ে ব্যক্তিগত ১৯ রানে ফেরেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান (৯৬/৩)। এক রানের ব্যবধানে শিমরন হেটমেয়ারকে ফেরান মিরাজ। তার করা ২৪তম ওভারের পঞ্চম বলে এলবির শিকার হয়ে শূন্য হাতে ফেরেন উইন্ডিজ এই মিডলঅর্ডার (৯৭/৪)। এরপর আবারো উইকেটে হানা দেন মিরাজ। তার করা ২৬তম ওভারের শেষ বলে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১ রানে ফেরেন অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েল (৯৯/৫)।

বল হাতে ১০ ওভারে ২৯ রান খরচায় ৪টি উইকেট তুলে নেন মিরাজ। দলীয় ১৩৬ রানের মাথায় বিদায় নেন রোস্টন চেজ। সাকিবের বলে সৌম্য সরকারের তালুবন্দি হওয়ার আগে তিনি করেন ৮ রান, ষষ্ঠ উইকেট হারায় সফরকারীরা। এরপর আবারও উইকেটে হানা দেন সাকিব। তার করা ৩৮তম ওভারের শেষ বলে মোহাম্মদ মিঠুনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৬ রান করা এবং ফ্যাবিয়ান অ্যালেন।

এরপর উইকেট শিকারে যোগ দেন মাশরাফি। দলীয় ১৭১ রানে তার করা বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ১৩ রান করা কেমো পল। এরপর আবারও উইকেট নেন ম্যাশ। তার বলে এলবির শিকার হয়ে ৩ রানে ফেরেন কেমার রোচ। এরপর আর উইকেট হারাইয়নি উইন্ডিজরা।

বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। চার উইকেট নিতে ১০ ওভারে ২৯ রান খরচ করতে হয়েছে তাকে, আর এটিই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। এছাড়াও দুটি করে উইকেট নেন মাশরাফি ও সাকিব। আর একটি উইকেট নেন সাইফউদ্দিন।

সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে দুটি পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের। ইমরুল কায়েসের বদলে এই ম্যাচে জায়গা পেয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। আর রুবেল হোসেনের জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন সাইফউদ্দিন। উইন্ডিজ দলে এসেছে একটি পরিবর্তন। ওশান থমাসের জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন ফ্যাবিয়ান অ্যালেন।

এই ম্যাচে জয় পেলেই টানা তৃতীয় সিরিজ জিতবে মাশরাফি-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ’রা। আর এই ম্যাচ দিয়েই সিলেটের মাঠে আন্তর্জাতিক ওয়ানডের অভিষেক হয়েছে।

এই ম্যাচে উইন্ডিজদের বিপক্ষে মাঠে নেমে দারুণ কীর্তি গড়লেন মাশরাফি। দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৬৯টি ওয়ানডেতে দলের নেতৃত্ব দেন সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত হাবিবুলের সমান ৬৯টি ওয়ানডেতে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। এবার উইন্ডিজদের বিপক্ষে এই ম্যাচে হাবিবুলের অধিনায়কত্বের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেন ম্যাশ।

ওয়ানডেতে সব শেষ পাঁচ ম্যাচের মাত্র একটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, নিজেদের খেলা সব শেষ ৫ ম্যাচের দুটিতে জয় আর বাকি তিনটিতেই হেরেছে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ২৩টি ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে। ঘরের মাঠেই জিতেছে ১৮টি সিরিজ। আর অ্যাওয়ে সিরিজে পাঁচবার সিরিজ জয়ের স্বাদ নিয়ে এসেছে।

তবে পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে টাইগারদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে উইন্ডিজরা। ১৯৯৯ সালের পর থেকে বাংলাদেশ মোট ৩৩ ওয়ানডে ম্যাচে উইন্ডিজের মুখোমুখি হয়েছিল। যেখানে জয়ের পাল্লা ভারী ক্যারিবীয়ানদের দিকে। ২১ ম্যাচে জিতেছিল ক্যারিবিয়ানরা। আর বাংলাদেশের জয় আছে ১০টি তে। বাকি দুটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।

বাংলাদেশ একাদশ:
মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ মিঠুন, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মেহেদী হাসান মিরাজ এবং মোস্তাফিজুর রহমান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের একাদশ:
রোভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), চন্দরপল হেমরাজ, শাই হোপ (উইকেটরক্ষক), ড্যারেন ব্রাভো, মারলন স্যামুয়েলস, শিমরন হেটমেয়ার, রোস্টন চেজ, দেবেন্দ্র বিশু, কেমার রোচ, কেমো পল এবং ফ্যাবিয়ান অ্যালেন।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮)