তিনটি কবিতা ।। তৈমুর খান
[তৈমুর খানের জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট সংলগ্ন পানিসাইল গ্রামে। পিতা জিকির খান ও মাতা নওরাতুন । তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। পরে প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পি এইচ ডি। পেশাগত জীবনে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহশিক্ষক । নব্বই দশকের কবি ও গদ্যকার। তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ - কোথায় পা রাখি, বৃষ্টিতরু, খা শূন্য আমাকে খা, আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা, জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর, একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ, প্রত্নচরিত, নির্বাচিত কবিতা ইত্যাদি । পুরস্কার পেয়েছেন কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার । ঠিকানা : রামরামপুর, শান্তিপাড়া, রামপুরহাট, বীরভূম জেলা, পিন কোড ৭৩১২২৪, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত । ফোন নম্বর- ৯৩৩২৯৯১২৫০ ]
ধর্মের কল
কোথায় বাতাস বইছে ?
ধর্মের কল নড়ছে না আর
দেবতারা সব ভাড়াটে খুনি
খুন করার আগে
ধর্ষণটাও সেরে নিচ্ছে ।
লোভে আর পাপ নেই
শহরে মিছিল আছে
মোমবাতিও বিক্রি হচ্ছে ভালো
সংযমকে ফাঁসি দিয়ে আজ
সুযোগের ঘরে চলো।
রাষ্ট্র আইন গরু-বাছুর হাহাকার
কন্যাশ্রী গোর্খাল্যান্ড আর যা দরকার
পথপ্রান্তে পসরা নিয়ে
বসে আছে কাশ্মীর
বল বীর, বল উন্নত শির
কার জেহাদ ?
উট চলেছে সারি সারি
রামনবমী রামনবমী—
...আমরা সবাই অস্ত্রধারী
কথা যোগাও, ভাষণ আসছে
হাততালির পিঠে হাততালি
ঠাকুর আসছে , ঠাকুর যাচ্ছে
সব ঠাকুরের বাপের বাড়ি কুমোরটুলি ।
বাঁশ ফলছে , বাঁশিও ফলছে
সুরের পাহাড় , দূরের আলো
গাছে গাছে প্রেম ঝুলছে
প্রেমের ভেতর নষ্ট দামুশ
জরিপ করছে পাগলামো ।
অন্তহীন খরার দেশে
ছলকে আসছে জলের রেখা,
কাছাকাছি যাই না কারো
স্বপ্নে হয় রোজই দেখা ।
নীরব পাড়ার পায়রা সবাই
কাশ্মীরকা ফুল
পত্থার কিঁউ মারতে হো
হাম্ তো বিলকুল
প্যারকা বুলবুল ।
খুসবু ছড়িয়ে দিচ্ছে আকাশ
আহা বারাঙ্গনা ওই ললনা
ছলনা তার পড়শি বোঝে ,
ঢপের ভেতর বেঢপ আলোয়
কেউ মুরগি হয় , কেউ মুরগি খোঁজে ।
বিকেলের সস্তা জামায়
গরম পোহাই
এখানে নদীর গাভা নেই ,
বালি তুলছে সভ্যতার গাড়ি
গর্জন আসছে , গর্জন আসছে
যেমন করে ভ্রমর আসে
ফুলবাগানে ফুটলে কুঁড়ি ।
উঁচু শহর , আধখোলা বুক
উন্মুখ উন্মুখ
উঁকি দিচ্ছে সভ্যতার আহ্বান —
বাজি রাখছি একটি জীবন , নষ্ট জীবন
বাজি রাখছি না গাওয়া গান ।
রাষ্ট্র আইন সংবিধান
পুলিশ তাড়ছে , পুলিশকে তাড়ছে
মাঝে মাঝে চর্কি ঘুরছে
পাশা খেলছে সম্রাটগণ ।
মাঝে মাঝে বস্ত্রহরণ
দ্রৌপদীও সেটাই চাইছে ?
গান গাইনি, কাকের কাছে গা-ন থাকে না
প্রহরী নই
জল ঢেলে সুখ পাই ,
আমিও সেই জলহরিণী
চেঁচাতে পারি না, ব্যাঘ্র বসত করে
চেঁচাতে পারি না নিরাপত্তাহীন ঘরে
ব্যগ্র আছাড় মারে ।
স্বপ্নের ঘাস, ঘাসের স্বপ্ন
সবুজ আশারা জাগে
জেগে ওঠে হাঁস, নক্ষত্ররা —
বর্ষা আসতে কত দেরি আর ?
.....ধর্মের কল নড়ে না বাতাসে
...ধর্মের কল মানুষ পেষাই করে
রক্ততেল , রক্তের তেল
মেখে নিক সব দেবতারা —
ধর্মের কল বসিয়ে দিক
সারা পৃথিবী জুড়ে ।
বায়ু প্রবাহ
কঞ্চির বাড়ি । খেজুর পাতার তালাই পাতা ।
আড়ষ্ট সংগীত বাজে । সংগীতে মৃদু নড়ে মাজা ।
দোয়েল আসেনি । ভূগোল শিক্ষিকার ছায়া
পড়ল রাস্তায় । স্মৃতিটুকু কুড়িয়ে রাখো ।
বায়ুমণ্ডলের মানচিত্র বোর্ডে আঁকা ।
ক্ষয় হওয়া মূল্যবোধটুকু খেয়ে নিচ্ছে টিকটিকি ।
কী হবে এঘরে প্রজাপতি ?
মুখ পুড়ছে, মুখ পুড়ছে —
গর্ভে সন্ততি। থুবড়ি হৃদয়ে চারুলতা
আট মাসে পড়ল এবার।
বাবার নাম শূন্য দশক। পোস্টমডার্ন ।
নিবাস অন্ধকার। আদিম চাষবাস ।
চোখ জ্বলছে, চোখ জ্বলছে....
প্রবৃত্তির বিন্যস্ত মার্গে দাঁড়ায় সাহস ।
স্তরগুলি ভেসে উঠছে মহাশূন্যে
প্রতিটি স্তরে বায়ু প্রবাহের ইতিহাস...
সরলরেখার নীচে
সরলরেখার নীচে
........আমাদের কোনও বারুদ জমা নেই
........ঈশ্বরের ধারণায় বাতাবি লেবুর গাছ
....................................... বেড়ে উঠেছে
.........সকালের রোদের ঘ্রাণে কোনও পাখিজন্মের
..........................................................ইতিকথা
চোখ ছুঁয়ে যাচ্ছে শান্ত নদীর ঘুম
......অরণ্যের মুগ্ধ বিশ্বাস —
.....বাতাসে ওড়াচ্ছি কথা
.............কথার নীরব সংযম
আলোর মেয়েরা খেলা করছে
........ছু কিত্ কিত্ খেলাঘর
ঘরে ঘরে নামছে ভ্রমর
......কাঁপছে অদৃশ্য ডানা তার
আমাদের আশ্বাসের জ্বর নেই
পা ফেলছে মাটিতে এবার...
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ডিসেম্বর ২১,২০১৮)