আজ এমপিদের শপথে যাচ্ছে না ঐক্যফ্রন্ট
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী নতুন এমপিরা আজ বৃহস্পতিবার শপথ নেবেন। এর পর শুরু হবে নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া। আজ সকাল ১১টায় সংসদ ভবনের শপথকক্ষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নির্বাচিতদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পাঠানো গেজেট গতকাল বুধবার সংসদ সচিবালয়ে পৌঁছেছে। এর পর সংসদের পক্ষ থেকে শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য বিজয়ীদের কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটভুক্ত শরিক দলগুলোর এমপিদের আজ শপথ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত। তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত এমপি আজ শপথ নিচ্ছেন না বলে জানা গেছে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আজ ইসিতে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এতে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফল বাতিল ও নতুন নির্বাচনের দাবি জানানো হবে।
শপথের বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ জানিয়েছেন, নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি মাত্রই ঢাকায় এসেছেন। জোটের সঙ্গে আলাপ করে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। সংসদ সচিবালয়ের আমন্ত্রণ তার হাতে এখনও পৌঁছায়নি জানিয়ে সুলতান মনসুর বলেন, শপথ নেওয়ার সময় তো আর পেরিয়ে যাচ্ছে না। পরেও নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সাতজনের মধ্যে পাঁচজন বিএনপির ও দু'জন গণফোরামের। মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে জোটের প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং সিলেট-২ আসন থেকে নিজস্ব প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে মোকাব্বির খান বিজয়ী হয়েছেন।
সংসদ নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে শপথ গ্রহণ এবং শপথ নেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সংসদের বৈঠক ডাকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে বা স্পিকারকে না জানালে বিজয়ীদের আসন শূন্য হওয়ার বিধানও রয়েছে।
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ১ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ২৯৮ জনের নাম-ঠিকানাসংবলিত ওই গেজেট প্রকাশের পর নতুন এমপিদের শপথের আয়োজন করতে বুধবার সকালে সংসদ সচিবালয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয় ইসি।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ ভবনের নিচতলায় শপথকক্ষে নবনির্বাচিতদের শপথ পড়াবেন। এর আগে তিনি এমপি হিসেবে নিজের শপথ নিজেই নেবেন। এবারও তিনি রংপুর-৬ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের সদস্যরাই প্রথমে শপথ নেবেন। এরপর ক্রমানুসারে শপথ নেবেন অন্য দলের এমপিরা। শপথ শেষে নতুন সংসদ সদস্যরা সংসদ সচিবের কার্যালয়ের সংরক্ষিত খাতায় সই করবেন এবং একসঙ্গে তাদের ছবিও তোলা হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আজ এমপিরা শপথ নিলেও চলতি দশম সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেই একাদশ সংসদের প্রথম বৈঠক বসবে। সে হিসাবে ২৯ জানুয়ারির আগে নতুন সংসদের প্রথম বৈঠক হচ্ছে না। কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী নতুন সংসদের প্রথম বৈঠকেই স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে। এরপর সংসদের সপ্তম তলায় নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
সূত্র জানায়, সংসদ নেতা পদে শেখ হাসিনা, সংসদ উপনেতা পদে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও স্পিকার পদে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বহাল থাকছেন। তবে তা যাই হোক তা নির্ধারিত হবে সংসদীয় দলের সভায়। এ উপলক্ষে আজ দুপুর ১২টায় আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা আহ্বান করা হয়েছে। এ সভা থেকেই সংসদ নেতা ও সংসদ উপনেতা নির্বাচন করা হবে।
এদিকে, বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। মহাজোটের শরিক হিসেবে ২২ আসনে বিজয়ী জাতীয় পার্টি এবারও সরকারের শরিক হওয়ার বিষয়ে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। একই সঙ্গে তারা সংসদেও প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকতে চায়। তবে দশম সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে এবার একই পদে নাও দেখা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এরশাদের ভাই জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নাম আলোচনায় রয়েছে।
দশম সংসদের নির্বাচন বর্জনকারী দল বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশ নিলেও দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের তুলনায় আসন সংখ্যা কম হওয়ায় তারা প্রধান বিরোধী দল হতে পারছে না। তবে জাতীয় পার্টি পুরোপুরি সরকারের সঙ্গে থাকলে সে ক্ষেত্রে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে পারে।
কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী সংসদের 'বিরোধীদলীয় নেতা' হবেন স্পিকারের বিবেচনামতে যিনি সংসদে 'সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠিত, ক্ষেত্রমতে দল বা অধিসঙ্গের নেতা'। তবে ভারতের পার্লামেন্টে বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে সংসদের মোট আসনের এক-দশমাংশ আসন পাওয়ার বিধান রয়েছে।
২২টি আসন পাওয়া জাতীয় পার্টি দলগতভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকায় এবারও তাদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসার কথা। তবে দলটি এখনও তাদের সিদ্ধান্ত জানায়নি। এ বিষয়ে দলের কো-চেয়ার?ম্যান জি এম কাদের বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন বিরোধী দলে যাবেন কি-না। আজ শপথ নেওয়ার পর দলের পার্লামেন্টারি সভার সদস্যরা বৈঠকে বসবেন। তারপর জাপার বিরোধী দলে যাওয়া ও মন্ত্রিত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
এদিকে ৩০ ডিসেম্বর ২৯৯ আসনে ভোট হয়। তার মধ্যে একটি আসনে কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত থাকায় গতকাল নির্বাচন কমিশনের গেজেটে ২৯৮টি আসনের বিজয়ীদের নাম ও ঠিকানা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ জোটের আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৮টি। বিপরীতে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আসন মাত্র সাতটি।
মহাজোটের শরিকদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫৬টি, জাতীয় পার্টি ২২টি, ওয়ার্কার্স পার্টি তিনটি, জাসদ দুটি, বিকল্পধারা দুটি এবং বাংলাদেশ জাসদ, তরীকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি করে আসন পেয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি পাঁচটি, গণফোরাম দুটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তিনটি আসন পেয়েছেন।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জানুয়ারি ০৩,২০১৯)