ছয় কবির পদাবলি
শাহনাজ পারভীন
শিরোনামহীন
তুমি আমার হার্টবিট বোঝো কীভাবে
কখন সে দু’ সেকেন্ড পজ দেয়-কখন সে দু’সেকেন্ড লাফিয়ে চলে;
কখন বা স্বাভাবিক চলাচল গতি থাকে তার!
যেমন করে আমি বুঝি তোমার কণ্ঠের উষ্মা কিংবা অস্থিরতা
রাগ-
অভিমান-
কিংবা মাদকতা!
জানি, যেমন করে চাঁদ বোঝে তার অমাবস্যার কাল;
সূর্য বোঝে তার সূর্য গ্রহণ- মেঘ বোঝে তার বৃষ্টির আভাস!
জীবন বোঝে তার হাসি, কান্না, আনন্দ, বেদনা, গল্প এবং গান
তাহলে আমরা কি এখন
পৃথিবী আর সূর্যের মত অনিবার্য হয়ে গেলাম!
পাহাড় জানে না তার পাথর কুচির সঠিক হিসাব-
সমুদ্রের জানা নাই স্রোতের ধারণা-
আকাশ বোঝে না তার অনন্ত ঠিকানা!
আসলে আমরাও কখন যেন
পাহাড়-
সমুদ্র-
আর আকাশ হয়ে যাই;
বুঝতে পারি না তাই কাহাকেও কেউ!
সুবর্ণ রহমান ধ্রুব
চৈতালি তোর জন্য
ক.
চৈতালি তোর আলসে নামা দুপুরে
মেঘ নিঙড়ে বৃষ্টি দেবো,মাতাল হাওয়া মাখবো গায়ে,
তোর দুচোখে করবো নেশা, পিঁড়ির পরে শুয়ে।
খ.
চৈতালি তুই সন্ধ্যে হলে পিলসুজে দিস বাতি,
তোর আকাশে কাব্য লিখি-
তোর কাছে হাত পাতি।
গ.
চৈতালি তুই আমার জন্য রাখিস খুলে চুল,
দুঃখ হলে তোর কপালে ছোঁয়াবো আঙুল।
ঘ.
চৈতালি আজ আমার বড্ড মন খারাপের দিন,
হীন হবো হীন- ভুলবো আজি সকল সমীচীন।
ঙ.
মন্দ হবো? দোষ কি তাতে?
দুঃখ দিলাম তোর দুহাতে-
যত্ন করে রাখিস,
আবার যেদিন মানুষ হবো-আড়াল করে দেখিস।
আকাশ মামুন
জার্নি বাইট্রেন
ট্রেনের হুইসেলে জেগে থাকারাত জানে
কী নিদারুণ ভালবাসায় ভেজা ছিল একটি রাত
ট্রেনভর্তি মানুষ যে যার ভাবনায় কর্মে ব্যস্ত গন্তব্যের ছবি একে মনে
কেবল আমাদের ছিল পষ্ট গন্তব্যের তাড়াহীন অবসর, ভালবাসার
চুইয়ে পড়া রাতের নিস্তব্ধতা, জানালায়ঝুলে থাকা অন্ধকার
তারাদের উদয়াস্ত ছুটে চলা, মানুষের টুকটাক আওয়াজ
চাওয়ালার চাপা স্বরে হাক ডাক
চর জাগা যমুনায় বালুদের ক্লান্ত শুয়ে থাকা, জলের সাথে জলের মিতালী
এ সবের কিছুই আমাদের টানেনি
কেবল দুজনার তীব্র সম্মোহনে বুঁদ ছিলাম আমরা
সেই পোয়াতি দিন কবেই গত হয়ে গেছে কোন সেকালে
যমুনায় তারপর কত নতুন চর জেগেছে জলেরগতি পথ আটকে
সেই ট্রেনটাও হয়তো বলাৎকার হয়ে সৈয়দপুরের কারখানায় রঙবদলিয়েছে
তবু সেদিনের সেই ফেলে আসা দিন সেই চাহনি সেই ভালবাসা
বুকের পাটাতনে ট্রেনের মতই ছুটে চলে ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক
তানহিম আহমেদ
সন্ধ্যে বেলার গল্প
হঠাৎ করেই কোনো সন্ধ্যেবেলা ছুটে যেতে পারি
পৌঁছে যেতে পারি—পাল তোলা ডিঙি নৌকোয় চড়ে
পদ্মে ভেজা দু'আজলা জল বুকের কপাটছুঁইয়ে
উধাও হয়ে যেতে পারি স্বেচ্ছা নির্বাসনে বা পথেপথে
রটিয়ে দিতে পারি ভুলে যাওয়া সে বিষণ্ণতার গল্প।
নদীর পাড়ে ফাঁদ পেতে বসে আছে কিছু গাঙচিল
সবুজ ঘাসের বুকে লেগে থাকে সময়ের অস্পষ্ট চিহ্ন
যেন ঘরে ফেরার পথ হারানো পাখির শেষ আকুতি
এতটা বিষাদ থাকেনা বিদ্রোহে—বিষণ্ণতার ক্যাসেটে।
আকাশে ভাসে কার্তিকের অখণ্ড গোলাকার চাঁদ
তাকে ফের আলিঙ্গন করছে একটি দুরারোগ্য ব্যাধিতে
আক্রান্ত রাত—কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসে বেঁচে থাকা সময়
কিংবা মধ্যরাতে বেজে ওঠা এলোমেলো ভায়োলিন।
নির্জীব নিষ্প্রভ সেই শাপলাগুলো হাতে জড়িয়ে
অনায়াসেই ফিরে আসতে পারি এই সন্ধ্যেবেলায়
জন্মবিভক্ত নির্বাক কোনো এক নদীর ন্যায়
আমার স্মৃতিময় গল্পগুলোও এসে এখানে মিশেছে।
রোকেয়া আশা
হৃদয়ের ফসিলের ভ্রান্ত দহন
তারপর দ্যাখো কেমন ভুলভাল মিথ্যেগুলো লিখি
ডায়েরীতেও।
দ্বিধা! দ্বিধা!
ইজম তোমার সত্যি বলার সাহস নেই?
তারপর ক্লোন করি হৃদয়ের ফসিল,
অথচ ভুলে যাই -
হৃদয় সেও সে কবেকার মিথ ;
প্রাগৈতিহাসিক মিথ্যে।
আমাদের একটা দুটো একাদশী কাটে,
সিলিংয়ের কড়ি গুনে করি কঠোর তপস্যা।
চোখ জুড়ে অর্শিয়া দেবীর অভিশাপ লেগেছে,
সব জল তাই জমাট বরফ ;
জল ঝরেনা,
ঝরেনা,
ঝরেনা ।
নিয়তি তোমার কষ্ট হয়না?
একবার ভুল করে হৃদয়ের এক টুকরো ফসিল
গোটা কয়েক শতাব্দীর জন্য নগ্ন করে রেখেছিলাম ;
ফসিল আমার পোড়া কয়লা হায়!
তারা সবাই টুকরো গুলো নিয়ে চলে গেলো -
কেউ সেই কয়লা ভেঙে জ্বালালো মস্ত চুলো,
কমলা আগুনে তাপ আহা!
কী উষ্ণ কী উষ্ণ!
কেউ আমার ফসিল গুলো ভাঙলো আরো টুকরো করে,
তারপর আরো ।
বাকি টুকরো গুলোর খবর আমি পাইনি আর।
আমি আমার অবশিষ্ট হৃদয়ের ফসিল দিয়ে অনেকগুলো নতুন ক্লোন করে রেখেছি ;
এখন কেউ হৃদয় বললে
চন্দন কুমকুমে সাজিয়ে আমার এক টুকরো কয়লা দিই।
অথচ,
দহন গুলো ক্লোনেরও হয়।
তারচে এক কাজ করলে হয় না?
আমরা যারা ভালোবাসি,
সবাই আমরা বরং ভালো থাকবো, কেমন?
মামুন আজাদ
অর্জুন
আর কতো কাল বৃহন্নলা হবে অন্তঃপুরে বন্দি থাকবে
চারিদিকে দেখো জতুগৃহ আজ
দূর্জোধনের সাথে কংশের বসবাস
কোথায় ‘গান্ডীব' নিয়ে এসো বীর
একা তুমি নও, চেয়ে দ্যাখো
এক অচেনা কবি, উচুঁ করে শীর
হতে চায় তোমার রথের সারথি
কেমনে পারো দেখি এড়াতে আজ ব্যাথিতের আর্তি ।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জানুয়ারি ১৩,২০১৯)