সাক্ষাৎকারে এএএ ফাইন্যান্সের এমডি ওবায়দুর রহমান
পুঁজিবাজারের ভিত্তি আরও মজবুত করবে ওয়ালটন
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে আসছে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) যাচ্ছে ওয়ালটন। এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস ২০১৫ অনুযায়ী শেয়ারের দর নির্ধারণের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ রোড শোর আয়োজন করছে। মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আই ব্লকে ওয়ালটনের করপোরেট কার্যালয়ে রোড শো অনুষ্ঠিত হবে। আর ওয়ালটনকে শেয়ারবাজারে আনতে ইস্যু ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছে স্বনাম ধন্য প্রতিষ্ঠান এএএ ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট। আর এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমানের সঙ্গে দ্য রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকমের কথা হয়।
আলাপকালে ওবায়দুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ইস্যু বাংলাদেশের প্রথম মার্চেন্ট ব্যাংক এর লাইসেন্স প্রাপ্ত একটি স্বনামধন্য মার্চেন্ট ব্যাংক যা ১৯৯১ সাল থেকে ক্যাপিটাল মার্কেটে এ ইস্যু ব্যবস্থাপক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত আমরা প্রায় শতাধিক কোম্পানির আইপিও, ক্যাপিটাল রাইজিং, রাইট ইস্যু সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। আমরা ক্যাপিটাল মার্কেটে এ পর্যন্ত ৭০০ বিলিয়ন এর সমপরিমাণ ফান্ড উত্তোলন করেছি। আমাদের এক্ষেত্রে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একটি প্রফেশনাল ম্যানেজমেন্ট টিম কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ভবিষ্যতে আরও ভাল কিছু কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। এক্ষেত্রে আমরা আপনাদের সকলের সহযোগিতা আশা করি।
দ্য রিপোর্ট : ওয়ালটন আর্থিকভাবে যথেষ্ট স্বাবলম্বী হয়েও কেন আইপিওতে আসছে?
ওবায়দুর রহমান : ওয়ালটন আইপিওতে আসার পেছনে অনেক গুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে তাদের কর্পোরেট ভ্যালু বৃদ্ধি করা, ব্র্যান্ডিং এর সম্প্রসারণ ও তাদের কর্পোরেট গভর্ন্যান্স প্র্যাকটিসকে আরও উন্নত করা। আপনারা জানেন যে, ওয়ালটন বর্তমানে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে তাদের পণ্য রপ্তানি করছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে তারা যদি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের উপর আস্থা বাড়বে এবং বিদেশে তাদের পণ্যের বাজার বহুগুণে সম্প্রসারিত করবে যেটা ইতিমধ্যে আমাদের দেশের তালিকাভুক্ত কয়েকটি কোম্পনির রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। এছাড়া ওয়ালটন এটাও চাচ্ছে যে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীকে তাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে লাভবান করা।
দ্য রিপোর্ট : ওয়ালটন আইপিওতে এলে দেশের পুঁজিবাজারে কি ধরনের প্রভাব পড়বে?
ওবায়দুর রহমান : ওয়ালটনের মতো একটি হেভিওয়েট কোম্পানি যদি বাজারে তালিকাভুক্ত হয় তাহলে এটা বাজারে অবশ্যই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যেমন, তাদের তালিকাভুক্তিতে মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন বৃদ্ধি পাবে। বাজারের ভিত্তি আরও মজবুত ও সুসংহত হবে। বিনিয়োগকারীরা পুজিবাজারের দিকে আরও আকৃষ্ট হবে অর্থাৎ আস্থা বাড়বে। সেই সাথে দেশের বিভিন্ন বৃহৎ কোম্পানিগুলো যারা এখনও তালিকাভুক্ত হয়নি তাদের জন্য ওয়ালটনের দেখাদেখি তালিকাভুক্ত হওয়ার আগ্রহ যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করি।
দ্য রিপোর্ট : ওয়ালটন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে বিনিয়োগকারীরা আর্থিকভাবে কি লাভবান হবেন?
ওবায়দুর রহমান: ওয়ালটন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে শেয়াহোল্ডারগণ আর্থিক দিক থেকে বিভিন্নভাবে বেশ লাভবান হতে পারবেন বলে আশা করা যায়। যেমন, যারা ডিভিডেন্ড পাওয়ার উদ্দেশে শেয়ারগুলো ধরে রাখবেন তারা বছর শেষে ভাল হারে ডিভিডেন্ড পাবেন। কারণ, ওয়ালটন প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে নিট মুনাফা অর্জন করছে। তাদের বড় অংকের পুঞ্জিভূত মুনাফাও রয়েছে তাছাড়া দেশে-বিদেশে যেভাবে তাদের পণ্যের বাজার দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে তাতে করে বছর বছর তাদের নিট মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আরা যারা তাদের শেয়ার দীর্ঘ সময় ধারণ করবেন না তারা ওয়ালটন এর আর্থিক সফলতাও সুনামের কারণে শেয়ারগুলো বাজারে ভাল দামে বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন বলে আশা করা যায়।
দ্য রিপোর্ট : ওয়ালটনের রপ্তানি বাণিজ্যের বর্তমান অবস্থা কেমন?
ওবায়দুর রহমান: আপনি জেনে খুশি হবেন যে, ওয়ালটন এর রপ্তানি বাণিজ্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা তাদের পণ্যের উন্নত গুণগত মানের কারণে এশিয়ার বেশ কিছু দেশ, মধ্যপূর্ব ও আফ্রিকা অঞ্চলে রপ্তানি করছে। এছাড়াও ওয়ালটন আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোতে ও তাদের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করছে।
দ্য রিপোর্ট : ওয়ালটনের ভবিষ্যত কতটা সম্ভাবনাময়?
ওবায়দুর রহমান : সামনের দিনগুলোর কথা যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে বলা যায় যে, ওয়ালটন যথেষ্ট সম্ভাবনাময় একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। কারণ, এর পণ্যের গুণগুতমান, ভোক্তাদের ক্রয় সীমার মধ্যে পণ্যের মূল্য, পণ্যের দীর্ঘস্থায়িত্ব ও সেই সাথে আকর্ষনীয় ডিজাইনের কারণে ওয়ালটনের পণ্যের প্রতি দেশে-বিদেশে ক্রেতাদের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাদের পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। এছাড়াও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন সময়ে সহজেই প্রয়োজনীয় মুলধন সংগ্রহ করে ব্যাবসায় সম্প্রসারণ করতে পারবে।
দ্য রিপোর্ট : ওয়ালটনের বর্তমানে আর্থিক সক্ষমতা কত?
ওবায়দুর রহমান : আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, ওয়ালটন উৎপাদনের দিক থেকে যেমন একটি বৃহৎ কোম্পানি, তেমনি এর আর্থিক সক্ষমতার দিক থেকেও এটি অনেক মজবুত একটি কোম্পানি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ তারিখের ত্রৈমাসিক আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী তাদের শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভি) পুনমূল্যায়নসহ ও পুনমূল্যায়ন ছাড়া যথাক্রমে ২০৮ টাকা এবং ১০৩ টাকা, শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হলো ১০.৫৯ টাকা, পুঞ্জিভূত মুনাফার (রিটেইনড আর্নিংস) এর পরিমাণ ২ হাজার ৭৯৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা ও শেয়ার প্রতি নগদ কার্যকর অর্থ প্রবাহের (এনওসিএফপিএস) পরিমাণ ১৭.২০ টাকা । এছাড়াও কোম্পানীটি দীর্ঘমেয়াদের জন্য এএএ রেটিং অর্জন করেছে যা এ পর্যন্ত আমাদের দেশের হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি অর্জন করেছে। এগুলো সবই তাদের মজবুত আর্থিক সক্ষমতা নির্দেশ করে।
দ্য রিপোর্ট : ওয়ালটনের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা কত?
ওবায়দুর রহমান : ওয়ালটন এর বার্ষিক উৎপাদনের ক্ষমতা অনেক। অন্যান্য বিভিন্ন পণ্য ছাড়াও ওয়ালটনের শুধু রেফ্রিজারেটর ও এয়ারকন্ডিশনারের উৎপাদন ক্ষমতা যথাক্রমে ১৫ লাখ এবং ৫০ হাজার পিস। পুঁজিবাজার হতে উত্তোলিত অর্থ দিয়ে তারা তাদের উৎপাদন ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করবে এবং তাদের পণ্যের ক্রমবর্ধনশীল বাজারের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করবে।
দ্য রিপোর্ট : ওয়ালটন কীভাবে পণ্যের বিশ্বমানের ও বহুজাতিক রূপ দিয়েছে এবং কি ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে?
ওবায়দুর রহমান : শুরুতেই ওয়ালটন তাদের অপেক্ষাকৃত কম দামে বিশ্বমানের বাজারে পণ্য সরবরাহ করার ব্যাপারে সচেষ্ট ছিল। তারা তাদের পণ্যকে বহুজাতিক রূপ দেয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া উপযোগী করে তাদের পণ্য সমূহকে তৈরি করছে। পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। তাদের পণ্য সমূহ এবং তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া সবই পরিবেশবান্ধব সবুজ প্রযুক্তিতে অন্তর্গত। পরিবেশের প্রতি এই বিশেষ সচেতনতার কারণে দেশে বিদেশে বিভিন্ন সময় ওয়ালটন পুরষ্কৃত হয়েছে।
দ্য রিপোর্ট : অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে ভবিষ্যতে সফলভাবে টিকে থাকার জন্য ওয়ালটন কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে?
ওবায়দুর রহমান : অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে সফলভাবে টিকে থাকার জন্য ওয়ালটন বরাবরই সচেতন। এজন্য শুরু থেকেই তারা যেটা করছে তা হলো প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে উন্নত গুণগত মান সম্পন্ন পণ্য বাজারে সরবরাহ করা। তারা পণ্যের বৈচিত্র্যের দিকেও বিশেষ নজর দিচ্ছে এবং এরই অংশ হিসেবে তারা প্রোডাক্ট লাইনে বেশ কিছু পণ্য ইতিমধ্যে সংযোজন করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও সংযোজন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সময়ের পরিবর্তনে প্রযুক্তিগত যে পরিবর্তন আসছে সেদিক তারা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখছে এবং সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি গত গুনাগুণ সম্পন্ন পণ্য তৈরী করছে। যদি পণ্যের ডিজাইনের কথা বলা হয় সেক্ষেত্রে আধুনিক ও আকর্ষনীয় ডিজাইনের পণ্য তারা তৈরি করার দিকে লক্ষ্য রাখছে। মোট কথা তারা ক্রেতার এবং বাজারের চাহিদাকে সামনে রেখেই পণ্য উৎপাদন করছে এবং দেশে বিদেশে বাজারজাত করছে। এগুলো সবই তাদের জন্য ভবিষ্যতে বাজার সফলভাবে টিকে থাকতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/জানুয়ারি ১৪, ২০১৯)