দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: মানহানির অভিযোগে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের ওপর নো অর্ডার (কোনও আদেশ নয়) দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত।

এর ফলে মানহানির অভিযোগে শেরপুর, কুড়িগ্রাম, ভোলা, ঝিনাইদহ, রাজবাড়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার, মাগুরা, নড়াইল, চট্টগ্রাম, যশোর ও নেত্রকোনায় দায়ের হওয়া মোট ১৪ মামলায় মইনুল হোসেনের মুক্তিতে আর কোনও বাধা থাকছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ননি 'নো অর্ডার' আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজ উদ্দিন ফকির। অন্যদিকে মইনুল হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. মাসুদ রানা।

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে এই ঘটনায় দায়ের হয়েছে মোট ১৮টি মামলা। এর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন মাসুদা ভাট্টি নিজেই। সে মামলায় আগেই জামিন পেয়েছেন ব্যারিস্টার মইনুল। আর সংক্ষুব্ধ হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় মানহানির মামলা হয়েছে আরও ১৭টি। এগুলোর মধ্যে ৩টির শুনানি এখনও শুরু হয়নি। অপর ১৪টির মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে মইনুল হোসেনকে ছয় মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। মইনুলের পক্ষে করা জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৩ জানুয়ারি বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

পরে খন্দকার মাহবুব হোসেন জানিয়েছিলেন, মানহানির অভিযোগে বিভিন্ন আদালতে দায়ের করা ১৫ মামলায় (ভাট্টির মামলাসহ) ব্যারিস্টার মইনুলকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আরও তিনটি মামলা বিচারের প্রক্রিয়ায় না থাকায় এসব মামলায় তার আর জামিনের প্রয়োজন নেই। এর ফলে তার কারামুক্তিতে আর কোনও বাধা থাকছে না।

এদিকে হাইকোর্টে জামিন পাওয়া ১৫ মামলার মধ্যে বিভিন্ন জেলায় দায়ের করা ১৪টি মামলার জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার আদালতে আবেদন জানায়। কিন্তু চেম্বার আদালত নো অর্ডার আদেশ দেওয়ায় মইনুল হোসেনকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল থাকলো।

২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর মধ্যরাতে বেসরকারি টেলিভিশন ‘একাত্তরে’ টক শোতে মাসুদা ভাট্টি লাইভে যুক্ত হওয়া ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে প্রশ্ন করেন- ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আলোচনা চলছে, আপনি সদ্য গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে এসে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করছেন কি না?’

মইনুল হোসেন এ প্রশ্ন শুনে উত্তেজিত হন এবং বলেন ‘এমন প্রশ্ন করায় আপনাকে আমি চরিত্রহীন বলে মনে করছি।’ তার এমন মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দেয় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন।

এরপর রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার বিরুদ্ধে মানহানি ও ডিজিটাল আইনে মামলা হয়।

রংপুরে করা মানহানির এক মামলায় ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসা থেকে মইনুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়।

এরপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পরে আদালতে আনা হলে বিচারক তাকে জামিন না দিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে রংপুরের কারাগারে পাঠানো হয়।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জানুয়ারি ১৭, ২০১৯)