কুমিল্লাকে হারিয়ে রাজশাহীর জয়
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিপিএল-২০১৯ এ রীতিমতো উড়ছিল ঢাকা ডায়নামাইটস। তাদের জয়রথ থামিয়েছিল রাজশাহী কিংস। এবার টুর্নামেন্টে জয়ের ধারায় থাকা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে হারাল বরেন্দ্রভূমির দলটি।
কাগজে কলমে মোটেও অভিজ্ঞ দল নয় রাজশাহী। একেবারে তারুণ্যনির্ভর আনকোরা দল। সেই দলটিই দিচ্ছে একের পর এক বিস্ময় উপহার। তবে সূচনাটা মোটেও ভালো হয়নি উত্তরবঙ্গের দলটির। শুরুতেই মেহেদী হাসানের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন শাহরিয়ার নাফীস। প্রাথমিক ঝাটকা কাটিয়ে ওঠার আগেই লিয়াম ডসনের বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন মিরাজ। সেই রেশ না কাটতেই তার দ্বিতীয় শিকারে মার্শাল আইয়ুব পরিণত হলে চাপে পড়ে রাজশাহী।
পরে রায়ান টেন ডেসকাটকে নিয়ে চাপ কাটিয়ে ওঠেন লরি ইভানস। প্রথমে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেন তারা। ধীর-লয়ে হেঁটে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে তোলেন। ক্রিজে সেট হলে ছোটান স্ট্রোকের ফুলঝুরি। তাতে দুরন্ত গতিতে এগোতে থাকে বরেন্দ্রভূমির দলটি।
পথিমধ্যে ফিফটি তুলে নেন ইভানস। এরপর রূদ্রমূর্তি ধারণ করেন তিনি। শাসাতে থাকেন কুমিল্লা বোলারদের। তার আগুনে ব্যাটিংয়ের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেন আফ্রিদি, সাইফ, রিয়াজরা। রীতিমতো ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা হয় তাদের। ওদের ওপর চালান স্টিম রোলার। এগোতে থাকেন সেঞ্চুরির দিকে। অবশ্যম্ভাবীরূপে তিন অংক স্পর্শ করেন এ ইংলিশ। শেষ পর্যন্ত ৬২ বলে ৯ চার ও ৬ ছক্কায় ১০৪ রানের হার না মানা বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন তিনি। এবারের বিপিএলে এটিই প্রথম তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারের ইনিংস।
ইভানসকে দুর্দান্তভাবে সঙ্গ দেয়া ডেসকাটও কম যাননি। সতীর্থের দেখানো পথ অনুসরণ করে বইয়ে দেন রানের নহর। তুলে নেন বিধ্বংসী ফিফটি। ৪১ বলে ২ চারের বিপরীতে ৩ ছক্কায় ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
প্রথম ১০ ওভারে ৩ উইকেটে ৫০ রান তুলেছিল রাজশাহী। ইভানস-ডেসকাট তাণ্ডবে শেষ ১০ ওভারে উঠেছে ১২৬। তাদের ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যায় কুমিল্লা বোলিং লাইন। শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটেই ১৭৬ রান তুলে ল্যান্স ক্লুজনারের দল। এ পথে রেকর্ডও গড়েছেন তারা। বিপিএল ইতিহাসে চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের নজিরবীহিন জুটি গড়েছেন দুই বিদেশি রিক্রুট। সব মিলিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
রান তাড়া করতে নেমে কুমিল্লার প্রায় সবাই ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো করেছেন। তবে কেউই নিজেদের ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। রানরেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাটিং করেছেন তামিম-ইমরুলরা। কিন্তু নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিয়ে ভিক্টোরিয়ানসদের কখনও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ দেননি মোস্তাফিজুর রহমান, কামরুল ইসলাম রাব্বিরা।
উদ্বোধনী জুটিতে ৩৭ রান যোগ করেন তামিম ও এনামুল হক। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে রাব্বিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন তামিম। ফেরার আগে ২টি করে চার-ছক্কায় ২৫ রান করেন ড্যাশিং ওপেনার। এরপর ২৬ রান করে ফেরেন এনামুল। স্কোর বড় করতে পারেননি শামসুর রহমান, জিয়াউর রহমান কিংবা অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।
ফলে দায়িত্ব গিয়ে বর্তায় শেষের তিন স্বীকৃত হার্ডহিটার লিয়াম ডসন, থিসারা পেরেরা ও শহীদ আফ্রিদির কাঁধে। তারাও কেউ দাঁড়াতে পারেননি। ডসন পুরোপুরি ব্যর্থ হন। পেরেরা করেন ১৭ রান। আর ১৯ রান আসে আফ্রিদির ব্যাট থেকে। শেষদিকে মূলত তাকে বোতলবন্দি করে রাখেন মোস্তাফিজুর রহমান। কাটার মাস্টারকে একদমই স্বচ্ছন্দে খেলতে পারেননি পাকিস্তানের ছক্কা তারকা।
এতে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে রাজশাহীর। তুলির শেষ আঁচড়টিও দেন মোস্তাফিজ। মেহেদি হাসানকে তুলে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন। দলের হয়ে ৩ ওভারে মাত্র ১০ রান খরচ করে ৪ উইকেট নেন রাব্বি। কায়েস আহমেদ ও রায়ান টেন ডেসকাট নেন ২টি করে উইকেট। আরাফাত সানি ও মোস্তাফিজুর রহমানের ঝুলিতে ভরেন ১টি করে উইকেট। বিপিএলকে প্রথম সেঞ্চুরি উপহার দেয়ায় ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে ইভানসের হাতে।
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জানুয়ারি ২১, ২০১৯)