রংপুরের রানের চাপায় পিষ্ট চিটাগং
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে হোম গ্রাউন্ডে এসে শুরুতেই হার দেখল চিটাগং ভাইকিংস। রংপুর রাইডার্সের রেকর্ড ২৩৯ রানের চাপ নিতে পারেনি মুশফিকুর রহিমের দল। ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ উইকেটে ভাইকিংস ব্যাটসম্যানরাও জ্বলেছেন; তবে বিচ্ছিন্নভাবে। গড়ে ওঠেনি বড় কোনো জুটি। ইয়াসির আলি রাব্বি ছাড়া কেউই খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। ফলে ২০ ওভার খেলেও ১৬৭ রানের বেশি করতে পারেনি বন্দরনগরীর দলটি।
আর ৭২ রানের বড় ব্যবধানে ম্যাচ জিতে সেরা চারের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন রংপুর। ৯ ম্যাচে মাশরাফীদের পয়েন্ট ১০। হেরেও চিটাগংয়ের খুব ক্ষতি হচ্ছে না। এক ম্যাচ কম খেলেও (৮ ম্যাচ) পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষেই (১২ পয়েন্ট) থাকছে তারা। তবে জিতলে নিশ্চিত হয়ে যেত প্লে-অফ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: রংপুর রাইডার্স-২৩৯/৪, চিটাগং ভাইকিংস-১৬৭/৮
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সব উইকেটেই সবুজ ঘাসের আস্তরণ। তার মধ্যে থেকে চার নম্বর উইকেটটি রাখা হয় বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম দুটি ম্যাচের জন্য। ঘাস থাকলেও বল সহজেই এসেছে ব্যাটে। দ্রুতগতির আউটফিল্ড হওয়ায় আত্মবিশ্বাস নিয়েই শট খেলতে পেরেছেন ব্যাটসম্যানরা। দুপুরের ম্যাচে শুরুতে উইকেট হারিয়ে সিলেট সিক্সার্স ১৮০ রান তুলে স্পষ্ট করেছেন সেটি। এমন উইকেটে টস জিতে বোলিং বেছে নিয়েই যেন ম্যাচটা হাতছাড়া করলেন মুশফিক!
সাগরিকায় গ্যালারি ভরা দর্শক সমর্থন নিয়েই ২৪০ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেছিল চিটাগং। তবে লক্ষ্যটা খুব বড় হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত নাগাল পাওয়া যায়নি।
মোহাম্মদ শাহজাদ ১২ বলে ২০ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে ফেরেন সাজঘরে। তিনে নামা সিকান্দার রাজা ফিরে যান ৩ রান করে। অপর ওপেনার ইয়াসির ও মুশফিক মিলে সচল রাখেন রানের চাকা। মুশফিক প্রথম ৭ বল মোকাবেলায় মারেন তিন ছক্কা। পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভারে আসে ৬৪ রান।
পরের ওভারে ইয়াসিরকে একা করে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান মুশফিকও। ভাইকিংস অধিনায়ক ১১ বলে করেন ২২ রান। তারপরে আর কেউ দাঁড়াতে পারেননি। নাজিবউল্লাহ জাদরান (১), মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (১৪) করে ছাড়েন ২২ গজ।
ইয়াসিরের একার লড়াই থামে মাশরাফীর করা ইনিংসর ১৬তম ওভারের পঞ্চম বলে। এ ডানহাতি পেসারের ছোড়া স্লো-ফুলটস তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে ওয়াইডিশ মিডঅফে ক্যাচ দেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তার ক্যারিয়ারসেরা ৭৮ রান আসে ৪৮ বলে। তরুণের ইনিংসটিতে ছিল ৩টি ছয় ও ৬টি চার।
প্রতিপক্ষের ভেন্যুতে খেলতে এসে টস হেরেও আগে ব্যাটিং উপহার পেয়ে তাণ্ডব চালান অ্যালেক্স হেলস ও রাইলি রুশো। তাদের জোড়া সেঞ্চুরিতে বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৩৯ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় রংপুর।
বিপিএলে প্রথম তো বটেই, টি-টুয়েন্টিতে এর আগে মাত্র দুবার এক ইনিংসে দুই সেঞ্চুরি দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। ২০১১ সালে মিডলসেক্সের বিপক্ষে প্রথমে এই কীর্তি গড়েন কেভিন ও’ব্রায়ান ও হামিস মার্শাল। দ্বিতীয়টি এসেছে বিরাট কোহলি ও এবি ডি ভিলিয়ার্সের কল্যাণে, গুজরাট লায়ন্সের বিপক্ষে ২০১৬ সালে।
ক্রিস গেইলকে থামানো গিয়েছিল শুরুতেই, তবে ইংলিশ ও প্রোটিয়া ব্যাটিংয়ের যুগলবন্দীর কাছে অসহায় হয়ে পড়েন ভাইকিংস বোলাররা।
হেলস ২৩ বলে যখন ফিফটি পেলেন তার সঙ্গী রাইলি রুশোর সংগ্রহ মাত্র ৫ রান! মাঠের চারিদিকে ব্যাট চালিয়েছেন হেলস। ১১ চারের সঙ্গে মেরেছেন ৫টি বিশাল ছক্কা। ৪৭ বলে ১০০ করার ঠিক পরের বলে আউট হয়ে ক্রিজে রেখে যান রুশোকে।
হেলস তাণ্ডব চলায় শুরুতে রয়েসয়েই খেলছিলেন এখন পর্যন্ত বিপিএলে সর্বোচ্চ রান তোলা রুশো। পরে নিজেও শামিল হন তাণ্ডবে। একদিকে হেলস অন্যপ্রান্তে রুশোর ব্যাটিং ঝড়ে তখন ক্লান্ত মুশফিকবাহিনী।
২৯ বলে ফিফটি পাওয়ার পর আর থামানো যায়নি রুশোকে। হেলস আউট হলেও নিজের মতো ব্যাটিং করে গেছেন এ সাউথ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান। ৫১ বলে শতক তুলে অপরাজিত থেকেছেন ঠিক ১০০ রানে। এই একশো রানের মধ্যে ৮০ রানই বাউন্ডারি দিয়ে তুলেছেন রুশো। ৮ চারের সঙ্গে বল উড়িয়ে মাঠের বাইরে পাঠিয়েছেন ছয়বার।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জানুয়ারি ২৬,২০১৯)