দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বায়িং হাউজে স্মার্ট মেয়েদের চাকরি দিয়ে তাদের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা করানো হয়। এক সময় এসব মেয়েরা পারদর্শী হয়ে উঠলে তাদের বিদেশে পাঠিয়ে মাদক চোরাচালানে ব্যবহার করা হয়। বললেন র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।

মঙ্গলবার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি।

গত ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কায় ৩০৪ কেজি হেরোইন ও ৫ কেজি কোকেনসহ ৩ বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর এ ঘটনার তদন্তে গঠিত টাস্কফোর্স তদন্ত শুরু করে। পাশাপাশি ছায়াতদন্ত করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ৫ সক্রিয় সদস্যকে আটক করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব।

আটকরা হলেন- ফাতেমা ইয়াসমিন তানিয়া (২৬), আফসানা মিমি (২৩), সালমা সুলতানা (২৬), শেখ মোহাম্মদ বাঁধন ওরফে পারভেজ (২৮) ও রুহুল আমিন ওরফে সায়মন (২৯)।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ট্রাক্সফোর্সের অভিযানে গত ১২ জানুয়ারি (শনিবার) আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে চয়েজ রহমান নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করা হয়। সেই মামলার ছায়া তদন্তে নামে র‌্যাব।

এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার (২৮ জানুয়ারি) রাজধানীর বিমান বন্দরের পাশে কাউলা এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯৭০ পিস ইয়াবা, বৈদেশিক মুদ্রা ও পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়।

মুফতি মাহমুদ জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে। বাংলাদেশে তাদের নিয়ন্ত্রক মো. আরিফ উদ্দিন। আরিফ উদ্দিনের আল-আমিন ফ্যাশন বায়িং হাউস নামে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই ব্যবসার অন্তরালে আন্তর্জাতিক মাদক সিন্ডিকেটের সাথে তিনি জড়িত।

গ্রেফতারদের জানামতে আরিফ উদ্দিনের নিয়ন্ত্রণে মাদক সিন্ডিকেটে বাংলাদেশি ১৫-২০ জন যুক্ত রয়েছে। এই সিন্ডিকেট দেশের অভ্যন্তরেও মাদক (ইয়াবা) ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে জানতে পেরেছে র‌্যাব।

তিনি আরও বলেন, আটক মিমি বিভিন্ন জায়গায় ডিজে নাচ ও গান করতেন। একটি বেসরকারি চ্যানেলে কাজ করতে গিয়ে আটক সায়মনের সঙ্গে পরিচয় হয়। এবপর সায়মনের মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক মাদকপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। শ্রীলঙ্কার যে বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ বাংলাদেশি সূর্যমনিকে আটক করা হয়, সে বাড়িটি মিমির নামে ভাড়া নেওয়া ছিলো। বাসাটি সাধারণত সিন্ডিকেটের সেন্টার হিসেবে কাজ করতো। যেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মাদকগুলো স্থানীয় বিস্কুট ও কেকের প্যাকেটে করে সাপ্লাই করা হতো।

মিমি ২০১৭ সালে আরিফের সঙ্গে প্রথম মালয়েশিয়া যান এবং সেখান থেকে শ্রীলঙ্কা যান। ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো শ্রীলঙ্কা গেলে আরিফ তাকে সূর্যমনির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

আটক সালমা সুলতানা ২০১০ সালে এইচএসসি পাস করে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ শুরু করেন। এ সময় তানিয়ার সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে রেহানার সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর এই চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং বেশ কয়েকবার ভারত, চীন ও শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করেন।

আটক সায়মন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে কাজ করেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। এই সুবাদে বিভিন্ন মেয়েদেরকে প্রলোভন দেখিয়ে তিনি এই চক্রের সঙ্গে জড়াতেন।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জানুয়ারি ২৯, ২০১৯)