সাক্ষাৎকার-প্রথম কিস্তি
বিশ্বকাপ জেতার মতো সবই আছে আমাদের: মাশরাফি
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ডয়চে ভেলের মাশরাফির এ সাক্ষাৎকারটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এতে অনেক কিছু উঠে এসেছে। রেডিসন ব্লু হোটেলে দেওয়া সাক্ষাত্কারটি বিশ্বকাপ স্বপ্ন-সম্ভাবনা-প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয়ে ছড়িয়েছে আরো অনেক দিকে৷ মাশরাফির অধিনায়কত্ব, মাশরাফির বোলিং, মাশরাফির ইনজুরি, মাশরাফির রাজনীতি– আরো কত কী! তাই দ্য রিপোর্টের পাঠকদের জন্য গুরুত্ব বিবেচনায় এখানে পত্রস্থ করা হচ্ছে। এটি তিন কিস্তিতে ছাপা হবে। পড়ুন প্রথম কিস্তি।
২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে৷ ২০১৯ বিশ্বকাপে পরের ধাপে যাবার ব্যাপারে অধিনায়ক হিসেবে আপনি কতটা আশাবাদী?
মাশরাফি বিন মোর্তজা : এবার তো কোয়ার্টার ফাইনাল নেই; একেবারে সেমিফাইনাল৷ বাকি ৯ দলের সবার সঙ্গে ম্যাচ খেলতে হবে৷ আমি অবশ্যই আশাবাদী৷ খুব কঠিন কাজ, তবে আশাবাদী৷ আমাদের দলটি ভালো৷ আশা না করার তাই কোনো কারণ নেই৷
কতটা আশাবাদী? বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিততে পারে?
-অবশ্যই পারে, পারবে না কেন? বিশ্বকাপ জেতার জন্য যে মানসিক শক্তি প্রয়োজন, তা এ দলের একটু কম আছে৷ কয়েকটি ফাইনালের হার দেখলে হয়তো তা বুঝবেন৷ ওই মানসিক শক্তিটা খুব দরকার৷ সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের একটা টুর্নামেন্ট যদি আমরা জিততে পারতাম, তাহলে আরো সাহসের সঙ্গে বিশ্বকাপ জয়ের কথা বলতে পারতাম৷
তাহলে কি বলতে চাইছেন, ক্রিকেটীয় দক্ষতার দিক থেকে বিশ্বকাপ জয়ের সামর্থ্য এখনকার বাংলাদেশ দলের রয়েছে?
-আমি অবশ্যই তা মনে করি৷
আপনার এত আত্মবিশ্বাসের কারণ কী?
-কারণ, আমাদের দলে কী নেই! বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব আমাদের দলে ৷ ওয়ানডের বিশ্বসেরা একাদশে সম্প্রতি মুস্তাফিজ সুযোগ পেয়েছে ৷ ইনজুরিতে না পড়লে তামিম ২০১৮ সালে এক হাজার রান করতে পারত ৷ মুশফিক টেকনিক্যালি বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ৷ ফিনিশিংয়ে রিয়াদ আছে ৷ বোলিংয়ে আমার অনেক বছর খেলার অভিজ্ঞতা; রুবেলও ১০ বছর ধরে খেলছে ৷ আমাদের নেই– এমন কিছু নেই ৷ যেটির অনুপস্থিতি, তা হলো ওই মানসিক শক্তি৷
গত বছর বাংলাদেশ যে দুটি ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছে, সেই ত্রিদেশীয় সিরিজ ও এশিয়া কাপের মধ্যে কোনোটির শিরোপা জিতলে কি আপনার বিশ্বাস অনেক বেশি থাকত না?
-শুধু আমার না, শুধু সব ক্রিকেটার না, সব সমর্থকও এটি বিশ্বাস করত যে, এ পর্যায়ের ট্রফি জিততে পারলে বিশ্বকাপও জিততে পারবে বাংলাদেশ৷ ধরুন, ভারতকে যদি এশিয়া কাপের ফাইনালে হারাতাম, তাহলে কী হতো৷ ভারত তো বিশ্বকাপ জিতেছে, এবারও অন্যতম ফেভারিট৷ ওদের সঙ্গে জিততে পারলে সবার আত্মবিশ্বাস থাকত অন্যরকম৷
বিশ্বকাপের ফরম্যাট এবার বদলেছে৷ গ্রুপ পর্ব নেই, বরং ১৯৯২ আসরের মতো সবাই সবার সঙ্গে খেলবে৷ এটি কি বাংলাদেশের জন্য ভালো হলো ,নাকি আরো কঠিন হলো?
-বলা যাচ্ছে না৷ গ্রুপে তিন-চারটি কিংবা গতবার যেমন ছয়টি ম্যাচ খেলেছি, তখন মাথায় রাখতে হয় যে, পা হড়কানো যাবে না৷ এবারের ফরম্যাটে সুবিধা হলো, একটা খারাপ ম্যাচ গেলেও ফিরে আসার সুযোগ থাকবে৷ রানরেটের ব্যাপারও আছে৷ আসলে প্রথম ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ৷ একইসঙ্গে যেটি বললাম, মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকাটা জরুরি৷
প্রথম লক্ষ্য তো নিশ্চয়ই সেমিফাইনাল খেলা৷ তা পূরণের জন্য ৯ ম্যাচের মধ্যে কয়টি জেতার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বকাপে যাবেন?
-হিসেব বলে, পাঁচ ম্যাচ জিতলে সেমিফাইনাল খেলার সুযোগ থাকবে ৷ অবশ্যই প্রতিটি ম্যাচ জয়ের জন্য মাঠে নামবো ৷ তবে আমার কাছে মনে হয়, সেমিতে যাওয়ার জন্য যে কয়টা ম্যাচ জেতা দরকার, ততটা জিতলেই যথেষ্ট৷
বাংলাদেশ এখন ওয়ানডেতে সব দলকে হারানোর সামর্থ্য রাখে৷ তবু যদি বলেন, কোন পাঁচটি দলকে টার্গেট করছেন?
-এভাবে বলা কঠিন ৷ আমাদের প্রথম ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৷ টার্গেট করতে হবে, আমরা যেন ওদের বিপক্ষে জিততে পারি ৷ যদি টার্গেট করে যাই যে, ‘একে-ওকে হারাবো’ তাহলে সে ম্যাচগুলোয় বেশি মনোযোগ থাকবে আর অন্যগুলোয় কোনো সুযোগই থাকবে না৷ এটি বাড়তি চাপ ৷ এ কারণেই আমি ম্যাচ ধরে ধরে এগোনোর পক্ষে ৷ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ জয়ের লক্ষ্য নিয়েই তাই আমাদের যাওয়া উচিত ৷ আর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ জিতলে বাকি সব সহজ হয়ে যাবে ৷ কারণ, ক্রিকেটে জয় এমন এক জিনিস, যা আগের-পরের সব বদলে দলকে ভালো এক জায়গায় দাঁড় করায় ৷
এটা কি অনেকটা ২০০৭ বিশ্বকাপের মতো? সেবার প্রত্যাশা এবারের মতো বেশি ছিল না, তবে ভারতের বিপক্ষে প্রথম খেলায় জয় পাবার পর পুরো দলের চেহারাই বদলে যায়...
-বলতে পারেন৷ এবার আমরা প্রথম ম্যাচ খেলেছি টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা এবং ফেভারিট দলের সঙ্গে৷ নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো সম্ভব৷ ওই মানসিকতা নিয়েই বিশ্বকাপে যেতে হবে৷ আমার মনে হয়, বাকি আট ম্যাচের লক্ষ্য এখন ঠিক না করে প্রথম ম্যাচে জয়ের লক্ষ্য স্থির করা দরকার, কেননা, অনেক সময়ই প্রথম ম্যাচ পুরো টুর্নামেন্টের ছন্দ ঠিক করে দেয়৷
কিছু দিন পর নিউজিল্যান্ড সফরে যাবে বাংলাদেশ৷ এটি বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে কতটা সাহায্য করবে?
খুব সাহায্য করবে, কেননা, নিউজিল্যান্ডের উইকেট অনেকটা ইংল্যান্ডের মতোই৷ বিপিএলে আমাদের রংপুর রাইডার্সে ইংল্যান্ডের যেসব ক্রিকেটার রয়েছেন, সেই রবি বোপারা, অ্যালেক্স হেলসের কাছ থেকে কিছু তথ্য নিলাম৷ ওরা বলেছে, যদি ভালো অবস্থায় টুর্নামেন্টের পরের অংশে ঢুকতে পারি, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে, কেননা ওই সময় নাকি ইংল্যান্ডের উইকেটে বল কিছুটা স্পিন ধরা শুরু করবে৷
নিউজিল্যান্ড সফরে আপনার প্রত্যাশা কেমন? সেখানে চারটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে যে ২০টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ, হেরেছে সবগুলোতে৷ ২০১৫ বিশ্বকাপের স্বাগতিকদের বিপক্ষের ম্যাচেও তাই৷ সামনের সফর তাই কতটা কঠিন হবে?
-আমরা নিজেদের সামর্থ্যের সেরা জায়গায় আসার পর তো নিউজিল্যান্ডে খুব বেশি খেলিনি৷ সেখানে খেলা চ্যালেঞ্জিং অবশ্যই৷ হয়তো ভারত ছাড়া অন্য সব দলই নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ধোঁকে৷ তবে আমি মনে করি, বিশ্বকাপের আগে ওখানে খেলার চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্য ভালো৷ (চলবে)
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জানুয়ারি ৩১,২০১৯)