আলীমের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
আলীমের বিরুদ্ধে আনীত ১৭ অভিযোগ হচ্ছে—
অভিযোগ-১: একাত্তরের ২০ এপ্রিল আলীম পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার দমদমা গ্রামের মেহের উদ্দিন চৌধুরীর (মৃত) বাড়িতে হামলা চালায়। যার ফলে তিনি দেশান্তর হতে বাধ্য হন।
অভিযোগ-২: মুক্তিযুদ্ধকালে ২৬ এপ্রিল আলীম মেজর আফজাল ও অন্যদের নিয়ে কড়ই কাঁদিপুর এলাকার হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামের বাড়িঘরে লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের পর ৩৭০ জন নিরস্ত্র হিন্দুকে হত্যা করে।
অভিযোগ-৩: আলীমের দেয়া তালিকা অনুসারে একাত্তরের ১৮ জুন রিয়াজ মৃধা পাকিস্তানি সেনাদের একটি তালিকা দেন। সে অনুসারে ২৮ জনকে চিহ্নিত করা হয়। তাদের মধ্যে ২২ জন নিহত হন, বাকিরা পালিয়ে যান।
অভিযোগ-৪: একাত্তরের মে মাসে আলীমের নির্দেশে কোকতারা, ঘোড়াপা, বাগজানা, কোটাহারা গ্রামের ১৯ জন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোককে হত্যা করে।
অভিযোগ-৫: মে মাসের ৯ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে আলীমের নির্দেশ ও উসকানিতে পাগলা দেওয়ান গ্রামে ৬৭ জন নিরস্ত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে কবর দেয়া হয়।
অভিযোগ-৬: আলীমের নির্দেশে একাত্তরের মে মাসের প্রথম দিকে আক্কেলপুরের ১০ জন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে ভারত যাওয়ার পথে আটক করা হয়। পরে তাদের কোকতারা গ্রামের বকুলতলা এলাকায় নয়জনকে হত্যা করা হয়। মোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তি পালিয়ে যান।
অভিযোগ-৭: ২৬ মে আলীমের পরামর্শ ও নির্দেশ অনুসারে রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার নওদা গ্রামের চারজন নিরস্ত্র মানুষকে কালী পুকুরের পাশে নিয়ে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ-৮: একাত্তরের মে মাসের প্রথম দিকে আলীম পাকিস্তানি মেজর আফজালকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষেতলাল থানার উত্তরহাট শহর নামের একটি স্থানে পাঁচ-সাতশ জনের একটি সমাবেশে যান। সেখানে তিনি বলেন ‘হিন্দুদের ক্ষমা করা যাবে না। এদের যা পাও লুট করে নাও’। এই উসকানিমূলক বক্তব্যের পরে মে মাসের শেষদিকে হিন্দুপল্লী, উত্তরহাট শহর, হারুনজাহাট এলাকায় হিন্দু জনগণের ওপর হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। ওই এলাকা থেকে ১০ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে ধরে শাওনলাল বাজলার গদিঘরে স্থাপিত শান্তি কমিটির কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হলে আলীম তাদের হত্যার নির্দেশ দেন। পরে ওই ১০ জনকে খঞ্জনপুর কুঠিবাড়ি ঘাট এলাকায় নিয়ে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ-৯: একাত্তরের ১৪ জুন আলীম মেজর আফজালের সঙ্গে পরামর্শ করে ১৫ যুবককে পশ্চিম আমাত্রা গ্রামে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করে। পরে তাদের গণকবর দেয়া হয়।
অভিযোগ-১০: জুনের শেষ দিকে আলীমের সিদ্ধান্ত অনুসারে রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা ২৬ ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে ধরে এবং একটি ট্রাকে করে জয়পুরহাট রেলস্টেশনে নিয়ে যায়। এ সময় আলোখেলা স্টুডিওর মালিক মোতাসিম বিল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে আলীম নিয়ে আসেন এবং তিনি ওই ২৬ জন আটক ব্যক্তির সঙ্গে আলীমের ছবি তোলেন। পরে তাদের জয়পুরহাট কলেজে নিয়ে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ-১১: একাত্তরের জুনে আলীমের নির্দেশে গাড়োয়ালসহ ১৯ ব্যক্তিকে খঞ্জনপুর কুঠিবাড়ি সেতুর কাছে গিয়ে হত্যা করে মৃতদেহ নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
অভিযোগ-১২: ২৪ জুলাই আলীমের নির্দেশ অনুসারে স্থানীয় রাজাকাররা দেবীপুর কাজীপাড়া থানা থেকে ডা. আবুল কাশেমকে ধরে আনে। ২৬ জুলাই তাকে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ-১৩: সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানি সেনারা জয়পুরহাট ডিগ্রি কলেজ থেকে ১১ জন ছাত্রকে ট্রাকে করে ধরে নিয়ে বারঘাটি পুকুরের দক্ষিণ পাশে নিয়ে আলীমের নির্দেশে ও পরামর্শে পাকিস্তানি সেনারা গুলি করে হত্যা করে।
অভিযোগ-১৪: একাত্তরের ৭ অক্টোবর আলীমের নির্দেশে পাহাড়পুরে আহত মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল করিমসহ আরও দুজনকে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ-১৫: মুক্তিযুদ্ধকালে জয়পুরহাট চিনিকলে স্থাপিত সেনাক্যাম্পে ২৫ জন ব্যক্তিকে ২৫ অক্টোবর থেকে আটকে রাখা হয়েছিল। তাদের আট রাত আটকে রাখার পর আলীমের নির্দেশে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ-১৬: আলীমের পরামর্শ অনুসারে পাকিস্তানি সেনারা পাঁচবিবি থানার সোলায়মান আলী ফকির, আবদুল খালেক, আবদুস সামাদ ও আফতাব হোসেন দেশান্তরি করতে বাধ্য করেন।
অভিযোগ-১৭: আলীম ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্টের ১৭ উইংয়ের সুবেদার মেজর জব্বল হোসেনকে হত্যা করেন।
(দিরিপোর্ট২৪/ওএস/জেএম/অক্টোবর ০৯, ২০১৩)