বাংলাদেশ ২১১ রানে অলআউট
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে টানা তৃতীয় ইনিংসে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি গড়েছেন তামিম-সাদমান। কিন্তু পরের ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। যে কারণে বিনা উইকেটে ৭৫ রান থেকে মাত্র ২১১ রান তুলতেই অলআউট হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ, পুরো ইনিংসে খেলতে পেরেছে মাত্র ৬১ ওভার। প্রথম ম্যাচের মতোই এ ম্যাচেও টাইগারদের যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে নেইল ওয়াগনার ও শর্ট বোলিং।
বৃষ্টির কারণে প্রথম দুইদিন টসই হয়নি ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে। তৃতীয় দিন নির্ধারিত সময়ের আধঘণ্টা আগে যখন হলো টস, তখন সহায় হলেন না ভাগ্যদেবী, হাসলেন নিউজিল্যান্ডের পক্ষে। দুইদিন বৃষ্টি ও কভারের নিচে থাকা উইকেটে টসে জিতে বোলিং নিতে এক মুহূর্ত ভাবেননি কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।
ম্যাচের দ্বিতীয় দিনই দেখা গিয়েছিল উইকেট পুরোটাই সবুজ, ঘাসের আধিক্য এত বেশি যে আউটফিল্ডের সঙ্গে উইকেটকে আলাদা করা বেশ মুশকিল হয়ে পড়ে। এমন পিচে ট্রেন্ট বোল্ট এবং টিম সাউদির রুদ্রমূর্তি ধারণের উদাহরণ খুঁজতে খুব বেশি দূরে যেতে হবে না। তাই বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সাদমান ইসলাম অনিকের জন্য এ দুই পেসারের প্রথম স্পেল সামাল দেয়া ছিলো বড় দায়িত্ব।
দুই টাইগার ওপেনারই তা করেছেন নিপুণতার সঙ্গে। সাউদি-বোল্টের শুরুর স্পেল সামলেছেন পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে। প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশ করে বিনা উইকেটে ৪২ রান, বোল্টের ৫ ওভারেই আসে ৩০ রান। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে প্রথম দশ ওভারে মোট ৮টি চারের মার আসে তামিম-সাদমানের ব্যাট থেকে।
হ্যামিল্টনে সিরিজের প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি গড়েছিলেন এ দুই বাঁহাতি ওপেনার। ওয়েলিংটনের প্রথম ইনিংসেও বজায় থাকল ধারাবাহিকতা। ইনিংসের দ্বাদশ ওভারেই উদ্বোধনী জুটি ও দলীয় পঞ্চাশ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। এনিয়ে মাত্র তৃতীয়বারের মতো টানা তিন ইনিংসে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের ওপেনাররা।
তামিম-সাদমানকে দেখে তখন মনে হচ্ছিলো ব্যাটিং যেন খুবই সহজ। তবু একুশতম ওভারে ঘটে বিপত্তি। দলীয় ৭৫ রানের মাথায় কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের দারুণ এক ডেলিভারিতে আউটসাইড এজ হয়ে স্লিপে ধরা পড়েন সাদমান। ফলে টানা তৃতীয় ইনিংসে অল্পতেই সমাপ্তি ঘটে ২৩ বছর বয়সী এ ওপেনারের সম্ভাবনাময় ব্যাটিংয়ের। আউট হওয়ার আগে ৪ চারের মারে ৫৩ বলে ২৭ রান করেন সাদমান।
দ্বিতীয় উইকেটে মুমিনুল হককে নিয়ে ৪৪ রানের জুটি গড়েন তামিম। যেখানে সিংহভাগ রানই আসে অগ্রজ ওপেনারের ব্যাট থেকে। ইনিংসের ২৪তম ওভারে চলতি সিরিজে টানা তৃতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন তামিম। পঞ্চাশ করতে ৮১টি বল খেলেন তিনি। এ নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয়বারের মতো ফিফটির 'হ্যাটট্রিক' করেন তিনি। তামিমের দৃঢ় ব্যাটিংয়ের সামনে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না কিউই বোলাররা।
ঠিক তখনই স্বাগতিক বোলারদের মুখে হাসি ফোঁটান মুমিনুল। নেইল ওয়াগনারের লেগস্টাম্পের বাইরে করা শর্ট বলে সময়মতো ব্যাট সরাতে পারেননি বাঁহাতি এ টপঅর্ডার, বল গ্লাভসে লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক বিজে ওয়াটলিংয়ের হাতে, সমাপ্তি ঘটে মুমিনুলের সংগ্রামী ইনিংসের। জোড়া বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৩৮ বলে ১৫ রান করেন মুমিনুল।
মুমিনুলের বিদায়ের পরেও দুই উইকেটে ১১৪ রান নিয়ে প্রথম সেশনটা ভালোভাবে কাটানোর ইঙ্গিতই দিচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগে আবারো ওয়াগনারের শর্ট বলে ধরা পড়েন মিঠুন। ওভারের পঞ্চম বলে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়ার পর শেষ বলে ঠিকই আউট হন চার নম্বরে নামা এ মিডলঅর্ডার। ১০ বলে মাত্র ৩ রান করেন তিনি।
৩ উইকেটে ১২৭ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল তখন অপরাজিত ৭২ রানে, সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির। কিন্তু তিনিও ফিরে যান বিরতি থেকে ফিরে এক ওভার পরেই। পুল এবং ফ্লিকের মাঝামাঝি এক শটে স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন তামিম।
১৩৪ রানের মাথায় ৩৪ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন তিনি। ১১৪ বলে ১০ চারের মারে ৭৪ রান করেন তামিম। এরপরের ব্যাটসম্যানরা কেউই তেমন প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। পাল্টা আক্রমণ করে সৌম্য সরকার ২ চার ও ১ ছয় হাঁকিয়ে আউট হন ২৪ বলে ২০ রান করে।
উইকেটে তখন শেষ দুই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান লিটন দাস এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু তাদের দুজনের জুটি স্থায়ী হয় মাত্র ৭.২ ওভারে, যোগ করে ১৬ রান। ওয়াগনারের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ত্রিশ গজের বৃত্তের মধ্যেই ধরা পড়েন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ, করেন ১৩ রান।
বিনা উইকেটে ৭৫ রান থেকে ৬ উইকেটে ১৬৮ রান নিয়ে দুইশর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। তবে সপ্তম উইকেটে সে যাত্রা পার করান লিটন দাস এবং তাইজুল ইসলাম। দুজন মিলে গড়েন ৩৮ রানের জুটি। ২০৬ রানের মাথায়
সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে তাইজুল আউট হওয়ার পর মাত্র ৫ রান তুলতেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষদিকে লড়াই করা লিটন খেলেন ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৩ রানের ইনিংস।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে বল হাতে হতাশ হননি পাঁচ বোলারের কেউই। সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন নেইল ওয়াগনার। ট্রেন্ট বোল্ড নিয়েছেন ৩ উইকেট। এছাড়া ১টি করে উইকেট গিয়েছে টিম সাউদি, ম্যাট হেনরি ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের দখলে।
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/মার্চ ১০, ২০১৯)