পাঁচটি কবিতা ।। আবুল হাসান মুহম্মদ বাশার
তুমি জানালায়
তোমাকে কখনো ডাকি নাই উৎসবে,
বর্ষাবিহারে, বনভূমি অভিমুখে,
যা কিছু তোমার কষ্টের গৌরবে
উজ্জ্বল- শুধু সেটুকু দেখেছি সুখে।
পাশাপাশি থাকা তবুও মধ্যিখানে
আলোকবর্ষ- সফল অঙ্গীকারে,
দূরে দূরে রাখে- পাছে কোন ভুল টানে,
উজান প্রবাহে ভেসে চলে যাই দূরে।
দুঃখে যখনই তোমার চোখের পাতা
ভারী হয়ে আসে- ফোঁটায় অরূন্ধতী,
শুনি আমি সেই নিশ্চুপ নীরবতা
বলে যেন কিছু হয়েছে অগ্রগতি।
দাঁড়াও যখনই জানালায়- উত্তরে,
একা একা- চুলে সাবলীল শুদ্ধতা,
কে যেন জানায়- উৎসুক চিৎকারে,
ওখানে আমার- সার্থক অন্ধতা!
বলো
বলে ফেললেই শেষ ভেবো না, বললে হবে শুরু,
বলেই দেখো ছুটবে কেমন তোমার যুগল ভুরু
আকাশ পানে, যেথায় তখন মেঘের গুরুগুরু,
ভালোবাসার ছোট্ট কথায় বৃষ্টি হবে শুরু।
বলে ফেললেই হার ভেবো না- বললে হবে জেতা,
আর আমি তুমি এমন তো নই- ক্রেতা ও বিক্রেতা।
আমি তোমার কী হই বলো? তুমি আমার ত্রাতা,
কথার আলোয় ফুটবে সে ফুল আজো অনাঘ্রাতা।
বলে ফেললেই ভাঙবে কেন- বলার মানে গড়া,
কথার পথে হারায় নাকি- স্বর্গপথের ঘোড়া?
বলার আগে একটু দেখো কে নেড়েছে কড়া,
একটি কথায় ফুরিয়ে যাবে সকল বোঝাপড়া।
জিজ্ঞাসা
আকাশের রঙ নীল হয় কেন- লাল হয় কেন রক্ত,
শরতের মেঘ, কাশফুল কেন সাদাতেই অবিভক্ত?
আঁধারের মানে কালো বুঝি শুধু, আলো তবু হয় রঙহীন,
শব্দের কোন রঙ হয়? নাকি রিন্ঝিন শুধু রিন্ঝিন?
শেকড় প্রোথিত গভীরে কেবলই, উঁচু হয় শুধু কান্ড,
সামনেই শুধু ছুটে চলে কেন, নদী, কাল, ব্রক্ষ্মান্ড?
পর্বত এত স্থির কেন, ঝর্নাটি কেন চঞ্চল,
পুরুষ কেবলই ছুঁতে চায় কেন রমনীর ঘন অঞ্চল?
কথা কভু বৃথা চিৎকার, কভু কথা হয়ে ওঠে অন্তর,
কথা কেন ভাঙে, কথাই সাজায় ছোট বড় মরু প্রান্তর?
কথায় কথায় কাছে এসে কেন কথায় সে হবে দূরতর,
বাক্সময় তার নীরবতা তবু জানা যাবে নাকো উত্তর।
কারো যত্ন, কারো তৃষ্ণা
চারকোণা রুটিগুলো স্যান্ডউইচের কায়দায় তিনকোণা করে কাটা-
একটার ওপরে একটা- একে একে ছয়টা।
পাশে বনফুলের শুকনো মিষ্টি গুটিকয়-
এমনিতে যাদের কোন ভবিষ্যৎ ছিলো না,
ডাইনিং টেবিলে যত লোভনীয় ভঙ্গিতেই পড়ে থাকুক না কেন-
যাদের দিকে ফিরেও তাকানো হতো না কোনদিন-
তারাই তোমার হাতের যত্নে রুটিগুলোর পাশে স্থাপিত হয়েছে বলে,
সহসাই অসীম লোভনীয় হয়ে উঠলো।
ফলটার একাংশ কীটদষ্ট ছিলো-
যা তোমার ব্যস্ত দৃষ্টি এবং ব্যস্ততর মন এড়িয়ে যাওয়া খুবই সম্ভব ছিলো,
কিন্তু না- তোমার বিশেষ মনোযোগ তাকে উপস্থাপনযোগ্য করে তুলেছে,
তার মসৃন ত্বক থেকে বিশুদ্ধ জলের শৌর্য এখনো শুকিয়ে যায়নি।
ফুটিয়ে ঠান্ডা করা আধা লিটার পানির আহবান শীতের এই বিকেলেও
আমাকে তৃষ্ণার্ত করে তুললে প্লাস্টিকের টিফিন বক্সটা খুলে
ভেতরে তাকাতেই পুরো আয়োজনটাতে তোমাকে খুঁজে নিই আমি।
হতে পারে এসবের কিছুই কোন বিশেষ কিছু ভেবে করোনি তুমি,
অথচ দ্যাখো আমি কী ভাবছি-
ঠিক তোমার মত তোমার দেয়া খাদ্য কোন একদিন আমার জীবন বাঁচাবে-
হতে পারে আমাদের বেঁচে থাকার এও এক ভীষণ অর্থবহ দিক।
জলছাপ
জেগে আছো শীতে, শরতে, শ্রাবণে,
বাহিরে বোঝাতে- অনেক বাহিরে,
আমোদ দেখানো হাসির দমকে,
দৃষ্টি রেখায়, জলে, আঙুলে-
উদাসী হাওয়ার সুখে আর শোকে;
পরাজিত হোক ভুল মানুষের
দুর্জ্ঞেয় অভিলাষ।
হেঁটে চলে যাও অলস ভ্রমণে
ভেতরে কোথাও- গহীণে গভীরে
ভাতঘুমে ফোলা মুখের সমুখে
জানালার পাশে জেগে থাকা চুলে
জল ছাপ দিয়ে আঁকা দুই চোখে-
থাকুক একটু শুকানো জলের
বিনম্র ইতিহাস।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/মার্চ ২৫,২০১৯)