দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: শিশুদের মতামত ও ভাবনা নিয়ে করা হচ্ছে তৈরি হচ্ছে শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ পার্ক। পার্কের ডিজাইন থেকে শুরু করে পরিবেশ সবকিছুই তৈরি করা হচ্ছে খেলাধুলার জন্য। যাতে করে শিশুরা প্রাকৃতির সঙ্গে বেড়ে উঠতে পারে। মূলত গুলশান সেন্ট্রাল পার্কটি বর্তমানে নতুন নামকরণ করা হয়েছে শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ পার্ক।

পার্কটির নকশা প্রণয়নকারীদের টিম লিডার বুয়েটের ডিপার্টমেন্ট অব আর্কিটেকচারের প্রফেসর ড. মো. জাকিউল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, যান্ত্রিক নগরজীবনে চলাচল করতে করতে শিশুরাদের মাঝে একঘেয়েমিভাব চলে এসেছে। প্রযুক্তির সংমিশ্রণে তারা নিজের শেকড়কে ভুলতে শিখেছে। বাড়ন্ত বয়সে প্রকৃতির সংমিশ্রণ খুবই জরুরি। তাই শিশুদের বাড়ন্ত বয়সে খেলাধুলা খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। আগে শৈশবে আমরা কাঁদামাটির সঙ্গে খেলেছি, কখনও গোল্লাছুট, কাবাডি, ইচিংবিচিংসহ নানান রকম খেলায় মত্ত থাকতাম। কখনও এক গাছে বা কখনও অন্যগাছে ছুটে বেড়াতাম। বন্ধুরা মিলে গল্প ও আড্ডা দিতাম। সন্ধ্যা হলে বাড়ি গিয়ে পড়তে বসতাম। কিন্তু শহরে এ পরিবেশ নেই। বিশেষ করে ঢাকায় এমন পরিবেশ কল্পনার মতো। কিন্তু তবুও শিশুদের প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য পার্কটিকে আমরা তাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে তৈরি করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।

ড. মো. জাকিউল ইসলাম বলেন, ১০ থেকে ১৫ বছরের শিশু-কিশোররা ক্রিকেটসহ নানান খেলাধুলা করে থাকে। কিন্তু ছোট শিশুরা বেলুন, কিংবা ঘাস, মাটি নিয়ে খেলতে পছন্দ করে থাকে। আমরা এসব ভাবনা নিয়ে গুলশান সেন্টাল পার্কের আশপাশের স্কুল ও মাদরাসার শিশুদের কাছে গিয়ে জানতে চেয়েছি, তারা কেমন পার্ক চাই। আমরা তাদের কাছে রং পেন্সিলও কাগজ দিয়েছি। তারা ছবি এঁকে তাদের কল্পনার কথা জানিয়েছে। যা মাথায় রেখে পার্কে আমরা ছোট ছোট খেলার পরিবেশ তৈরি করেছি, যাতে তার কল্পনার শক্তি প্রখর হয়। শিশুরা যেন চিন্তা করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, শিশুরা সবচেয়ে বেশি ছবি একেঁছে গাছের। তাই আমরা আগের গাছের সাথে ফুল ও ফলের নতুন গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। যাতে থাকবে ফুল ও ফলে পরিপূর্ণ। পার্কের ভেতরে নানান ফুলের সমারোহ হবে। যাতে গাছের ফুল প্রকাশ করবে ঋতু পরিবর্তনের নানান রং ঢং।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) 'আরবান রিজিলিয়েন্স' প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক ড. তারিক বিন ইউসুফ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, শিশু বান্ধব পার্ক তৈরি করতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নানান উদ্যোগ নিয়েছি। যার মধ্যে গুলশান সেন্টাল পার্ক বা ওয়ান্ডার‌ল্যান্ড একটি। নতুন করে অবকাঠামো উন্নয়ন করে সব বয়সের মানুষকে প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যেতে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হচ্ছে পার্কটি। যা শিগগির টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হবে।

মূলত গুলশান সেন্ট্রাল পার্কের কিছু অংশ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছ থেকে ইজারা নিয়ে ওয়ান্ডারল্যান্ড চিলড্রেন পার্ক নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে পার্ক নির্মাণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গুলশানের এক বাসিন্দা ১৯৯৫ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। রাজউকের মহাপরিকল্পনায় বাণিজ্যিক পার্কের বিষয়টি না থাকায় ২০১১ সালের শেষের দিকে ওই ইজারা অবৈধ ঘোষণা করে ওয়ান্ডারল্যান্ডের বরাদ্দ বাতিল করে দেন উচ্চ আদালত। ২০১২ সালে পার্কটি দখলমুক্ত ঘোষণা দেয় রাজউক। এরপর রাজউকের কাছে জায়গাটি থাকে। সম্প্রতি পার্কটি ডিএনসিসিকে বুঝিয়ে দেয়। এরপরেই আধুনিক পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা নেয় ডিএনসিসি।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/মার্চ ২৫, ২০১৯)