বিশ্বকাপে সম্ভাবনা কম তাসকিনের!
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: অফিসিয়ালি তিনি নির্বাচক নন; কিন্তু দল চূড়ান্তই হয় তার কলমের খোঁচায়। সে অর্থে তিনি মানে, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে দল নির্বাচনে জড়িত।
বিভিন্ন সময় তিনি দল নিয়ে মিডিয়ায় প্রচুর কথাও বলেন। অমুক সফরে ও সিরিজে দল কেমন হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিসিবি বিগ বস নাজমুল হাসান পাপনের বিভিন্ন সময় দল দিয়ে দেয়ার রেকর্ডও আছে। এই যেমন মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবসে শেরে বাংলায় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে বিসিবি বিগ বস বিশ্বকাপ স্কোয়াড প্রায় দিয়েই ফেলেছেন।
যার অন্তত ১৩ জনের বিশ্বকাপ দলে থাকা প্রায় শতভাগ নিশ্চিত। তবে নাজমুল হাসান পাপন যাদের নাম বলেছেন, তারা সবাই যে বিশ্বকাপ খেলতে যাবেন, তা ভাবাও পুরোপুরি ঠিক হবে না। তাই যদি হতো, তাহলে নিউজিল্যান্ড সফরের আগেও তাকে উদ্বৃত করে এক টিভি চ্যানেলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, ইমরুল কায়েস দলে সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলে জায়গা হয়নি ইমরুলের।
কাজেই বিসিবি সভাপতি সম্ভাব্য ১৫ জনের তালিকায় যাদের নাম বলেছেন, তাদের মধ্যে অন্তত দুটি নাম নিয়ে আছে সংশয়। একজন অবশ্যই তাসকিন আহমেদ। তাকে দলে পেতে আগ্রহী নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট; কিন্তু ইনজুরি আর রিহ্যাব কাটিয়ে এই দ্রুত গতির বোলার এখনো মাঠেই ফেরেননি। সহযোগিরা সবাই প্রায় প্রিমিয়ার লিগ খেলায় ব্যস্ত। কিন্তু তাসকিন এখনো বাইরে। কবে নামবেন, তাও জানা নেই।
এভাবে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার অল্প ক’দিন আগে প্রিমিয়ার লিগ খেলা একজনকে বিশ্বকাপের মত বড় আসরে নেয়া কতটা যুক্তিযুক্ত হবে- তা নিয়ে সংশয়ে সংশ্লিষ্টরা। তারপরও ভিতরের খবর, তাসকিনকে হয়ত আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি আসরে পাঠানো হবে। সেখানে নিজেকে ‘ম্যাচ ফিট’ প্রমাণ দিতে পারলে কপাল খুলবে তাসকিনের। না হয় বিশ্বকাপ না খেলে দেশে ফেরত আসতে হবে।
বিশ্বকাপ স্কোয়াড কেমন হবে বাংলাদেশের? দেশের হয়ে এবারের বিশ্বকাপ খেলতে যাবেন কোন ১৫ জন? তা খুঁজে বের করা খুব কঠিন নয়। ১৩ থেকে ১৪ জন এক রকম চূড়ান্ত। সেটা নির্বাচকদের মাথায় কিংবা বোর্ড সভাপতির মুখে নয়, কম বেশি সবারই মনে আছে। ক্রিকেটের খুটিনাটি খোঁজ খবর যারা রাখেন, তাদের অনেকেই অন্তত ১৩ থেকে ১৪ জন খুঁজে বের করে ফেলেছেন।
ওই দলে ‘পঞ্চ পান্ডব’ তথা অধিনায়ক মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ অটেমেটিক চয়েজ। তাদের অবস্থান শতভাগ নিশ্চিত। এর বাইরে ব্যাটিং লাইনআপে সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ মিঠুন আর সাব্বির রহমানও প্রায় নিশ্চিত। ওপেনার লিটন দাস ভাল খেলছেন না। তারপরও অতীত বিবেচনায় এবং মেধা-প্রজ্ঞায় তার থেকে যাওয়াও এক রকম নিশ্চিত।
তার মানে অধিনায়ক মাশরাফি আর আট ব্যাটসম্যান (তামিম, লিটন, সৌম্য, মুশফিক, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মিঠুন ও সাব্বির), সাথে পাঁচ পেসার, যেখানে মাশরাফির সাথে মোস্তাফিজ, রুবেল হোসেন ও সাইফউদ্দিনের দলে থাকা নিয়ে কোন সংশয় নেই।
তার মানে নয় জনের নাম ধাম জানা হলো। রইলো বাকি ৬।
সেই ছয় জনের কজন ব্যাটসম্যান, কয়জন পেস বোলার, কয়জন স্পিনার আর উইকেটরক্ষক? একটু খুঁটিয়ে দেখলেই তা পরিষ্কার হবে। মাশরাফি আর সাইফউদ্দীনের বাইরে আর তিনজন পেসার যাবে বিশ্বকাপ খেলতে। সাথে সাকিবের সঙ্গে আর একজন মাত্র স্পেশালিস্ট স্পিনার। সেটা অনিবার্য্যভাবেই মেহেদি হাসান মিরাজ। আর পেসার হিসেবে মাশরাফি ও সাইফউদ্দীনের সাথে মোস্তাফিজ ও রুবেল প্রায় অটেমেটিক চয়েজ। এর বাইরে আর একজন মাত্র পেসার সুযোগ পাবেন।
তিনি কে? খালি চোখে মনে হচ্ছে তাসকিন। কিন্তু তার ফিটনেস নিয়ে আছে রাজ্যের সংশয়। তাসকিন এখনো ইনজুরি ও রিহ্যাব কাটিয়ে মাঠে ফিরতে পারেননি। তাই তার দলভুক্তির সম্ভাবনা কম। তবে ভিতরের খবর, দ্রুত গতির বোলার তাসকিনকে সম্ভবত আয়ারল্যান্ডে পাঠানো হবে। সেখানে তার ম্যাচ ফিটনেস ও ম্যাচ পারফরমেন্স খুঁটিয়ে দেখা হবে। উৎরে গেলে টিকেও যেতে পারেন বিশ্বকাপ দলে।
তখন বাকি চার জনের মধ্য থেকে খারাপ করা একজনের বদলে ঢুকেও যেতে পারেন তাসকিন। ওপেনিং ব্যাটসম্যানের বিকল্প হিসেবে এনামুল হক বিজয়ও হিসেবে আছেন। তার দিকেও চোখ আছে নির্বাচকদের। তিন সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বিজয় নজর কেড়েছেন। তবে বিকেএসপিতে সেঞ্চুরি আমলে আনার বিপক্ষে নির্বাচকরা।
বিকেএসপির পিচ ব্যাটিং স্বর্গ। যেখানে একটু বুদ্ধি আর ধৈর্য্যর মিশেলে ক্রিজে দাঁড়িয়ে বল দেখে খেললেই বড় ইনিংস সাজানো যায়। গত বছর লিগে ওই বিকেএসপি মাঠেই আশরাফুল চার সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। উইকেট শতভাগ ব্যাটিং সহায়ক। আয়তনেও খানিক ছোট। লম্বায় যেমন তেমন, স্কোয়ার মানে পাশে কম। তাই এনামুলক হক বিজয়ের সেঞ্চুরি সেভাবে আমলে আনা হচ্ছে না। বিকেএসপির বাইরে একাধিক ভাল ও লম্বা ইনিংস খেলতে পারলে তার সম্ভাবনা থাকবে।
তবে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সবচেয়ে বড় চমক হতে পারেন ইয়াসির আলী রাব্বি। বিপিএল ও প্রিমিয়ার লিগে নজর কাড়া রাব্বির দিকে চোখ স্থির আছে নির্বাচকদের। একদম নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, চট্টগ্রামের এ সুঠামদেহী মিডল অর্ডারের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
পাশাপাশি এবারের লিগে আবাহনী অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের কথাও ভাবা হচ্ছে। মোটকথা, একদম সর্বশেষ খবর হলো, আয়ারল্যান্ডে যাবে ১৭ জনের দল। সেখান থেকে ১৫ জনকে বিশ্বকাপের জন্য চূড়ান্তভাবে বেছে নেয়া হবে।
সেই ১৭ জনের সম্ভাব্য দল এমন
মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ মিঠুন, সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন, মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, শফিউল ইয়াসির আলী রাব্বি, তাসকিন আহমেদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, এনামুল হক বিজয়।
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/মার্চ ২৭, ২০১৯)