দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারের ভবনটিতে অষ্টমতলার বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

তদন্ত কমিটি বলছে, অগুন লাগার সময় ভবনে কোনো ধরনের ফায়ার এলার্ম বাজেনি এবং কখনও কোনো অগ্নি সুরক্ষার মহড়া হয়নি।

রোববার দুপুরে বনানীর ফারুক রূপায়ন (এফআর) টাওয়ারের পাশে অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুমের পাশে গণশুনানির শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ত্রান ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব ফায়জুর রহমান।

রোববার সকাল ১০ টা থেকে শুরু দুপুর ১২টা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে আগুনের ২৪ জন প্রত্যক্ষদর্শীর গণশুনানির মাধ্যমে সাক্ষ্য নেওয়া হয়। তাদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে ৮ম তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে মনে করছে তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

এই কমিটি ২৪ জন প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের যাবতীয় সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে পর্যালোচনা করে আগামী ৩ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবে।

ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব ফায়জুর রহমান বলেন, গণশুনানির মূল উদ্দেশ্য হলো আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা, এবং ভবিষ্যতে এ ধরণে ঘটনা ঘটলে যাতে আমরা উত্তোরণ করতে পারি- সে বিষয়ে সুপারিশ দেওয়ার জন্য এই শুনানির আয়োজন করা হয়েছে।

গত ২৯ মার্চ থেকে আমাদের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কাজে গণশুনানির সাক্ষ্য গ্রহণ একটি অংশ।

ভবন থেকে বের হয়ে আসার চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে গণশুনানিতে তিনি জানান, ভবনটি সম্পূর্ন গ্লাস দিয়ে ঢাকা থাকায় আগুনের ঘটনায় যে ধোয়ার সৃষ্টি হয়েছে সেটি বের হতে না পেরে পুরো ভবনের ফ্লোরগুলো ও সিঁড়িতে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ কারণে মানুষের বের হয়ে আসাটা কঠিন ছিল। আমরা সবার বক্তব্য শুনেছি। ভবনে আরও কী কী ব্যবস্থা থাকলে তারা আরও দ্রুত বের হতে পারতো। সেগুলো আমরা সুপারিশের মাধ্যমে তুলে ধরবো।

তিনি বলেন, গণশুনানিতে আমরা ৮ম তলার এক্সপ্রেক্টা এস এম টেক্সট লিমিটেড এর কাওকে পাইনি। তবে এইফ্লোরে মালিককে আমরা অফিসে ডেকেছি। তিনি কাগজপত্রসহ অফিসে এসে দেখা করবেন। তবে সামনের একজন সিকিউরিটি গার্ড পেয়েছি সে জানিয়েছে ভবনের ৮ম তলা থেকে আগুন বের হতে দেখেছে।

এছাড়া আমরা নিচতলা ৪, ৫, ৯, ১০, ২১ ও ২২ তলার প্রত্যক্ষদর্শীদের পেয়েছি কিন্তু ৮ তলার কেউ আসেনি। তবে সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শী কাউকে পাওয়া যায়নি।

অতিরিক্ত সচিব জানান, আমরা জমির মালিকের বক্তব্য শুনেছি, সে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও জমা দিয়েছে। পাশাপাশি এই ভবনটি নির্মাণের কাজ করেছে গতকাল পর্যন্ত তারা কোনো কাগজপত্র দেয়নি। তাদের কাগজপত্র জমা দেয়ার জন্য সময় দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদেরও বক্তব্য নিয়েছি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফায়জুর রহমান বলেন, সাধারণত এ ধরণের বহুতল ভবনে যে ধরনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকার দরকার তা ছিল না। অগুন লাগার সময় ভবনে কোনো ধরণের ফায়ার এলার্ম বাজেনি, এবং কখনও কোনো আগ্নি সুরক্ষার মহড়া হয়নি। ভবনের ফায়ার এক্সিট ওয়ে খুবই সরু, অনেকগুলো ফ্লোরে এক্সিট ডোর সিল করে বন্ধ করা ছিল। তাছাড়া এক্সিট ডোরের কোনো দিক নির্দেশক চিহ্ন ছিল না। এ কারণে আগুনের ঘটনায় তারা ওই ডোরটি ব্যবহার করতে পারেনি।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/মার্চ ৩১,২০১৯)