কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : রাজধানীর বনানীতে এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন নেভাতে গিয়ে গুরুতর আহত ফায়ারম্যান সোহেল রানার মৃত্যুতে তার কিশোরগঞ্জের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। উপার্জনক্ষম একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা হালিমা খাতুন বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন। সোহেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে ভিড় করছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সোহেলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কিছুতেই কান্না থামছে না সোহেল রানার মা হালিমা খাতুনের। বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন এবং জ্ঞান ফিরলেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তিনি।

ইটনা উপজেলার চৌগাঙ্গা ইউনিয়নের কেরুয়ালা গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম ও হালিমা খাতুনের চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সোহেল রানা সবার বড়। তিন বছর আগে ফায়ার সার্ভিসে ফায়ারম্যান হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। গত ২৩ মার্চ বাড়ি এসেছিলেন সোহেল। সেদিন ঢাকায় যাওয়ার সময় মাকে বলেছিলেন, ছুটি নিয়ে শিগগিরই বাড়িতে আসবেন। কিন্তু তা আর হলো না।

একটি টিনের দোচালা ঘরে সোহেলের বাবা-মা, চাচা-চাচিসহ পরিবারের সবাই গাদাগাদি করে থাকেন। বাবা দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইসড। বাড়ির পাশের চৌগাঙ্গা শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পাস করেন সোহেল। অটোরিকশা চালিয়ে সেই টাকা দিয়ে করিমগঞ্জ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ২০১৪ সালে। এরপর টাকার অভাবে লেখাপড়া বাদ দিয়ে পরের বছরই যোগ দেন ফায়ার সার্ভিসে। তার চাকরির টাকা দিয়ে চলতো পুরো পরিবারের খরচ ও ছোট ভাইদের লেখাপড়া। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে গোটা পরিবার চোখে অন্ধকার দেখছে।

চৌগাঙ্গা গ্রামের ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন জানান, ছেলেটি খুব আদর্শবান ও অমায়িক ছিল। পরিবারটি দরিদ্র হওয়ায় তাকে অনেকেই সহযোগিতা দিয়েছে।

গত ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার পর উদ্ধার অভিযানে যোগ দেন রানা। ২৩ তলা ওই ভবনে আটকা পড়া কয়েকজনকে উদ্ধার করে ল্যাডারে করে নিচে নামাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় উদ্ধারকারী ল্যাডারটি ওভারলোড দেখালে সোহেল ওজন কমাতে ল্যাডার থেকে নেমে ভবন বেয়ে নিচে নামতে চেষ্টা করেন। এ সময় ল্যাডারের ভেতরে সোহেলের একটি পা ঢুকে যায় এবং তার শরীরের সেফটি বেল্টটি ল্যাডারে আটকে পেটে প্রচণ্ড আঘাত পান। এরপর সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন সোহেল।

সিএমএইচের চিকিৎসকদের পরামর্শে গত শুক্রবার সোহেলকে পাঠানো হয় সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৭ মিনিট চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/এপ্রিল ০৮,২০১৯)