দাদির কবরের পাশে শায়িত হবে নুসরাত
ফেনী প্রতিনিধি : মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে সমাহিত করা হবে পারিবারিক কবরস্থানে। দাদির কবরের পাশেই হবে তার শেষ শয্যা।
নুসরাতের চাচা নুরুল হুদা শামীম সাংবাদিকদের জানান, এখন পর্যন্ত পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বাদ আসর সোনাগাজী সাবের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা হবে। জানাজা শেষে দাদির কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে।
এদিকে নুসরাত জাহান রাফির লাশ বুধবার দিবাগত রাতে মর্গে রাখা হবে। বৃহস্পতিবার সকালে তার ময়নাতদন্ত করা হবে। এরপর মরদেহ ফেনীতে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢামেক বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।
তিনি বলেন, নুসরাতকে বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। তবে ডিপ বার্ন হওয়ায় প্রথম থেকেই বাঁচার সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ। আজকেও সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা হয়েছিল। সকালে নুসরাতের ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ ফেনী নিয়ে যাওয়া হবে।
ঢামেকের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় নুসরাত বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মারা যান।
গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে বোরকা পরা ৪-৫ ব্যক্তি তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, ভুক্তভোগী মাদ্রাসাছাত্রী সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরছান্দিয়া গ্রামের মাওলানা একেএম মানিকের মেয়ে। অভিযোগ আছে, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা এর আগে ওই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন করে। এ কারণে গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় মেয়েটির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা বর্তমানে ফেনী কারাগারে আছেন।
এদিকে, সোমবার (৮ এপ্রিল) দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তার সর্বশেষ স্বাস্থ্যের অবস্থা জানিয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়। মঙ্গলবার সকালে সেখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন ডা. সামন্তলাল সেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মেয়েটির শারীরিক যে অবস্থা তাতে পাঁচ ঘণ্টা ফ্লাই করা খুবই রিস্কি বলে মনে করছেন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তাই এই মুহূর্তে মেয়েটিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া সম্ভব না।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/ এপ্রিল ১১, ২০১৯)