বাড়ি ভাড়ায় নৈরাজ্য: শাস্তির আওতায় আসছেন বাড়িওয়ালারা
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বাড়ি ভাড়া নিয়ে দেশের শহরগুলোয় রীতিমতো নৈরাজ্য চলছে। সবচেয়ে বেশি নৈরাজ্য চলছে রাজধানীতে। বাড়ির মালিকরা বছরের শুরুতেই কারণ ছাড়াই ভাড়া বাড়িয়ে দেন। কষ্ট হলেও ভাড়াটিয়ারা মুখ বুজে সহ্য করে যান।
বাড়ির মালিকদের এ অন্যায় দেখার যেন কেউ নেই। তবে বাড়ি ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়ারা বাড়ির মালিকদের অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন।
অযৌক্তিকভাবে ভাড়া বাড়ানো হলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে বাড়িওয়ালাসহ সংশ্লিষ্টদের। সম্প্রতি ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯ সংশোধন করে ভোক্তা অধিকার আইন-২০১৮ নামে একটি খসড়া তৈরি করেছে অধিদফতর। সেই খসড়া পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর জানান, অধিদফতর ভোক্তার অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। সপ্তাহের ৬ দিন ৩টি করে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। রমজানকে ঘিরেও বিশেষভাবে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়া ভোক্তারা যেন আরও বেশি সুফল পান, এজন্য আইনে বেশকিছু ধারা পরিবর্তন ও সংযোজন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যা চূড়ান্ত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, কেবিনেটে এ আইনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। সেখান থেকে ভেটিংয়ে পাঠানো হবে। পরে তা জাতীয় সংসদে আইন পাস হবে বলে আশা রাখছি। আর আইনটি চূড়ান্ত হলে ভোক্তা আইন-২০০৯-এর পরিবর্তে ২০১৮ নামে অভিহিত হবে। সেখানে বাড়ি ভাড়াসহ আরও নতুন বিষয়ে ভোক্তারা সুফল পাবেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সর্বশেষ সমীক্ষায় দেখা যায়, ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। অথচ একই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে মাত্র ২০০ শতাংশ। অর্থাৎ নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ। রাজধানীতে ১৯৯০ সালে পাকা ভবনে দুই কক্ষের একটি বাসার ভাড়া ছিল ২ হাজার ৯৪২ টাকা। ২০১৫ সালে সেই ভাড়া দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ১৫০ টাকা। আর গত বছর এই ভাড়া এসে ঠেকেছে ২১ হাজার ৩৪০ টাকায়। সমীক্ষায় আরও বলা হয়, ২০০৬ সাল থেকে ১০ বছরে ভাড়া বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জানান, নিুবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষ যেসব এলাকায় বসবাস করেন, সেসব এলাকায় বাড়ির সংখ্যা চাহিদার তুলনায় কম। ফলে বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়াদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন। তাছাড়া বাড়ি ভাড়া, গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের বিল বাড়ায় ঢাকাবাসীর দৈনন্দিন ব্যয় বাড়ছে। বাড়ি ভাড়া নিয়ে যে আইন আছে, তা ভাড়াটিয়া সহায়ক নয়। তাই সরকারের আইন প্রয়োগের বিষয়ে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি গৃহায়ন কর্মসূচির উদ্যোগ বাড়াতে হবে। তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের খসরা আইন পাস হয়ে বাস্তবায়ন করা হলে ভাড়াটিয়াদের দীর্ঘশ্বাস একটু হলেও কমবে।
এদিকে খসড়া আইন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভোক্তা আইন ২০০৯-এর ২২ ধারায় বলা হয়েছে, সেবা খাতের মধ্যে পরিবহন, টেলিযোগাযোগ, পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ স্বাস্থ্যসেবায় কোনো ধরনের প্রতারণা করা যাবে না। প্রতারণা করলেই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করা যাবে।
তবে ২০১৮’র খসড়া আইনে বাড়ি ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। খসড়া আইনে শাস্তির পরিধিও বাড়ানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে এক বছর কারাদণ্ডের বিপরীতে ৩ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিপরীতে ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
নতুন খসরা আইনে অনেক নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যাতে একজন ভোক্তা তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে অভিযোগ করতে পারেন। এজন্য অধিদফতর সব সময় সজাগ রয়েছে। এছাড়া বর্তমান আইনে ভোক্তা শুধু অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ করতে পারতেন।
আর নতুন আইন পাস হলে একজন ভোক্তা তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক বা অধিদফতরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করতে পারবেন। এছাড়া দেশের প্রতিটি জেলায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা তার চেয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন।
নতুন আইনে ভোক্তা বেশি বাড়ি ভাড়া দিয়ে প্রতারিত হলে কারণ উদ্ঘাটন হওয়ার ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা অথবা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত যে কোনো কর্মকর্তার কাছে একজন ভোক্তা অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন।
এদিকে নতুন আইনের খসড়া পর্যালোচনা করে আরও দেখা যায়, প্রশাসনিক আদেশের বিরুদ্ধে দোষী ব্যক্তির জন্য আপিলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে অধিদফতরের মহাপরিচালকের আদেশ প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আপিল করতে হবে। আর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট থেকে কোনো শাস্তি প্রদানের আদেশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করতে পারবেন অভিযুক্তরা।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/ এপ্রিল ১১, ২০১৯)