পাঁচটি কবিতা ।। টিপু সুলতান
এই বৈশাখে
এই বৈশাখে তোর সং সাজাবো
বাউল মনে রঙ লাগাবো
হলুদ শাড়ির আঁচল মেলে
আসবি যদি আলতা রাঙা পায়-
মুঠোর ভেতর সুখ গুঁজে তুই
আমার বুকে লুকিয়ে যাবি
বৃক্ষ ছায়ার হৃদয় বনে
হাজার বছর খুঁজে পাবি
পান্তাভাতে ইলিশ মরিচ,নতুন সংসার;
ঢোল ঢালুকের কেতন বাঁশি
তপ্ত রোদের গরম রাশি
পান্তা বাতাস-মেঘলা আকাশ
সব দুয়ারে সাড়া পাবি-
শহর গ্রাম একতারা সুর
পুরান ভেঙে নতুন হাসি।
একদিন এই পথ বাঁকে
হাঁটছি পথের সঙে-গৃহবধূর উঠান ধরে
পেছনে সরে যাচ্ছে অনাগত পথ,
খুঁটছি ফাল্গুন-বাতাসের গোপন গল্প ভাড়া দিতে দিতে
পুরান ঢাকার তিন গলি মাথায় কিনেছি বসন্ত-বৈশাখ;
একদিন এই পথ বাঁকে,নিশকালো কুচকুচ কাকডুব
নগরীর মদ পানে-কোকিল ধ্বনি ফুটতে ফুটতে
দোয়েলচত্বরে কেটে যায় একটি বৃহস্পতিবার-
সন্ধ্যার আলোটুকু গিলে খায় নিরঞ্জন দুপুরের বর্ষা
জ্যোৎস্নার পুকুরে মেঘ খেলে-রাজহংসী নাচ!
জলভেজা মোমের আত্মদেমাগ
জলভেজা মোমের আত্মদেমাগ অনুবাদ করতে করতে
আমি নীলডাউনের ছাত্র হয়ে পড়েছি-
পূর্ণদৈর্ঘ্য শহরের কাটছাঁট শরীর,হাড়গোড় গড়ানো
ব্যস্ত নগরীর শাহবাগ পাঠ,ঠোঁট ভেজানো ডাবের জল-
আলোছায়া নগরী পেরুনো শহিদ মিনারের ক্লান্তজেদ
তেত্রিশবার অনুবাদে ছিঁড়েছি,গেঁথেছি,তারপর দাঁড় করেছি
মাংস বাঁধানো পথচারীর গন্তব্য;কেবল নাগরিক বিশ্লেষণ!
কুয়াশা ভাঙা রোদ
সরে যাচ্ছে শহরের উঠোন ভরা প্রার্থনা
অতল বৃক্ষদের কানে কানে গোপন ধ্বনি
ক্লান্ত ঘামের বসন্ত আছড়ে পড়ছে রিকশার প্যাডেলে-
ব্যস্ত বাসিন্দারা ভাঁজখোলা সিঁড়ির আড়াইতলা দালানে
চৌঘরি পুরাতন অন্ধকার শোয়ানো-কুয়াশা ভাঙা রোদ
বেগানা মাকড়সার বিপ্লুত পথ খুঁজতে খুঁজতে
টিয়ে ডাঙরের মতো অসংখ্য উড়ন্ত পাখির স্বপ্ন আঁকছে।
চোখে আমরি উত্থানের গল্প,পেটে খিদের কারখানা
কেবল রক্ত আর মাংস পোড়া দিনমান কবিতা হরতাল দিনে
এই আমাদের মৃত্যুপুরী,নুনঝাল-সংসার-প্রিয়তমা;
বীজ থেকে দৈর্ঘ্য পৃথিবী
ফুরফুরে মেজাজ-কখনো বিভোর স্বপ্নে চাঁদ উলটায়-
ঝটপট সিদ্ধান্তে তরুণ ছন্দ বায়ু সিনেমার নৃত্যশালা,
কখনো ছদ্মনামে শরীরের রঙ পালটায়
মন খারাপের ব্যত্যয় ভেঙে-গোলপাতার ঘর
ছেঁড়াখোঁড়া দেওয়াল ভরা বঙোপের হিমালয়-সুন্দরবন,
বোতাম ভাঙা ময়লা জামার আলপিনে
পালতোলা নদীর ডুবছবি,দু দিকে শহর আর গ্রামের পথ;
মধুভ্রম স্বপ্ন দরজা আঁকে-সকল ঋতু
বর্ষাগম মখমল মাটির বীজ থেকে দৈর্ঘ্য পৃথিবী।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/এপ্রিল ১২,২০১৯)