সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে রাখা হচ্ছে বরাদ্দ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: অর্থনীতিবিদদের সমালোচনা অগ্রাহ্য করে জনগণের করের টাকায় ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের রেওয়াজ অব্যাহত রাখছে সরকার।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে নড়বড়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটাতে ফের বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরের বাজেটেও মূলধন পুনর্ভরণ খাতে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে বরাদ্দের পরিমাণ চূড়ান্ত হবে আগামী মাসে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে ২০১২-১৩ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে সরকার। চলতি অর্থবছরের জন্যও সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে অর্থ বিভাগের কাছে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা চেয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। চাহিদা অনুযায়ী অর্থ পেলে মূলধন ঘাটতি মেটাতে অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। আর এ অর্থের পুরোটাই জনগণের করের টাকা।
অর্থনীতিবিদরা এভাবে বরাদ্দ রাখার বিষয়ে বিরোধিতা করলেও সরকার কানে তুলছে না। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি ব্যাংকে সুশাসনের ঘাটতি আছে। ব্যাংকগুলো দুর্বল হচ্ছে খারাপ ঋণগ্রহীতার কারণে। ঋণ নিয়ে তারা ফেরত দেয় না। ব্যাংকগুলোর মামলা ঝুলছে বছরের পর বছর। এগুলোর ফয়সালা না করে ব্যাংক বাঁচাতে সরকার জনগণের করের টাকায় দায় মেটাচ্ছে। এতে সুশাসনের ঘাটতি আরো বাড়ে। সরকারকে বিকল্প পথ খুঁজতে হবে।’
অর্থনীতিবিদরা যা-ই বলুন, এই প্রথা আগামী অর্থবছরও চালু রাখবে সরকার। আগামী অর্থবছরে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটাতেও দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে প্রতি অর্থবছরে কিছু না কিছু বরাদ্দ রাখা হচ্ছে সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে। তবে বেশির ভাগ সময় প্রয়োজন পড়েছে আরো বেশি। সরকারি বাজেট ডকুমেন্ট ও অর্থ বিভাগের তথ্যে দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে পুনর্মূলধন খাতে এক হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। এর পরের অর্থবছর ২০১০-১১ অর্থবছরে দেওয়া হয় এক হাজার ৫০ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১১-১২ অর্থবছরে দেওয়া হয় ৭০০ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেওয়া হয় ৪২০ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছর পাঁচ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছর দুই হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছর এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছর দুই হাজার কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় দুই হাজার কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ রাখা আছে দেড় হাজার কোটি টাকা।
তবে চলতি অর্থবছর মূলধন পুনর্ভরণ খাতে না রেখে অর্থ বিভাগ ‘আবর্তক স্থানান্তর, যা অন্যত্র শ্রেণিবদ্ধ নয়’ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামী অর্থবছরও একই খাতে অর্থ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
অর্থ বিভাগের তথ্য মতে, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে মূলধন পুনর্ভরণ, সুদ ও ভর্তুকিসহ নানা উপায়ে সরকার ব্যাংকগুলোকে ১২ হাজার ৪৭২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে বেসিক ব্যাংককে। ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেসিক ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে তিন হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। এর পরই রয়েছে সোনালী ব্যাংকের স্থান। ব্যাংকটিকে ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ এই চার অর্থবছরে দেওয়া হয়েছে তিন হাজার ৪০৫ কোটি টাকা।
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/এপ্রিল ২৮, ২০১৯)