দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানাধীন হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ফাহমিদা হক লাবণ্য (২১) নিহত হওয়ার ঘটনায় উবার মোটরসাইকেল চালক ও কাভার্ডভ্যান চালককে আটক করেছে পুলিশ।

ঘটনার সময় লাবণ্যকে বহনকারী অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবা উবার মোটরসাইকেল চালক ছিল বেপরোয়া। তারচেয়েও বেশি বেপরোয়া ছিল পেছনে থাকা কাভার্ডভ্যানটি। মূলত বেপরোয়া গতির কারণেই চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় লাবণ্য।

রোববার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন, খিলজী রোডের নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার।

এর আগে শনিবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ঢাকার আশুলিয়ার বাইশমাইল এলাকা থেকে ঘাতক কাভার্ডভ্যানসহ চালক আনিসুর রহমানকে আটক করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের একটি দল। আনিসুরের বাড়ি দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার আশিনপাড়ায়।

ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ঘটনার পর থেকে লাবণ্যকে বহনকারী মোটরসাইকেল চালককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার মোবাইলও বন্ধ ছিল। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি পালিয়ে যান। গত ২৪ তারিখ দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মোহাম্মদপুর থানাধীন নবীনগর হাউজিং এর ২ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর বাসা থেকে উবার মোটরসাইকেল চালক সুমন হোসেনকে আটক করে পুলিশ। কারণ সুমনই ছিল ঘটনার প্রধানতম সাক্ষী।

তিনি বলেন, লাবণ্যের মৃত্যুর পর আমরা প্রথম সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করি। কিন্তু কোনো একটি ক্যামেরায় কাভার্ডভ্যানটি ক্লিয়ার দেখা যাচ্ছিল না। তবে আমরা তথ্য প্রমাণে নিশ্চিত হয়েছিলাম যে, লাবণ্যকে চাপা দেয়া কাভার্ডভ্যানটি পরিস্থিতি বুঝে রুট পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রের সামনে দিয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় চলে যায়।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পেছনের একটি সিসি টিভি ক্যামেরায় আমরা ওই কাভার্ডভ্যানটি শনাক্ত করি। রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিশ্চিত হতে না পারলেও কাভার্ডভ্যানের পেছনে লেখা ছিল ইনফোফোর্ট (Info Fort)।

এরপর আমরা প্রথমে তেজগাঁও ইনফোভোর্টের সাব অফিসে খোঁজ করি। এরপর মূল হেড অফিস আশুলিয়া বাইশমাইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাভার্ডভ্যান চালক আনিসুরকে গ্রেফতার করা হয়।

উবার মোটরসাইকেল চালক সুমন ও কাভার্ডভ্যান চালক আনিসুরকে আলাদা আলাদা জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ঘটনার সময় বেপরোয়া গতিতে চলছিল মোটরসাইকেলটি। অন্যদিকে পেছনে থাকা কাভার্ডভ্যানটিও চালক আনিসুর আরো বেশি বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে আসছিল।

ডিসি বিপ্লব ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, লাবণ্যের উবারে রিকোয়েস্টের পর চালক সুমন তার শ্যামলীর বাসা থেকে উঠিয়ে গন্তব্যে রওনা দেন। মোটরসাইকেলটি শুরু থেকেই বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিল সুমন। শেরেবাংলা হৃদরোগ ইনিসটিটিউটের সামনে আসার পর পেছন থেকে আসা আরও বেশি বেপরোয়া কাভার্ড ভ্যানটি ধাক্কা দিলে লাবণ্য পড়ে যায়। লাবণ্যকে চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় কাভার্ডভ্যানটি। এরপর পথচারী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ডিসি বিপ্লব বলেন, দায়েরকৃত মামলায় কাভার্ডভ্যান চালক আনিসুরকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিতে উবার মোটর চালক সুমনকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/এপ্রিল ২৮, ২০১৯)