বাজেটের আগেই বিএসইসিতে পরিবর্তন দেখতে চাই : মেনন
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আইন লঙ্ঘন করে দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে খায়রুল হোসেনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ করে ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, আগামী বাজেটের আগেই আমরা বিএসইসিতে পরিবর্তন দেখতে চাই।
শেয়ারের অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে সোমবার (২৯ এপ্রিল) ‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ’ এর ব্যানারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতীকী গণঅনশনে সংহতি প্রকাশ করে তিনি এসব কথা বলেন।
মেনন বলেন, রোববার (২৮ এপ্রিল) সংসদে প্রশ্নের-উত্তরে অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন ‘পুঁজিবাজারে সঙ্কট আছে। সেখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করা না গেলে আমাদের শিল্প, বাণিজ্য কোনোটাই হবে না। কারণ পুঁজিবাজার থেকেই অর্থ সংগ্রহ করা হয়।’ সংসদে সত্য কথা বলায় আমি অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
কিন্তু সত্য কথা বলেই শেষ হবে না। আমাদের কথা হচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান আইন ভঙ্গ করে পর পর তিনবার কীভাবে থাকে? এর জবাব আপনাদের দিতে হবে- বলেন সাবেক মন্ত্রী মেনন।
তিনি বলেন, আমরা দেখতে চাই জুন মাসে বাজেটের আগেই বিএসইসিতে পরিবর্তন এসেছে। কারণ আপনারা আইন ভঙ্গ করেছেন। আমরা পার্লামেন্টে আইন করেছি, আপনারা সেই আইন ভেঙেছেন। আমরা তালিকা চাই গত ৯ বছরে কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে আইপিও ইস্যু করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তারা কারা? তাদের পরিচয় চাই এবং তাদের বর্তমান অবস্থা কি? আমরা তার তালিকা চাই।
মেনন বলেন, আইপিও নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছে আমি তাদের বিচার চাই। সেই সঙ্গে খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেন এবং অধিকতর তদন্তের পদক্ষেপ নিন। আমাদের দেশে অনেক প্রথিতযশা ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ আছেন। যারা এই অধিকতর তদন্ত করতে পারবেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে চক্রান্ত চলছে এমন ইঙ্গত করে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধান বলেন, আর্থিক খাত সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিন-রাত পরিশ্রম করে এই দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে গেছেন, সেখানে আমাদের আর্থিক খাতের পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট যদি কন্টিনিউ করে তাহলে জানবেন দেশের অর্থনীতি খারাপ, সামষ্টিক অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। তাহলে কোন চক্রান্ত চলছে আজকে বাংলাদেশে?
তিনি বলেন, আমরা দেখছি ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। গত ১০ বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা থেকে ঋণ খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আজকে কী করছেন আপনারা? ১ মে থেকে চালু করবেন সেই রিতি। রিতিটা হলো- ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দেবেন, ৯ শতাংশ সুদ দেবেন, আর ১২ বছরে ঋণ পরিশোধ করবেন। আবার দেখলাম বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে দরকার হলে আরও ৬ মাস বাড়িয়ে দেয়া হবে।
কি হবে এতে? যারা ঋণ নেন বা সাধারণ ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা তারা কোথায় যাবেন? আপনি ঋণ খেলাপি হয়ে ৯ শতাংশ সুদ দেবেন। আর আমি ভালো ঋণগ্রহীতা হয়ে ১৩ শতাংশ সুদ দেব- এটা কি হয়? আপনি ঋণ খেলাপি হয়ে ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দেবেন, আর আমি ভালো ঋণগ্রহীতা হয়ে ১০-১২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দেব- এটা কি হয়? তাহলে আমরা সকলে এখন ঋণ নিয়ে খেলাপি হব, ওটাই করার জন্য ব্যবস্থা করছেন আমাদেরকে’ বলেন বিগত মহাজোট সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা সাবেক মন্ত্রী মেনন।
তিনি বলেন, আমরা এখন সবাই এই স্লোগান দেব-‘আমরা সবাই ঋণ খেলাপি হব। তাহলে আমাদের অর্থমন্ত্রীর নতুন পদ্ধতি অনুসারে আমরা বিশেষ সুবিধা পাব।’ এ সময় গণঅনশনে অংশ নেয়া বিনিয়োগকারীরা স্লোগান দেন- ‘আমরা সবাই ঋণ খেলাপি হব, বাংলাদেশকে শেষ করব।’
অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেনন বলেন, সমস্যা যখন সৃষ্টি হয়, তার সমাধান আছে। আপনি (অর্থমন্ত্রী) বলেছেন আগামী বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য প্রণোদনা দেয়া হবে। এই প্রণোদনা কী হবে সেটা যদি বিস্তারিত বলেন তাহলে ভাল। ১৩ জুন বাজেট আসবে, আশা করি বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য কী প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ থাকবে।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/এপ্রিল ২৯, ২০১৯)