যবিপ্রবি প্রতিনিধি: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন যশোর শহরের মেসগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মারধর ও হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে বলেছেন, আমার সন্তানের গায়ে হাত তুলবেন না। আমি আর দু-একটি দিন দেখবো। এরপরও যদি আমার কোনো সন্তানের গায়ে হাত তোলায় হয়, মেসে গিয়ে ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হয়, তাহলে তার উৎকৃষ্ট এবং সম-উত্তর আমি দেব। আমি শেষ পর্যন্ত শিক্ষক হয়ে থাকতে চাই।

২৯ এপ্রিল সোমবার যবিপ্রবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের গ্যালারিতে বিশ্ববিদ্যালয়েরপরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (ইএসটি) বিভাগ আয়োজিত নবীন বরণ অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন এসব কথা বলেন। এর আগে নবীন বরণ উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের করে পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ। শোভাযাত্রায় পলিথিন দূষণ, পানি দূষণ, বায়ু দূষণ, জলবায়ু উদ্বাস্তুসহ ছয়টি থিম স্থান পায়। কোনো বাদ্যযন্ত্র ও গান ছাড়া কীভাবে পরিবেশ বান্ধব শোভাযাত্রা করা যায় সেটিকেই তুলে ধরা হয়।

অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, ভীতু, কাপুরুষ সন্তানের পিতা আমি হতে চাই না। আমি সাহসী সন্তানের পিতা হতে চাই। যে সন্তান জীবনে একবার মারা যাবে। যে সন্তান প্রতিদিন মারা যায়, আমি সেই সন্তানের পিতা হতে চাই না। তিনি বলেন, যবিপ্রবি তোমাদের কাছে আজকে গুরুর অর্ঘ্য চাচ্ছে। তোমাদের যা আমরা দিয়েছি তার প্রতিদান চাচ্ছি। যবিপ্রবিকে শহরের হায়েনাদের থেকে রক্ষা করতে হবে। অশুভ ও দুষ্ট চক্রের রাজনীতি থেকে রক্ষা করতে হবে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের পেছনে কখনোই বিশ্ববিদ্যালয় যায় না। এটা তোমাদের বুঝতে হবে।

অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, যে রাজনীতি করতে চায় সে রাজনীতি করবে, এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যে ছাত্র পড়াশোনা করতে চায় তাঁকে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ দিতে হবে। তাকে জোর করে রাজনীতিতে নিয়ে আসা যাবে না। হিমালয় ডুবে যেতে পারে। কিন্তু প্রফেসর আনোয়ার হোসেন কখনো মাথা নত করবে না। এই ভাই ওই ভাইয়ের কাছে গিয়ে যারা আমাকে বারবার হুমকি দিচ্ছেন, আমার গাড়িতে বোমা, বাড়িতে বোমা মারবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন; আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বোমা খেতে খেতেই আমি বড় হয়েছি। বোমার ভয় আমি পাই না।

অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, সন্তান যদি ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়ে ফিরে আসতে চাই, সে আসতে পারে। কিন্তু মেসে গিয়ে এক ভাই আরেক ভাইকে, এক বোন আরেক বোনকে হুমকি-ধমকি দেবে, জোর করে ধরে নিয়ে যাবে, এটা হতে দেওয়া হবে না। এ বিশ্ববিদ্যালয় একদিনের জন্যও বন্ধ হবে না। শহর থেকে কলেজভিত্তিক কিছু দুষ্কৃতিকারী বিশ্ববিদ্যালয়কেনিয়ন্ত্রণ করবে, তাও হতে দেওয়া হবে না। এই যশোরের মাটিতে আমি মারা যাব, তবুও আমার সন্তানদের গায়ে হাত দিতে দেব না। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শহরে থাকতে যারা ভয় পাও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে চলে আসতে পারো, যদি হলে জায়গা না হয়, তাহলে আমি আমার বাংলো ছেড়ে দেব। তোমাদের এটুকুই বলতে চাই, আমি তোমাদের পাশে আছি।

পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইবুর রহমান মোল্যার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন যবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো: আব্দুল মজিদ, ডিনস কমিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস, শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট প্রকৌশলী মো: আমজাদ হোসেন, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো: মীর মোশাররফ হোসেন, পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান প্রমুখ। বিকেলে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/এপ্রিল ২৯,২০১৯)