নিরীক্ষকরাই ভুয়া আর্থিক হিসাব তৈরিতে সহায়তা করেন
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : নিরীক্ষকদের উপরে বিশ্বাস করে লাখ লাখ মানুষ পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছে। অথচ নিরীক্ষকরাই একটি কোম্পানির অতিরঞ্জিত ও ভুয়া আর্থিক হিসাব তৈরিতে সহায়তা করেন। তাদের দ্বারা বিভিন্ন কোম্পানি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর ফারস হোটেলে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান সি কিউ কে মুস্তাক আহমেদ। কর্মশালাটি যৌথভাবে আয়োজন করে ডিএসই ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ)। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এফআরসির নির্বাহি পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ।
কর্মশালায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, একটি কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসার জন্য আর্থিক হিসাব ফুলিয়ে ফাপিয়ে দেখায়। ওই সময় বছরের ব্যবধানে কয়েকগুণ বিক্রয় ও মুনাফা বেড়ে যায়। যে কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির ২-৩ বছরেই লোকসানে ও ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে যায়। অথচ আইপিওতে আসার সময় যদি নিরীক্ষক সঠিকভাবে নিরীক্ষা করত, তাহলে এমনটি হওয়ার সুযোগ তৈরি হতো না।
তিনি বলেন, যেকোন কোম্পানির আর্থিক হিসাবে সমস্যার ক্ষেত্রে সবাই নিরীক্ষককে দায়ী করে। স্টক এক্সচেঞ্জ বলে আর্থিক হিসাবতো নিরীক্ষক দ্ধারা নিরীক্ষা করা হয়েছে, এখানে আমাদের কি করার আছে, ইস্যু ম্যানেজার বলে নিরীক্ষার উপর ভিত্তি করে ফাইল দাখিল করা হয় এবং বিএসইসি বলে তাদের কাছে যে কাগজপত্র দাখিল করা হয়, তার ভিত্তিতেই আইপিও দেওয়া হয়। এ থেকে বোঝা যায় একটি কোম্পানির পুঁজিবাজারে আসার সময় সবার প্রথম দায় দায়িত্ব হচ্ছে নিরীক্ষকের। তবে অন্যারা দায় এড়াতে পারে না।
ভবিষ্যতে পুঁজিবাজারে আসবে এমন কোম্পানির প্রসপেক্টাসের নিরীক্ষামান যাছাই করার জন্য এফআরসি চেয়ারম্যানকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন ডিএসই পরিচালক। একইসঙ্গে আগামিতে কারসাজি করে আর্থিক হিসাব তৈরী করা কোম্পানি ও নিরীক্ষকদের জন্য কঠিনসময় আসছে বলে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
এফআরসি চেয়ারম্যান মুস্তাক আহমেদ বলেন, সবার সচেতনতার মাধ্যমে কারচুপি লাঘব হবে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সবাই আর্থিক হিসাব বুঝতে চায় না। অথচ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য এ জাতীয় মৌলিক জ্ঞানের দরকার আছে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে ঝুকি আছে। তবে সেই ঝুকি জ্ঞানের ভিত্তিতে নিতে হবে। তাহলে সবাই লাভবান হবে।
ডিএসইর চেয়ারম্যান ড. আবুল হাশেম বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যালেন্স শীট বুঝতে হবে। একটি ব্যালেন্স শীট কোম্পানির ইনডেক্স। আর যেসব নিরীক্ষকরা রুলস মানেন না, তাদেরকে এফআরসি সঠিক রাস্তায় আনতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে তথ্য সরবরাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন হয়। এফআরসির নজড়দারির মাধ্যমে সেই তথ্য সঠিক ও সুন্দরভাবে প্রকাশিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। একইসঙ্গে আর্থিক হিসাব প্রকাশে একটি ভালো সংস্কৃতি তৈরী হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
অভিজ্ঞতার আলোকে সিএমজেএফ’র সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির অতিরঞ্জিত আর্থিক হিসাব নিয়ে বিএসইসিকে অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখেছি। সব কোম্পানির আর্থিক হিসাব যাছাই করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তবে নিরীক্ষার মান উন্নয়নে যে এফআরসি হয়েছে, তার মাধ্যমে ওই সমস্যা কেটে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/ এপ্রিল ৩০, ২০১৯)