রমজান প্রতিদিন
রোজা : ইবাদত ও প্রশিক্ষণ
এ.কে. এম মহিউদ্দীন
২ রমজান আজ । গতকাল পহেলা রমজান পার করেছেন মুমিনগণ। দীর্ঘ বছর শেষে পুনরায় সিয়াম সাধনায় খানিকটা কষ্ট অনুভূত হয়েছে প্রত্যেকের। তবু খোশ মেজাজ সকলের। কেননা রহমত বরকতের মাসের আগমন ঘটেছে। মাসটি নিয়ে এসেছে মুমিনের সামনে এক অনাবিল সুযোগ । এ মাসের আগমনে সিয়াম সাধনার প্রস্তুতি গ্রহণ করে সকলে। আল্লাহ জাল্লা শানুহু অফুরন্ত সুযোগের দরোজা উন্মুক্ত করে দেন মুমিনের সামনে। প্রকৃত রোজা পালন করে মানুষের মত মানুষ হওয়া জরুরী। সেটিই স্পষ্ট হয় পবিত্র রমজানে। মাওলানা আলাউদ্দীন ইমামী রোজার তৎপর্য সম্পর্কে বয়ান দিতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন,
আল্লাহ মুসলমানদেরকে আল্লাহ্র বাহিনী তথা হিজবুল্লাহ ঘোষণা করে বলেন, উলায়িকা হিজবুল্লাহ। মানে মুসলমানগণ আল্লাহ্র বাহিনী। দুনিয়ার শাসকগণ যেমন তাদের বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়, আল্লাহ-ও মুসলমান নামক তাঁর বাহিনীর চারিত্রিক, নৈতিক ও মানবিকগুণের বিকাশের জন্য মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। যেন তারা লোভ মোহের, অনুরাগ বিরাগের ঊর্ধ্বে থেকে তাদের সকল রকমের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালন করতে পারে। তাদের দ্বারা যেন কোন ধর্ম বর্ণের মানুষ নিগৃহীত ও নির্যাতিত না হয়। সব অঞ্চলের সকল রকমের সব ধর্মের মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায়। আল্লাহ বলেন, তোমরাই সর্বোত্তম জাতি মানবতার উপকারের জন্যই তোমাদেরকে বাছাই করা হয়েছে (আল-কুরআন)।
মুসলমানগণ আন্তর্জাতিক খোদায়ী সৈনিক। এদের কাজ হচ্ছে মানব জাতিকে সকল অন্যায় পাপ ও মানবতাবিরোধী কাজ থেকে মুক্ত করা। মানুষকে মানুষের গোলামী প্রভুত্ব ও জুলুম অত্যাচার থেকে মুক্ত করে দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এর জন্য চাই লোভ-মোহমুক্ত মানব প্রেমিক একদল খোদাভীরু নিরপেক্ষ বাহিনী। তাই তাদের জন্য এই সিয়াম সাধনার প্রশিক্ষণ।
রোজা আল্লাহ্র দেয়া একটি মৌলিক ইবাদত ও প্রশিক্ষণ। প্রতিটি মুসলিম নর-নারীকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। সুবহে সাদেক থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত খানা পানীয় ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোজা। সাওম শব্দের অর্থ হল বিরত থাকা। সকল ধরনের অন্যায় পাপাচার ও অপকর্ম থেকে বিরত থাকতে হয় বলেই রোজা সওম অভিধায় আখ্যায়িত। সাওম মুসলমানদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশায় শুধু নাজায়েজ কাজ নয়, প্রয়োজনে যেখানে আশঙ্কা জায়েজ কাজও বর্জন করতে উদ্বুদ্ধ করে এটাই সাওমের মূল কথা। আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারেরা তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যেন তোমরা তাকওয়া তথা খোদাভীতিপূর্ণ সংযমী জীবনে অভ্যস্ত হতে পার”। [আল-কুরআন]।
আল্লাহ্র নবী (সা.) বলেন, “যে মিথ্যা ও পাপাচার ত্যাগ করতে পারল না সে খানা পানীয় ত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই”। [আল হাদীছ]। আল্লাহ্র নবী (সা.) আরও বলেন, “যে ঈমানদারী ও আত্মসমালোচনার সাথে রোজা রাখবে আল্লাহ তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দিবেন”।[আল হাদীস]।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ মে ০৮,২০১৯)