দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে আসন থেকে নির্বাচিত হয়েও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ গ্রহণ করেননি সেই বগুড়া-৬ আসনে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।

আগামী ২৪ জুন ওই আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে বুধবার জানান নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে তিনি জানান, ওই দিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ৫টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।

তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৩ মে পর্যন্ত বগুড়া-৬ আসনের ভোটের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন দাখিল করা যাবে। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৭ মে এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৩ জুন।

গত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ করা না করা নিয়ে নানা নাটকীয়তা তৈরি হয়। আর এ নাটকীয়তায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয় অন্য পাঁচ সাংসদ শপথ গ্রহণ এবং মির্জা ফখরুলের শপথ না নেওয়ার মধ্য দিয়ে।

দলটির পাঁচ এমপি 'দলীয় সিদ্ধান্তে' সংসদে যোগ দিলেও শেষ পর্যন্ত শপথ নেননি বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্ধারিত সময়ে শপথ না নেওয়ায় গত ৩০ এপ্রিল আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ওইদিন রাতে বিষয়টি জাতীয় সংসদকে অবহিত করেন। সংবিধানের উদ্বৃতি দিয়ে স্পিকার বলেন, সংসদের প্রথম বৈঠক থেকে ৯০ দিনের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নিতে অসমর্থ হয়েছেন। তাই তার আসনটি শূন্য হয়েছে। এ আসনে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন হবে।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বিএনপি। মাত্র ছয়টি আসনে বিজয়ী হন দলটির প্রার্থীরা। অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয় বিএনপি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন দুই জোট ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলও এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা জানায়। ফল প্রত্যাখ্যানের পর বিএনপির নির্বাচিত এমপিরা সংসদে যোগ দেবেন না বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়। যদিও শুরু থেকেই মির্জা ফখরুল বাদে বিএনপির বাকি এমপিরা শপথ নিয়ে সংসদে যেতে উদগ্রীব ছিলেন বলে শোনা যায়।

এমন প্রেক্ষাপটে গত ২৫ এপ্রিল দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির জাহিদুর রহমান। এর পরদিন তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। অন্য কেউ শপথ নিলে জাহিদের পরিণতি হবে বলেও হুঁশিয়ার করা হয়। এ সময় জাহিদুরকে গণদুশমন বলেও অভিহিত করেন বিএনপি নেতারা।

কিন্তু শপথ গ্রহণের শেষ দিনে হঠাৎ করে নাটকীয়ভাবে পাল্টে যায় পরিস্থিতি। শপথ নিতে সংসদে হাজির হন বিএনপির আরও চার এমপি। তারা শপথ নেওয়ার পর দাবি করেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সংসদে যোগ দিয়েছেন। যদিও শপথের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, সরকারের চাপে শপথ নিতে বাধ্য হয়েছেন দলের এমপিরা।

এর ঘণ্টাখানেক পর সবাইকে বিস্মিত করে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মির্জা ফখরুল। দলীয় সিদ্ধান্তেই বিএনপির এমপিরা শপথ নিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন তিনি। একই সঙ্গে ফখরুল জানান, অন্যরা শপথ নিলেও দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি সংসদে যাচ্ছেন না। এর কয়েকদিন পর এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব জানান, প্রথমে তাদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল তা ভুল ছিল।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি বিএনপির কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে তার মনোনয়ন বাতিল হয়।

খালেদা জিয়া অযোগ্য হওয়ায় বগুড়া-৬ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি দুই লাখ ছয় হাজার ৯০৩ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর পান ৪০ হাজার ২৬২ ভোট।

বগুড়া-৬ আসনে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। বগুড়া-৬ আসনের পাশাপাশি মির্জা ফখরুল নিজের এলাকা ঠাকুরগাঁও-১ আসনেও প্রার্থী হয়েছিলেন। ওই আসনে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের কাছে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ মে ০৮,২০১৯)