ছাতকে ২ গ্রুপের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ১
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের শিল্পনগরী ছাতকে নৌপথে টোল আদায়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সহোদর দুই আওয়ামী লীগ নেতার লালিত গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক লীগ সদস্য নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৪ মে) রাত পৌনে ১০টা থেকে পৌনে ১১ টা পর্যন্ত উপজেলা সদরের বাসস্টেশন রোডে ঘণ্টাব্যাপি এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় থানার ওসি, দুই এসআই, চার পুলিশ কনস্টেবলসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
আহত অন্তত ২০ জনকে রাতে ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়ে।
এছাড়া ওসিসহ আরও বেশ কয়েকজনকে রাতেই সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতের শ্রমিক লীগ সদস্যের নাম সাহাবুদ্দিন (৪৫)। তিনি পৌর শহরের আবদুস ছোবানের ছেলে বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছাতক পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী ও তার সহোদর জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহত সাহাবুদ্দিনকে মেয়র গ্রুপের লোকজন শ্রমিক লীগের সদস্য দাবি করলেও কেউ কেউ তাকে একজন ভ্যান চালক বলছেন।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ছাতকের সুরমা নদীতে বালু পাথর সিমেন্ট পরিবাহী কার্গো, জাহাজ বাল্ক হেড নৌকা থেকে চাঁদা সংগ্রহে সম্প্রতি ছাতক পৌরসভার মেয়র নিয়ন্ত্রিত ৯ কাউন্সিলর জোট বেধে 'শাহজালাল সমিতি' নামে একটি সংগঠন গঠন করেন।
এই সংগঠনের ব্যানারে পৌর শহর ঘেঁষে বয়ে চলা সুরমা নদীতে বালু, পাথর, সিমেন্ট পরিবাহী কার্গো, জাহাজ বাল্ক হেড নৌকা থেকে টোল আদায়ের নামে চাঁদা উত্তোলন করা হতো। সম্প্রতি পুলিশ চাঁদা উত্তোলনের সময় দুই জনকে আটক করে।
এনিয়ে ফেসবুকে লেখালেখির জের ধরে ছাতক পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা কালাম চৌধুরী ও তার কাউন্সিলদের সঙ্গে তারই সহোদর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শামীম চৌধুরীর গ্রুপের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এই বিরোধের জের ধরে মঙ্গলবার রাতে বন্ধুকযুদ্ধে জড়ায় দুই পক্ষ।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, শিল্পনগরী ছাতকের নদীপথে টোল আদায় নিয়ে সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলের নেতা কালাম চৌধুরী ও শামীম চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।
অতীতে এই দুই সহোদর সমঝোতার ভিত্তিতে নদী থেকে টোল আদায় করলেও গত সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের মাঝে বিরোধ দেখা দেয়। এর প্রভাব গিয়ে পড়ে নদী থেকে টোল আদায়ের ওপরও। সুরমা নদী দিয়ে বালু, পাথর, সিমেন্টসহ বিভিন্ন পণ্য বহনকারী নৌযান থেকে অতিরিক্ত হারে চাঁদা আদায় করা নিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ায়।
এদিকে সংঘর্ষের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে পৌর মেয়র শামীম চৌধুরীর ভাই জামাল চৌধুরী, চাচা এলাইস চৌধুরীসহ কমপক্ষে ৩০ জনকে আটক করেছে।
এ ব্যাপারে ছাতক থানার (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও আমিসহ পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হই।
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান রাত পৌনে তিনটার দিকে ঘটনাস্থল ছাতক অবস্থানকালে জানান, এ ঘটনার নেপথ্যে কিংবা প্রকাশ্যে যে বা যারাই জড়িত রয়েছে পুলিশ তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।
সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনায় বক্তব্য জানতে মঙ্গলবার ভোর রাত অবধি ছাতক পৌর মেয়র কালাম চৌধুরী ও তার ভাই শামীম চৌধুরীর ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন করলে দুই সহোদর সাড়া না দেয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/মে ১৫, ২০১৯)