গরমে শিশুদের হতে পারে হিট র্যাশ
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : হঠাৎ প্রচন্ড গরমে শিশুর শরীরে উঠতে পারে হিট র্যাশ। যা দেখতে লাল লাল র্যাশ বা ফুসকুড়ির মত। হিট র্যাশের কারণে বাচ্চাদের প্রচুর অস্বস্তি এবং চুলকানি হয়। আপনার ছোট্ট সোনামণিকে কিভাবে এই হিট র্যা শ থেকে দূরে রাখবেন? যদি হিট র্যাশ হয়েও যায় তাহলে সেটা থেকে কিভাবে নিস্তার পাবেন তার জন্যই আজকের এই লেখা-
বাচ্চাদের হিট র্যাশ হওয়ার কমন কিছু কারণ আছে। সেগুলো হলো-
একটি গরম এবং আর্দ্র জলবায়ু।
বাচ্চাদের এমন পোশাক যা থেকে তাপ সহজে বের হতে পারে না।
থিক বা পুরু লোশন এবং ক্রিমের ব্যবহার।
একাধিক কাপড় পরিধান করার কারণে বাচ্চার শরীর অভারহিট হয়ে যাওয়া।
একটু সাবধান হলেই বাচ্চাদের হিট র্যাশ বা ফুসকুড়ি হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়:-
১. একটি ঠান্ডা স্যাঁক বা আইস ব্যাগ
যা লাগবে-
একটি ঠাণ্ডা কমপ্রেস বা বরফের ব্যাগ
যা যা করতে হবে-
একটি বোলে ঠাণ্ডা পানি নিন অথবা একটি আইস ব্যাগ নিন। এবার ঠাণ্ডা পানিতে একটি পরিষ্কার কাপড় চুবিয়ে, সেটা থেকে পানি ঝরিয়ে নিন। এবারে এই ঠাণ্ডা কাপড়টি আপনার বেবির হিট র্যা শ আক্রান্ত স্থানে ১/২ মিনিটের জন্য রাখুন তারপর সরিয়ে নিন। এভাবে কয়েকবার করুন। আর যদি আইস ব্যাগ ইউজ করেন তাহলে আইস ব্যাগটি কয়েকবার আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করুন।
যতদিন ফুসকুড়ি ভালো না হচ্ছে ততদিন এভাবে ঠান্ডা স্যাঁক দিতে পারেন দিনে ২-৩ বার। এই ঠান্ডা কম্প্রেস বেবির র্যা শ আক্রান্ত স্থানকে শীতল করে এবং এফেক্টেড এরিয়াকে soothing করে। এভাবে কিছুদিন করলে ফুসকুড়ি থেকে দ্রুত নিস্তার পাওয়া যাবে।
২. অ্যাসেনশিয়াল অয়েল বা প্রয়োজনীয় তেল
যা প্রয়োজন হবে-
টি ট্রি অয়েল – ১/২ ড্রপ
নারকেল তেল ২/৩ চা চামচ
যা যা করতে হবে-
২-৩ চা চামচ নারকেল তেলের সাথে ১ বা ২ ড্রপ টি ট্রি অয়েল যোগ করুন এবং দুটি তেল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার এই তেলের মিশ্রণ আক্রান্ত স্থানে ভালো করে মালিশ করুন এবং ২০-৩০ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন তারপর ধুয়ে ফেলুন।
যতদিন ফুসকুড়ি ভালো না হচ্ছে ততদিন এই তেলের মিশ্রণ দিনে একবার করে ব্যবহার করতে পারেন। টি ট্রি অয়েলে আছে প্রদাহ বিরোধী আন্টিসেপ্টিক গুণ যা হিট র্যাশের জ্বালাপোড়া কমায় এবং ফুসকুড়ির অস্বস্তি থেকে মুক্তি দেয়।
সতর্কতা-
৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের শরীরে টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করবেন না, এতে ক্ষতি হতে পারে। এছাড়াও এই তেল অন্য কোন তেলের সাথে না মিশিয়ে ব্যবহার করবেন না।
৩. শসা
যা প্রয়োজন হবে-
স্লাইস করা তাজা শসা
আপনাকে যা করতে হবে-
প্রথমে একটি কচি শসা নিন এবং এটি স্লাইস করে কাটুন। এবারে কাটা শসাগুলো পেস্ট করে নিন। তারপর এই পেস্ট আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করুন। ৫- ১০ মিনিটের জন্য শসার পেস্ট লাগিয়ে রাখুন তারপর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আপনি প্রতিদিনই এই শসা পেস্ট দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন যতদিন হিট র্যা শ বা ফুসকুড়ি থাকে।
শসা তে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ট্যানিন নামক অ্যালার্জি এবং প্রদাহ বিরোধী উপাদান যা হিট র্যাশ থেকে খুব সহজে আরাম দেয় এবং চুলকানি কমায়।
৪. ওটমিল
যা প্রয়োজন হবে-
১ কাপ ওটস পাউডার
পানি
যা যা করতে হবে-
একটি বড় বোল বা বালতি পানি দিয়ে পূর্ণ করুন। এবার এতে এক কাপ পরিমাণ ওটস পাউডার ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর এই পানিতে আপনার বেবিকে গোসল করান প্রায় ১০- ১৫ মিনিট যাবৎ। তারপর বেবির শরীর নরম তোয়ালে দিয়ে আলতোভাবে মুছে দিন।
আপনি প্রতিদিনই একবার করে আপনার বেবিকে ওটস পাউডার দিয়ে গোসল করাতে পারেন যতদিন পর্যন্ত না বেবির হিট র্যা শ ভালো হচ্ছে।
ওটমিলে আছে প্রদাহ বিরোধী উপাদান যা চর্মরোগ সারাতে দারুণভাবে কাজ করে। এটি খুব দ্রুত চুলকানি ও র্যা শ কমাতে সাহায্য করে এবং শরীর ঠাণ্ডা রাখে।
৫. ফুলার আর্থ বা মুলতানি মাটি
যা প্রয়োজন হবে-
হাফ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি
প্রয়োজনমত পানি
যা যা করতে হবে-
হাফ টেবিল চামচ মুলতানি মাটির সাথে প্রয়োজন মত পানি মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। এবার আক্রান্ত স্থানে এই পেস্ট প্রয়োগ করে ১০ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন তারপর ধুয়ে ফেলুন।
এই পেস্ট আপনি দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।
বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মুলতানি মাটিতে থাকা নানা উপকারী উপাদান ফুসকুড়ি ও চুলকানি থেকে দ্রুত আরাম দেয়। এটি প্রাপ্তবয়স্করাও ব্যবহার করতে পারেন।
৬. অ্যালোভেরা
যা প্রয়োজন হবে-
ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল
যা যা করতে হবে-
প্রয়োজনমত কিছু ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল নিন। এবার এই জেল শিশুর আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করে ১০ – ১৫ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই জেল আপনি দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যালোভেরাতে রয়েছে প্রদাহ বিরোধী উপাদান যা দেহে ঠান্ডা অনুভূতি প্রদান করে এবং তাপ ফুসকুড়ি থেকে দ্রুত আরাম দেয়।
টিপস
উপরের রেমেডি-গুলো ছাড়াও আপনার বেবিকে হিট র্যা শ থেকে রক্ষা করতে চাইলে কিছু টিপস অনুসরণ করতে পারেন। যেমন-
১) আপনার ছোট্ট সোনামণিকে প্রখর সূর্যের তাপ থেকে দূরে রাখুন।
২) বাচ্চাকে গরমকালে নরম ও আরামদায়ক পোশাক পরিধান করান।
৩) গরমকালে প্রতিদিন বেবিকে নরমাল টেম্পারেচার-এর পানি দিয়ে গোসল করান।
৪) আপনার বেবির দেহের তাপমাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন। তাপ বেশি হয়ে গেলে গোসল করিয়ে দিন।
৫) পুরু লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
৬) বাচ্চার গোসলের জন্য হালকা সাবান ব্যবহার করুন।
৭) গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরম থেকে বাচ্চাকে দূরে রাখতে এয়ার কন্ডিশন রুমে রাখুন বা ঠাণ্ডা রুমে রাখুন।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/মে ১৫, ২০১৯)