সীতাকুণ্ডে ব্যাপক সংঘর্ষ
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ইয়াবা ব্যবসায়ী সন্দেহে এক যুবককে আটকের ঘটনায় এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় পুলিশের গুলিতে এক বৃদ্ধ নিহতের গুজবে সংঘর্ষ চরম আকার ধারণ করে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ও পুলিশের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি হামলার দাবি করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ঘাটঘরের পশ্চিমে জেলে পাড়ায় সোমবার (২০ মে) মধ্যরাতে এই ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। অপরদিকে পুলিশ দাবি করেছে এলাকাবাসীর হামলায় এক সাব-ইন্সপেক্টরসহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত আনুমানিক ১১টার দিকে বড় কুমিরা ঘাটঘর জেলেপাড়ায় রুবেল জলদাশ নামে এক যুবককে ঘুম থেকে তুলে আটক করেন সীতাকুণ্ড থানার এসআই জাহেদ হোসেন জসীম। এ সময় স্থানীয় যুবকরা তাকে গ্রেফতারের কারণ জানতে চেয়ে বাধা দিলে জসীম ও সঙ্গে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে মারধর করে। তখন বিলাম্বু দাসী (৬৫) নামে এক মহিলা নিহত হয়েছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ খবরে জেলেরা এসআই জসীমসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে।
খবর পেয়ে সীতাকুণ্ড থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এ হামলা কারা চালিয়েছে তা জানার জন্য জেলেদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আফজাল। কিন্তু উভয় পক্ষের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ শুরু হলে পুলিশের সঙ্গে জেলেদের আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় জেলেরা পুলিশের উপর ইট পাটকেল এবং পুলিশ জেলেদেরে উপর গুলি চালায়।
এলাকাবাসীর দাবি পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলিতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। অপরদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে পরিদর্শক (তদন্ত) আফজাল হোসেনসহ দুই পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ ও পাঁচজন আহতের কথা জানানো হয়েছে।
কুমিরা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোর্শেদুল আলম চৌধুরী জানান, রুবেল নামে এক যুবককে গ্রেফতারে বাধা দেয়ায় পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এ সময় এক বৃদ্ধা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন- এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের উপর চড়াও হয় জেলেরা। তাদের হামলায় অনেক পুলিশ আহত হয়েছে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালিয়েছে। পরে ঘটনাস্থল থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন ও সার্কেল এএসপি শম্পা রানীর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ স্থাপন করা যায়নি।
সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আফজাল হোসেন জানান, রুবেল নামের ওই যুবকের কাছে ৩০ হাজার পিস ইয়াবা ছিল। এই তথ্য নিশ্চিত হয়ে পুলিশ তাকে আটক করলে জেলেরা এসআই জসীম ও সঙ্গীয় ফোর্সের উপর হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নেয়। খবর পেয়ে তারা সেখানে গেলে জেলেরা পুলিশকে অবরুদ্ধ করে ব্যাপক হামলা চালায়। সে সময় রাস্তার লাইট নিভিয়ে দিয়ে হামলা চালানো হয়। ফলে অন্ধকারে পুলিশ সদস্যরা কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না। জেলেদের ইট পাটকেল, মদের বোতল, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এসআই আলীম ও সেকেন্ড অফিসার সুজায়েত আহত হন। এছাড়া তিনি নিজে, কনস্টেবল কামরুলসহ তিন জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরে চট্টগ্রাম ও থানা থেকে অতিরিক্ত ফোর্স গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
বৃদ্ধার মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসামি গ্রেফতার করতে যাবার আগেই ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছিল। এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করে জেলেরা ইয়াবা ব্যবসায়ী রুবেলকে ছিনিয়ে নেয়ায় এসব ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে ওই বৃদ্ধা কীভাবে মারা গেছেন তা কোনো পক্ষ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/মে ২১, ২০১৯)