অধ্যাপক শাহেদ আলীর সাতানব্বই তম জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি
হারুন হাফিজ
শাহেদ আলী বাংলা সাহিত্যের অনন্যসাধারণ একজন কথাশিল্পী। মাত্র ৭০টি ছোটগল্পগু ও একটি উপন্যাস রচনা করেই তিনি বাংলা কথাসাহিত্যের উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। ভাষা আন্দোলনে অবিস্মরণীয় অবদান, অধ্যাপনা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, নানারকম পত্রপত্রিকা সম্পাদনা, তমদ্দুন মজলিস গঠন, চিন্তা ও মনন চর্চা এবং অনুবাদকর্মের মধ্য দিয়ে তার মেধা ও ব্যক্তিত্ব বিচিত্রভাবে বিকশিত হয়েছে।
ভাষা সৈনিক, অধ্যাপক, অনুবাদক ও বাংলা কথা সাহিত্যের অন্যতম এই কথাকার শাহেদ আলীর ৯৭ তম জন্মদিন আজ। ১৯২২ সালের ২৬ মে সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুর থানার মাহমুদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন 'জিব্রাইলের ডানা' খ্যাত শাহেদ আলী । বগুড়া আজিজুল হক কলেজে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু করেন তার কর্ম জীবন। এরপর মিরপুর বাংলা কলেজ রংপুর কারমাইকেল কলেজ ও চট্রগ্রাম সিটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৪০ সালে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে সওগত পত্রিকায় তার রচিত প্রথম গল্প 'অশ্রু' প্রকাশিত হয়। শাহেদ আলী গল্প রচনার পাশাপাশি উপন্যাস, নাটক, শিশু সাহিত্য ও অনুবাদক হিসেবেও সফল ব্যক্তিত্ব।
তার বিখ্যাত গল্প গ্রন্থ 'জিব্রাইলের ডানা' বাংলা কথা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অধ্যাপক শাহেদ আলী রচিত জিব্রাইলের ডানা সহ অন্য গল্প গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : একই সমতলে, অতীত রাতের কাহিনী, অমর কাহিনী, নতুন জমিন্দার। উপন্যাস: হৃদয় নদী। নাটক: বিচার। শিশু সাহিত্য: রুহির প্রথম পাঠ, ছোটদের ইমাম আবু হানিফা, সোনার গাঁয়ের সোনার মানুষ। প্রবন্ধ তরুণ মুসলিমের ভূমিকা, একমাত্র, তরুণের সমস্যা, তাওহীদ, মুক্তির পথ, বুদ্ধির ফসল, আত্মার আশিস , ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা।
গবেষণা গ্রন্থের মধ্য রয়েছে বাংলা সাহিত্যে চট্টগ্রামের অবদান এবং অনুবাদ গ্রন্থের মধ্য মুহাম্মদ আসাদ রচিত মক্কার পথ, ককেশাসের মহানায়ক ইমাম শামিল, আধুনিক বিজ্ঞান ও আধুনিক মানুষ এবং ইতিবৃত্ত।
অন্যান্য গ্রন্থের মধ্য রয়েছে ফিলিস্তিনি রুশ ভূমিকা, সাম্রাজ্যবাদ ও রাশিয়া প্রভৃতি। তিনি চল্লিশ দশকে সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে দৈনিক বুনিয়াদ, মিল্লাতসহ একাধিক সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাহিত্য রচনার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার মধ্য তৎকালীন বাংলা ভাষা দাবী আদায়ের প্রধানতম সংগঠন তমুদ্দুন মজলিসের সাধারণ সম্পাদক পরে সভাপতি ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সচিব পরবর্তীতে একই প্রতিষ্ঠানে ১৯৬২-৮২ পর্যন্ত অনুবাদক ও সংকলন বিভাগের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে কথা সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য অধ্যাপক শাহেদ আলী বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তাকে একুশে পদক, ভাষা আন্দোলন পদক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার, তমুদ্দুন মজলিস মাতৃভাষা পদক, ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার ও জাসাস স্বর্ণ পদকে ভূষিত করা হয়। জিব্রাইলের ডানা'র জনক শাহেদ আলী ২০০১ সালের ৬ নভেম্বর মৃত্যু বরণ করেন।
তার জন্মদিনে আমরা তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
লেখক: মালয়েশিয়া প্রবাসী
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ মে ২৬,২০১৯)